গত পহেলা রমজান ১৪৪৩হি. (২ এপ্রিল) শনিবার দিবাগত রাত সালাতুল ইশা আদায়ের পর জামিআতুস সুফফাহর সদর, বিশিষ্ট হাদীস ও ফিকাহবিদ, মুফতী আবদুল্লাহ নাজীব সালাতুত তারাবীহতে তিলাওয়াতের প্রতি মনোযোগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। গুরুত্ব বিবেচনায় পাঠকের জন্য আলোচনার নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো। অনুলিখন করেছেন মুসতাকীম বিল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসংখ্য শুকরিয়া, তিনি আমাদের রহমত ও বরকতের মাস রমজান পর্যন্ত পৌঁছার তাওফিক দিয়েছেন। এবং এ মাসের বরকত লাভের সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছেন।
এই পবিত্র মাসের অনেক বৈশিষ্ট্য ও মাহাত্ম্য রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো, নুজুলে কুরআন। এ মাসে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন। এ মাসের সাথে কুরআনের কী গভীর সম্পর্ক ও বন্ধন তা এ থেকেও বুঝতে পারি যে, এ মাসকে বলা হয় কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা আমাদের কর্তব্য।
স্বয়ং নবীজী সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালামের সাথে তিলাওয়াতের দাওর করতেন। একে অপরকে তিলাওয়াত শুনাতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে-
وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ القُرْآنَ
আর হযরত জিবরাঈল আ. রমজানের প্রতি রাতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তাঁরা একে অপরকে কুরআন তিলাওয়াত শোনাতেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং-৬)
আমাদের উপর আল্লাহ তায়ালার আরেকটি নিয়ামত হলো, তিনি রমজান মাসে সালাতুত তারাবিহর মাধ্যমে কুরআন তিলাওয়াত ও খতম করার উত্তম সুযোগ করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে আমাদের জন্য কুরআন তেলাওয়াত ও খতম করা সহজ হয়ে গেছে। তাই এখন আমাদের কাজ হলো, এ উত্তম সুযোগকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগানো। কোনোরূপ গাফিলতি ও উদাসীনতা প্রদর্শন না করা।
কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, আমরা এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারি না। তারাবিতে ইমাম তেলাওয়াত করেন। আর আমাদের মনোযোগ থাকে অন্য কোথাও। কুফরানে নিয়ামত বা নিয়ামত কৃতঘ্নতার একটি দিক হলো, কোনো কাজ বা আমলের সুযোগ লাভের পরও সে সুযোগকে কাজে না লাগানো। অবহেলা প্রদর্শন করা।
এ নেয়ামতকে কীভাবে মূল্যায়ন করতে পারি?
জানা কথা যে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান কাজ সূচারুরূপে আঞ্জাম দিতে হলে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে কাজটির গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য ফুটে উঠে। আমরা জানি, যে কাজের প্রস্তুতি যত বড় ও মজবুত, সে কাজের গুরুত্ব ও আজমত তার কাছে তত বড় হয়ে থাকে। খতমে তারাবিএকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। তার আজমত ও গুরুত্ব তখনই ফুটে উঠবে যখন তার জন্য আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি থাকবে।
তারাবির পূর্বপ্রস্তুতি হলো, দৈনিক কুরআনের যে অংশ পড়া হবে তা নিয়ে সারাদিন ভাবা, চিন্তা করা। আজকে কুরআনের অমুক পারা তিলাওয়াত করা হবে। সেখানে আমার জন্য কী কী শিক্ষা রয়েছে। কী ইবরত ও নসিহত আমাকে প্রদান করা হয়েছে সেখানে? আমাকে কীভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। কী আদেশ করা হয়েছে। কোন জিনিস থেকে পরহেজ করতে বলা হয়েছে- ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে ফিকির করা।
মোটকথা, তাদাব্বুরে কুরআন ও তাফাক্কুরে কুরআন হলো পূর্বপ্রস্তুতি। এটি করতে পারলে আমরা তিলাওয়াতে কুরআনের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে পারব। তিলাওয়াতের সাথে সাথে আমাদের দেহমনে ছুঁয়ে যাবে অনন্য সুখ। আমি ডুবে থাকব হালাওয়াতুল কুরআনে। বিচরণ করতে থাকব প্রতিটি আয়াতের সাথে সাথে। আর এ যে বান্দার পরম পাওয়া। তখন বিন্দুমাত্র গাফিলতি আমাকে স্পর্শও করতে পারবে না।
সূত্র: সুফফা রেইজ।
এনটি