।।নাসিম ইমরান।।
বর্তমান সময়ে অটোফেজি বিজ্ঞানের পরিচিত একটি পরিভাষা। জাপানি বিজ্ঞানী ইউশিনোরি ওশুমি ২০১৬ সালে অটোফেজি নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়! একদিকে ড্রাগ কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অটোফেজিকে ত্বরান্বিতকারী ওষুধ আবিষ্কারের জন্য গবেষণায় লেগে যায়। অন্যদিকে ফিটনেস ও ডায়েট বিশেষজ্ঞরা বলতে থাকেন- রোজা রেখে, ভারী ব্যায়াম করে ও শর্করাজাতীয় খাবার কম খেয়ে অটোফেজিকে ত্বরান্বিত করা যায়।
রোজা রাখলে কি অটোফেজি সক্রিয় হয়?
উত্তর জানার আগে জেনে নেয়া যাক অটোফেজি কি, অটোফেজি হলো একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ায় দেহের ক্ষয়িষ্ণু ও অপ্রয়োজনীয় কোষাণুগুলো ধ্বংস ও পরিচ্ছন্ন হয়। আসলে এটা হলো কোষের এক আবর্জনা পরিচ্ছন্নকরণ প্রক্রিয়া! কোষের কার্যক্ষমতাকে ঠিক রাখতে যে প্রক্রিয়ার কোনও বিকল্প নেই। দেহ যখন বিশেষ সংকটাবস্থায় থাকে, তখন এই অটোফেজিই দেহকে বাঁচিয়ে রাখে!
এবার জানা যাক, রোজায় কী হয়? দেহের জন্যে রোজাকে একটা বিশেষ অবস্থা বলা যেতে পারে, কারণ একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে বাইরে থেকে দেহে কোনও খাবার বা পানীয় আসে না। দেহের যেসব অবস্থায় অটোফেজি সক্রিয় হয়ে ওঠে, এটা তার একটা! অটোফেজির কারণেই সেসময় দেহ সচল থাকে। কারণ কোষের আবর্জনা, জীবাণু ইত্যাদিকে ভেঙে ফেলে রিসাইক্লিংয়ের মধ্য দিয়ে অটোফেজি প্রক্রিয়াই তখন দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে। অর্থাৎ বাইরের রসদের ওপর নির্ভর না করে দেহ তখন নিজেই নিজের রসদ দিয়ে নিজেকে চালায়।
অটোফেজির ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন প্রদাহ যেমন ব্যথা, লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া এবং সংক্রমণ কমে যায়। অটোফেজির কারণে ত্বক বার্ধক্যের প্রভাবমুক্ত হয় এবং ত্বককে দেখায় স্বাস্থ্যজ্জ্বল। সক্রিয় অটোফেজি ব্যবস্থা মস্তিষ্ককে ক্ষুরধার হতেও সাহায্য করে। প্যাথোজেন, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জীবাণুকে ধ্বংস করে দেহকে সুস্থ রাখে অটোফেজি ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বহু গুণ কমে যায়।
রোজা রাখার ফলস্বরূপ সৃষ্ট অটোফেজির উপকারীতা নিয়ে গবেষণা করে ২০১৬ সালে জাপানি বিজ্ঞানী ইউশিনোরি ওশুমি চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। অথচ কিছু কলা ও বেগুন বিজ্ঞানী এই রোজাকে নির্বোধের কাজ আখ্যা দিয়ে নিজেকে বুদ্ধিমান দাবী করে। আফসোস তাদের বুদ্ধির উপর, হায় যদি তারা বুঝতো!
লেখক: শিক্ষার্থী, মাহাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসাতিল ইসলামিয়া ঢাকা।
-কেএল