রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার এ মাস। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় একজন মুমিন তাকওয়ার গুনে গুনাণ্বিত হতে পারে। হতে পারে রাসুল সা. এর শ্রেষ্ঠ একজন উম্মত। লাভ করতে পারে ইহকালীন ও পরকালীন প্রভূত কল্যাণ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাতলানো পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের নমুনায় রমজান পালনেই তা সম্ভব।
আওয়ার ইসলাম পাঠকের জন্য মাহে রমজান জুড়ে “মাসায়েলে রমজান” শিরোনামে প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েল পাঠকের সমীপে উপস্থাপন করা হবে। নিয়মিত মাসায়েল লিখছেন, শেখ জনূরুদ্দীন র. দারুল কুরআন মাদরাসা চৌধুরীপাড়ার ইফতা বিভাগের মুশরিফ, মুফতি সাদেকুর রহমান।।
৪. প্রক্টোস্কপি(proctoscopy) করলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে?পাইলস,ফিশার ,অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপি বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গিসারিন জাতীয় কোনো পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করে না।
চিকিৎসকদের মতে ওই পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সঙ্গে মিশে থাকে এবং নলের সঙ্গেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষেনা কিন্তু ওই বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে। শামী ৩/৩৬৯, ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা ৩৩০
৫. এনজিওগ্রাম করলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে?এনজিওগ্রাম করলে রোযা ভঙ্গ হয় না। কারণ এনজিওগ্রাম বলা হয় হার্ট ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়া দিয়ে কেটে একটি বিশেষ রগের ভিতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত ক্যাথেটার ঢুকিয়ে ভালভাবে পরীক্ষা করাকে। উল্লেখ্য- ক্যাথাটারে কোন মেডিসিন লাগানো থাকলেও যেহেতু তা রোযা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে গ্রহণযোগ্য খালিস্থানে ঢুকেনা,তাই তা দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে না। আল মাকালাতুল ফিকহিয়া পৃ: ১২৪-১২৫, ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা পৃষ্ঠা:৩২৬।
৬. ল্যাপারোস্কপি করলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে? রোজা অবস্থায় ল্যাপারোস্কপি করলে অর্থাৎ পেট ছিদ্র করে সিক জাতীয় একটি মেশিন ঢুকিয়ে পেটের ভেতরের গোস্ত ইত্যাদি পরীক্ষা করার জন্য বের করে আনলে এতে রোজা ভঙ্গ হবেনা। কারণ রোজা ভঙ্গ হওয়ার জন্য রোজা ভঙ্গকারি বস্তু ভেতরে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করে তার এক অংশবিশেষ হজম হওয়া পর্যন্ত ভেতরে অবস্থান করা জরুরি। এখানে তা পাওয়া যায়নি।
তবে সিকের মধ্যে কোন প্রকার মেডিসিন লাগানো থাকলে এবং তা গলা থেকে মলদ্বার পর্যন্ত নাড়িভুঁড়ির যেকোনো জায়গায় পৌঁছলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আলমাকালাতুল ফিকহিয়া,১২৪-১২৫, ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা ৩৩০।
৭. অক্সিজেন( oxizen) নিলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে? নাকে অক্সিজেন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ অক্সিজেন দেহবিশিষ্ট কোন বস্তু নয়। রোজা ভঙ্গ হতে হলে দেহবিশিষ্ট কোন বস্তু দেহের অভ্যন্তরে গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌঁছাতে হয়।
৮. রক্ত দিলে অথবা নিলে কিরোজা ভেঙ্গে যাবে ?রক্ত দিলে অথবা নিলে কোন অবস্থাতেই রোজা ভঙ্গ হবেনা।কারণ রক্ত দিলে তো কোনো বস্তু দেহের অভ্যন্তরে ঢুকেনি , বরং রক্তদাতার শরীর থেকে রক্ত বের হয়েছে ।।আর রক্ত নিলে যদিও দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কিন্তু তা রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালিস্থানে প্রবেশ করে না।তেমনি গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়েও প্রবেশ করেনা ।বিধায় রোজা ভঙ্গ হবে না। ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা-৩২৬।
৯. ইঞ্জেকশন বা টিকা নিলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে? ইঞ্জেকশন বা টিকা নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না। চাই তা গোস্তের ভেতর নেওয়া হোক বা রগের ভেতর ।কারণ ইনজেকশন বা টিকা রোজা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য রাস্তা বা ছিদ্র দিয়ে নেওয়া হয়না। ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা,৩২৭
১০. স্যালাইন নিলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে? স্যালাইন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।কারণ স্যালাইন নেওয়া হয় লগে।আর রগ রোজা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য ছিদ্র বা রাস্তা নয়। তবে রোজার দুর্বলতা দূর করার লক্ষ্যে স্যালাইন নেওয়া মাকরুহ।
রোজা সংশ্লিষ্ট আধুনিক মাসায়েল ১ম পর্ব
-এটি