সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


সাহরির সুন্নাত ও আমাদের অবহেলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মোজ্জাম্মেল হক রায়পুরী: সাহরি খাওয়া সুন্নত, পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়। এক ঢোক পানি পান করলেও সাহরীর সুন্নত আদায় হবে। তবে কেউ যদি সাহরি না খেয়ে রোজা রাখার নিয়ত করে তবুও তার রোজা সহীহ হবে; কিন্তু সে সাহরির বরকত থেকে বঞ্চিত হবে। (বাদায়েউস্ সানাইয়ে ২/২৬৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯৫)

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: তোমরা সাহরি খাও, কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে। (বুখারী শরীফ, হাদীস: ১৯২৩, মুসলিম শরীফ, হাদীস: ১০৯৫)

যারা সাহরি খায় তাদের উপর আল্লাহ্ তায়ালা রহমত বর্ষণ করেন। হাদীসে শরীফে এসেছে: সাহরি খাওয়াতে বরকত রয়েছে, তোমরা তা পরিহার করো না; এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরি গ্রহণ করো। কেননা যারা সাহরি খায়, আল্লাহ তায়ালা তাঁদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য রহমতের দুআ করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস:১১০৮৬ ও ১১৩৯৬)

সাহরি খাওয়া মুসলমানদের অনন্য বৈশিষ্ট্য:
রোজার বিধান শুধু এই উম্মতের জন্য নয়, পূর্ববর্তী উম্মতের জন্যও রোজার বিধান ছিল। তবে আমাদের রোজা ও আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খৃস্টানদের রোজার মাঝে সাহরি একটি বিশেষ পার্থক্য।

ইহুদি-খ্রিস্টানদের জন্য রাতে ঘুমানোর পর সাহরি খাওয়া হারাম ছিল, তেমনিভাবে ইসলামের শুরুতে মুসলমানদের জন্যও এই একই নিয়ম ছিল। কিন্তু পরে তা মুসলমানদের জন্য জায়েয হয়ে যায়। তাই সাহরি খাওয়ার দ্বারা মুসলমানদের এই অনন্য বৈশিষ্ট্য, আল্লাহ প্রদত্ত মহান নেয়ামতের শুকরিয়াও আদায় হচ্ছে এবং আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খৃস্টানদের বিরোধিতা করাও হচ্ছে।

হাদিস শরিফে এসেছে- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: আমাদের রোজা ও আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খৃস্টানদের রোজার মাঝে পার্থক্য হল সাহরি খাওয়া। (মুসলিম শরীফ, হাদীস: ১০৯৬)
এই সকল হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, সাহরি খাওয়া সুন্নত ও বরকতময়। আর ইচ্ছাকৃতভাবে তারাবিহের পর খাবার খেয়ে শুয়ে পড়া এবং সেহরি ত্যাগ করা শুধু রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাত পরিপন্থী নয় বরং ইহুদি-খ্রিস্টানদের অনুসরণ-অনুকরণও বটে। তাই সুন্নত হচ্ছে পরিমিত সাহরি খাওয়া।

পরিমিত সেহরি খাওয়া:
ইসলাম ধর্ম মধ্যপন্থা পছন্দ করে, সাহরি বাদ দেওয়া ইসলাম পছন্দ করে না, সাহরিতে রোজা রাখার উদ্দেশ্য তাকওয়ার কথা ভুলে যাওয়াও ভালো কাজ নয়। একদিকে সাহরি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত। একেবারে ফজরের আজান পর্যন্ত সাহরিতে ব্যস্ত থাকে। রমজানের শেষ রাতের মতো মূল্যবান সময়েও তাহাজ্জুদ পড়া ও আল্লাহর দরবারে দোয়া-মোনাজাতের প্রতি লক্ষ করে না।

অন্যদিকে কিছু মানুষ আবার ছাড়াছাড়িতে ব্যস্ত। শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠার ভয়ে তারাবিহের পরই খানা খেয়ে রোজার নিয়তে শুয়ে পড়ে। ইসলামে বাড়াবাড়িও নেই, ছাড়াছাড়িও নেই। ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ ধর্ম। যেমনভাবে শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠার ভয়ে তারাবীহের পর খানা খেয়ে শুয়ে পড়া ইসলাম পছন্দ করে না। তদ্রুপভাবে শেষ রাতের মতো মূল্যবান সময়কে শুধু সাহরিতে ব্যয় করা ইসলাম পছন্দ করেন না। পরিমিত সাহরী খেয়ে তাহাজ্জুদ ও দোয়া-মোনাজাতে ব্যস্ত হওয়াই একান্ত কাম্য।

এছাড়াও একটি সাধারণ ভুল হল যে, কেউ সাহরি মিস করলে, সেদিন রোজাই ছেড়ে দেয়।
সাহরি খাওয়া শুধু সুন্নত, রোজার শর্ত নয়। সাহরি মিস করা রোজা কাযা করার জন্য শরয়ী অজুহাতও নয়। তাই সাহরি মিস করার কারণে রোজা ভঙ্গ করা আদৌও উচিত নয়, বরং সাহরি না খেয়েও রোজা রাখা ফরজ এবং জরুরি।

আমাদের সমাজের আরো একটি সাধারণ ভুল হল যে, প্রায়শই সাহরি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, ফজরের নামাজের প্রতি লক্ষ নেই। অনেকেরই ফজরের নামাজ ছুটে যায়, নামাজের জামাত তো ছুটেই। এই জন্য সাহরি খেয়ে আদৌও শুয়ে পড়বে না, বরং ফজরের নামাজ পড়ে বিছানায় যাবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মাহে রমজানের যথাযথ মূল্যায়ন করার তাওফিক দান করুন এবং ইসলামের মধ্যপন্থার চেতনা অনুযায়ী আমাদের আমলগুলোকে উন্নত করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক- আলেম, প্রাবন্ধিক ও সিনিয়র শিক্ষক: মদিনাতুল উলূম বসুন্ধরা, ঢাকা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ