মাহমুদুল হাসান।।
বিশেষ প্রতিনিধি>
তারাবিতে ধীরস্থির তেলাওয়াতে প্রশান্তি পাই: হাফেজ সাইফুল ইসলাম
বিশ্বজয়ী হাফেজ সাইফুল ইসলাম। বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের নয়নপুর পৌরসভার বাসিন্দা ডা. ওয়ালিউর রহমান ও জাহেরা বেগমের সন্তান।
স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তিনি মাদরাসায় ভর্তি হন। দেশের খ্যাতিমান হাফেজে কোরআন মাওলানা আবদুল হকের কাছে হিফজুল কোরআন সম্পন্ন করেছেন ২০০২ সালে।
২০১০ সালে দাখিল ও ২০১২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে আলিম (এইচএসসি) পাস করেন। স্কলারশিপ নিয়ে কাতার ইউনিভার্সিটিতে গমন করেন। ২০১৭ সালে সেখান থেকে ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স সম্পন্ন করেন।
তার সাফল্যের গল্পটা শুরু ২০০৪ সালে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তিনি অনেক পুরস্কার জিতেছেন।
২০০৪ সালে দুবাই আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান , ২০১০ সালে জর্দানে আন্তর্জাতিক তাফসিরুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান, ২০০৪ সালে সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান, ২০০৯ সালে ইরান আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান, ২০১৫ সালে আবারও জর্দানে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে বিদেশে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন।
২০০৪ সালে দুবাই হলি কোরআন অ্যাওয়ার্ড জয়ের পর থেকে রাজপরিবারের সদস্য আবদুল আজিজ বিন খালেদ আবদুল্লাহ আল-থানি তাকে নিয়মিত কাতারে আমন্ত্রণ করতেন। প্রতি বছর দুইবার তাকে কাতার নিয়ে যাওয়া হতো। আসা-যাওয়ার টিকিট ও আনুষঙ্গিক খরচ বহন করা হত রাজপরিবারের সদস্য আবদুল আজিজ বিন খালেদ আবদুল্লাহ আল-থানির পক্ষ থেকে।
প্রথমবার যেতেন পরীক্ষার ছুটিতে মাত্র এক সপ্তাহের আনন্দভ্রমণে। দ্বিতীয়বার যেতেন রমজান মাসে। সেখানে রাজপরিবারের সদস্যদের তারাবির নামাজে তিনি ইমামতি করতেন।
এরপর থেকেই তিনি অবস্থান করছেন কাতারে। কাতার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ মসজিদে খতীবের দায়িত্বপালনসহ রমজানেও তারাবিহ পড়ান। বর্তমানেও তিনি কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি মসজিদে ইমাম হিসেবে রয়েছেন।
তিনি তার দীর্ঘ দিনের তারাবির অনুভূতির কথা জানিয়েছেন আওয়ার ইসলামকে।
‘তারাবির নামাজ মুমিনের অন্তরে অন্যরকম এক প্রশান্তি এনে দেয়। দেশে যখন তারাবির নামাজ পড়াতাম তখন অনুভূতি ছিল এক রকম। কাতারে নামাজ পড়িয়ে আরেক রকম অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা হচ্ছে’।
‘কাতারের অনেক মানুষ তিলাওয়াতের অর্থ বুঝতে পারেন। যার ফলে যখন কোন আজাবের আয়াত আসে তখন তারাও নামাজে অঝোরে চোখের পানি ফেলেন’।
‘সব থেকে ভালো লাগার বিষয় হলো এদেশে তারাবির নামাজে কোন তাড়াহুড়ো নেই। সবাই ধীরে স্বস্তিতে তারাবিকে সুন্দরভাবে আদায় করেন। আমরাও তিলাওয়াত করে প্রশান্তি পাই’।
তারাবির তেলায়াত অনেক বেশি আনন্দের: হাফেজ আইনুল আরেফিন
বোরারচড় নয়াপাড়া কোতয়ালী থানা ময়মনসিংহের রফিকুল ইসলামের ছেলে। জন্মেছেন ১৯৮৮ সালে।
কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেছেন ২০০২ সালে। বর্তমানে তিনি কাতার ধর্মমন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি এক মসজিদের ইমাম।
হাফেজ আইনুল আরেফিন বিশ্বব্যাপী মোটা ৫ টি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। ২০১১ সালে সৌদি আরবে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন।
এ ছাড়াও দুবাই এবং ইরানে সারা বিশ্বে দ্বিতীয়স্থান অর্জন করেন। তিনি তারাবির ইমামতি করছেন ২০ বছর ধরে। তারাবির অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমি কাতারে এসছি৷ এর আগে বাংলাদেশে তারাবির নামাজ পড়িয়েছি’।
‘রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস৷ এই মাসে ইবাদতে অন্য রকম এক স্বাদ পাওয়া যায়। রোজা এবং তারাবি রমজানের মূল আকর্ষণ। তারাবির নামাজ যারা নিয়মিত পড়েন,তারাবির নামাজে কোরান খতম করেন তারাই এর আসল স্বাদ অনুভব করতে পারেন’।
‘তারাবি ছাড়াও রমজানে কিয়ামুল লাইল করি। আমাদের সঙ্গে অনেকেই পড়েন। আমরা কোরআন খতম করি।
আলহামদুলিল্লাহ তারাবির নামাজ যতটা কষ্টের তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দের। অনেক বেশি সওয়াবের’।
রমজানে সারাদিন কোরআন নিয়ে সময় কাটতো: হাফেজ আব্দুল্লাহ ইসমাইল
হাফেজ আব্দুল্লাহ ইসমাইল। কিশোরগঞ্জের রশিদাবাদের দামোয়ার বাড়িতে ১৯৯২ সালে তার জন্ম। প্রাথমিক পড়াশোনা কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক জামিয়া ইমদাদিয়াতে।
২০০৫ সালে হিফজ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি একটি মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তাহফিজ বিভাগের উস্তাদ হিসেবে দায়িত্বরত।
২০১৫ সালে প্রায় ৭ হাজার হাফেজের মধ্যে ইন্টার্ভিউ দিয়ে কাতার সরকারের অধীনে কাতারের সরকারী মসজিদে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর থেকে কাতারের মাটিতেই বাংলাদেশি এই হাফেজ তারাবি পড়িয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করে আসছেন। তার দীর্ঘ ১৭ বছরের তারাবির অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতির কথা জানিয়েছেন আওয়ার ইসলামকে।
‘২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তারাবিহ পড়িয়েছি। বাংলাদেশে তারাবির সময় আসলে মনে অন্যরকম প্রফুল্লতা কাজ করত। কারণ রমজানে রোজা রেখে খতমে তারাবির প্রস্তুতির জন্য সারাদিন কোরআন নিয়ে সময় কাটতো। রোজা রেখে কোরআন তেলাওয়াতে অনেক তারাতারি ইয়াদ হয়ে যেতো’।
‘দায়িত্বের সুবাদে ২০১৫ সাল থেকে কাতারে তারাবির ইমামতি করছি। কাতারে রমজান আসলে নিজের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে’।
‘এখানকার মসজিদ অনেক সুন্দর। মনোমুগ্ধকর। তারাবিতে ভিন্নরকম এক অনুভূতি জাগে। সাদা পোষাকে সুগন্ধি মেখে রবের সামনে দাড়াই। নামাজে তাঁর কিতাব পড়ি। অসাধারণ এক অনুভুতি। এদেশের মানুষের আবেগ-অনুভূতিও ভিন্নরকম। তারা রমজানে অনেক বেশি ইবাদতে কাটায়’।
এদেশে আমরা বাংলাদেশি ইমামরা নতুন নতুন সুরে-লাহানে নামাজের ইমামতি করি। আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশের ইমামদের তেলাওয়াত কাতারিরা অনেক পছন্দ করেন।
এনটি