সাইফুল্লাহ সুবহান।।
ইফতার রোজাদারের পার্থিব পুরষ্কার। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের মুহূর্তটি রোজাদারের জন্য বয়ে আনে এক অপার্থিব আনন্দের বার্তা। নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীও এ কথাই বলে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "রোজাদারের দুটি আনন্দ। একটি ইফতারের সময় আর অপরটি তার প্রভুর সাক্ষাতে।" (বুখারী ও মুসলিম)
এই আনন্দের মুহূর্তে কিছু করণীয় কাজের কথা বলেছেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যেগুলো আমাদের আখিরাতের কাঙ্ক্ষিত সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সহায়ক হবে। আসুন জেনে নেই সে কাজগুলোর বিবরণ।
১. ইফতারের পূর্বে দোয়া করা:
ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত তথা দিনের শেষ বেলা এমনিতেই দোয়া কবুলের সময়। আর রোজাদারের জন্য এ সময়ের রয়েছে আরো বিশেষ গুরুত্ব।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "রোজাদারের জন্য ইফতারের সময় একটি মকবুল দোয়া চেয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।" (ইবনে মাজাহ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ইফতারের পূর্বে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দোয়া করতেন। (ইবনে মাজাহ) তাই ইফতারের পূর্বে দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়া দরকার।
২. ইফতার জলদি জলদি করা:
জলদি জলদি ইফতার করা মানে হলো সময় হয়ে গেলে ইফতারে বিলম্ব না করা। কেননা সময় হওয়ার পরও বিলম্বে ইফতার করা ইহুদি নাসারাদের স্বভাব। তারা এরূপ বিলম্ব করে থাকে। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)
হযরত সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "ততদিন মানুষ কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা শিঘ্র শিঘ্র ইফতার করবে"। (বুখারী ও মুসলিম)
তাই সময় হয়ে গেলে যত দ্রূত সম্ভব ইফতার করে নেওয়া উত্তম।
৩.ইফতার গ্রহণের দোয়া পড়া:
হযরত মুয়ায ইবনে যুহরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার গ্রহণের সময়—
"اللهم لك صمت و على رزقك أفطرت"
এই দোয়া পড়তেন। (উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযকিকা আফতারতু)।
অর্থ:-"হে আল্লাহ! আপনার (সন্তুষ্টির) জন্য রোজা রেখেছি, আপনার দেয়া রিযিক দিয়ে ইফতার করেছি।"
ইফতার গ্রহণের সময় এই দোয়া পড়া সুন্নত।
৪. খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করা:
খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে শুরু করা।
হযরত সালমান ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের কেউ ইফতার করলে, যেন খেজুর দিয়ে শুরু করে। কেননা খেজুর বরকতপূর্ণ। আর খেজুর না পেলে যেন পানি দিয়ে শুরু করে। কেননা পানি পবিত্রতার উপকরণ।" (আহমদ ও তিরমিযী)
৫. রোজাদারকে ইফতার করানো:
রোজাদারকে ইফতার করানো অনেক বড় সওয়াবের কাজ। এর প্রতিদানও অনেক বিশাল।
হযরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, " যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, এই ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের কারণ হবে, জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় হবে এবং ঐ রোজাদারের সওয়াব একটুও না কমিয়ে সমপরিমাণ সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হবে।" (শুআবুল ঈমান লিল বায়হাকি)
এই প্রতিদান পাওয়ার জন্য পেট পুরে খাওয়ানো আবশ্যক নয়। সাহাবায়ে কেরামের অক্ষমতার ওজরের জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ তায়ালা তো এই সওয়াব তাকে দিবেন, যে কোন রোজাদারকে এক ঢোক দুধ বা একটি খেজুর বা এক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করাবে।"(প্রাগুক্ত)
আর যে লোক কোন রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে খাওয়াবে তার প্রতিদান সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজ তথা হাউজে কাওসার থেকে পান করাবেন। সে আর পিপাসার্ত হবে না। এমন কি জান্নাতে প্রবেশ করবে।"(প্রাগুক্ত)
মহান আল্লাহ তায়ালা একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় আমাদেরকে এ আমলগুলো করার তাওফীক দান করুন।
এনটি