আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: রমজানে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সবার মধ্যেই কম বেশি দেখা দেয়। এর কারণ হলো দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পর ইফতারে অপুষ্টিকর খাবার কিংবা অতিরিক্ত খাওয়া। রোজা রাখার কারণে যেহেতু এ সময় সারাদিন খাওয়া হয় না, তাই ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত অনেকেই এটা সেটা ভুল খাবার খেয়ে থাকেন। আর ভুল খাবার নির্বাচনের কারণেই গ্যাস্ট্রিক বা বদহজমের সমস্যা দেখা দেয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
গাস্ট্রিক কেন হয়?
মানবদেহের পাকস্থলীতে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই লিটার হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরিত হয়। এর কাজ হচ্ছে পাকস্থলীতে খাবার পরিপাক করতে সহায়তা করা। পাকস্থলীতে যখন এই অ্যাসিডের ক্ষরণ বেড়ে যায়; তখন পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আবরণ তথা মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ তৈরি হয়। যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় গ্যাসট্রাইটিস বলে।
অতিরিক্ত খাবার, ভাজা-পোড়া খাওয়া কিংবা দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে সহজেই গ্যাস্টিক ও বদহজমের সমস্যায় ভুগতে হয়। এক্ষেত্রে পেটে ব্যথা, বুক জ্বালা-পোড়া, দম বন্ধ হয়ে আসা, ঢেঁকুর ওঠা, বমি বমি ভাব, পেট ফেঁপে থাকা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
রোজার সময় এসব সমস্যায় প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ভুগে থাকেন। কারণ ইফতারে যেসব ভাজা-পোড়া, ছোলা, মুড়িসহ ইত্যাদি খাবার থাকে, সেগুলো মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। চিকিৎসকরা সবসময়ই ভাজা-পোড়া ও তৈলাক্ত খাবারকে খাদ্যতালিকায় না রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক গ্যাস্ট্রিক এড়াতে পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী ইফতার ও সেহরিতে কী খাবেন আর কী খাবেন না-
এক. খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। খেজুরের মধ্যে শর্করা ছাড়াও প্রায় সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। ৪টি মাঝারি সাইজের (৩৫ গ্রাম) খেজুরের মধ্যে প্রায় ১০০ ক্যালোরি থাকে।
ইফতারিতে ৪-৫টি খেজুর খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই রক্তে শর্করার মাত্রা মেপে তবেই খেজুর খাবেন। না হলে বেড়ে যেতে পারে ডায়াবেটিস।
দুই. ইফতারে একটি কলা রাখুন। এতে থাকে প্রায় ১০৫ ক্যালোরি। অন্যান্য ফল যেমন- তরমুজ, আপেল, কমলা এসব পানিশূন্যতা রোধে উপকারী।
তিন. ছোলা ও বুট খাওয়া যেতে পারে। ৫০ গ্রাম ছোলা-বুটে প্রায় ১৮০ ক্যালোরি রয়েছে। ছোলা-বুট অল্প পরিমাণে খাবেন। ২০-২৫ গ্রাম এর চেয়ে বেশি না। কারণ এটা পরিপাক হতে দীর্ঘ সময় লাগে। তবে বেশি তেল বা মসলা দিয়ে ভাজা ছোলা খাবেন না।
চার. একটি ডিম খেতে পারে, একটি ডিম থেকে পাওয়া যায় ৮০ ক্যালোরি।
পাঁচ. ডাবের পানি, ইসুবগুলের ভুসি, লেবুর শরবত ইত্যাদি পান করুন। এগুলোও রোধ করবে পানিশূন্যতা।
ইফতারে যা খাবেন না
এক. ইফতারে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কিংবা ডুবো তেলে ভাজা খাবার যেমন- পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি ইত্যাদি পরিহার করুন। এই খাবারগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করে। আবার একসঙ্গে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলবেন না।
দুই. টকজাতীয় ফলে যদিও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, তারপরেও টকজাতীয় ফলে সাইট্রিক অ্যাসিডও থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল বেশি খেলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
তিন. টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড থাকে, যা ইফতারে খেলে পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া তৈরি করে। তাই টমেটো বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।
চার. ঝাল খাবার পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই কাঁচা মরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে।
পাঁচ. গরম খাবার যেমন চা, কফি ইত্যাদি পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই রোজার সময় চা, কফি ইত্যাদি পরিহার করুন।
সেহরিতে যা খাবেন, যা খাবেন না
নরম ভাত কিংবা স্যুপ খেলে সবচেয়ে ভালো হয়। এর সঙ্গে ৪-৫ রকমের শাক-সবজি অবশ্যই রাখবেন ১৫০ গ্রামের মতো। লাউ, চালকুমড়াসহ পেট ঠান্ডা রাখে এমন শাকসবজি বেশি খেতে হবে রমজানে।
সেহরিতে ২-৩ পিস মুরগির মাংস কিংবা এক পিস মাছ রাখতে পারেন। খাওয়ার পর এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন। এতেও শরীর সারাদিন হাইড্রেট থাকবে।
তবে সেহরিতে কখনো পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুরি, খাসি কিংবা গরুর মাংস খাবেন না। আবার ভাজাপোড়াও পরিহার করুন। এসব খাবার হজমে অনেক পানির প্রয়োজন হয়। যেহেতু সারাদিন রোজা রাখার কারণে পানি খাওয়া হয় না, তাই এসব খাবার খেলে শরীর পানিশূন্যও হয়ে পড়তে পারে।
ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। না হলে শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রমজানে খুব সহজেই সুস্থ থাকা সম্ভব।
-এএ