রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির

মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের কাছে নিবেদন (পর্ব-৬)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন।।

বুদ্ধিজীবীদের কাছে আর একটি কথা যা নিবেদন করতে চাই তা হল- আপনারা কিছু অন্যায় কাজের ক্ষতি নিয়ে একটু ভাল করে ভেবে দেখুন।

কিছু অন্যায় কাজের ক্ষতির বিবরণ:

পূর্বের সংখ্যায় ওয়াদা করেছিলাম সিনেমা, নাচ-গান, নারীদের অবাধ বিচরণ, মদ গাঁজা সেবন, ধর্ম ও আল্লাহ রসূলকে নিয়ে বল্গাহীন কথাবার্তা বলা ইত্যাদি কেন অন্যায়, উলামায়ে কেরামের কাছে সেগুলো অন্যায় হওয়ার পক্ষে কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক কি কি বক্তব্য রয়েছে তা বর্ণনা করব, যাতে বুদ্ধিজীবীদের পক্ষে বিবেক দিয়ে বিবেচনা করতে সুবিধে হয়।

বস্তুত উপরোক্ত জিনিসগুলো অন্যায় হওয়ার ব্যাপারে কুরআন হাদীছের দলীল-প্রমাণ তো অনেক দীর্ঘ, আবার দালীলিক কথাবার্তা বুঝতে বুদ্ধিজীবীদের কিছু সমস্যাও হতে পারে কিংবা কুরআন হাদীছের দলীল তাদের পছন্দ নাও লাগতে পারে। তাই দলীল-প্রমাণ উল্লেখ না করে শুধু উপরোক্ত জিনিসগুলোর অযৌক্তিকতা এবং খারাবি ও ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরার উপর ক্ষান্ত করছি।

এসব অযৌক্তিকতা ও ক্ষতিসমূহ সামনে রাখলে বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা করতে সুবিধে হবে কেন ইসলামে এগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কেন উলামায়ে কেরাম এগুলোর বিরুদ্ধে বলেন। বুদ্ধিজীবীগণ এ ক্ষতিগুলো তাদের বিবেকের কাছে পেশ করে বিবেক থেকে রায় গ্রহণ করে দেখুন তাদের বিবেক কী রায় প্রদান করে।

সংক্ষেপে ক্ষতিসমূহ নিম্নরূপ-

সিনেমা ও নাচ-গান-এর ক্ষতিসমূহ

১. এগুলো ধর্মকর্ম থেকে মানুষকে বিমুখ করে দেয়। আর ধর্ম-কর্ম থেকে বিমুখতা পরকালের কঠিন আযাবের দিকে ধাবিত করে।

২. প্রচুর সিনেমা ও গান এমন হয় যা দ্বারা ঈমান ও চরিত্র বিনষ্ট হয়ে যায়।

৩. এগুলো প্রেম-প্রীতি, ধর্ষণ প্রভৃতি অশ্লীলতার মানসিকতা তৈরি করে। ফলে সমাজে অশ্লীলতার বিস্তৃতি ঘটে।

৪. এগুলোর নেশা লেখাপড়ার মনযোগ বিনষ্ট করে দেয়। এ প্রেক্ষিতে এগুলো শিক্ষার জন্যও ক্ষতিকর বলে বিবেচিত।

৫. সিনেমা ও নাচ-গানে অস্বাভাবিকতা ও নাটুকেপনা থাকার কারণে মানুষের মধ্যে বিশেষত শিশুদের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ ও নাটুকেপনা স্বভাবের বিকাশ ঘটে। শিশু মনোবিজ্ঞান (Child Psychology)ও এটা স্বীকার করে। এভাবে স্বভাব ধর্মের বিকৃতি ঘটে, যা স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনা ও স্বাভাবিক আচরণকেও প্রভাবিত করে, এমনকি সমাজেও তার প্রকাশ ঘটে। সমাজে ফিল্মী স্টাইলে যেসব অপরাধ ঘটে তা সিনেমা তথা চলচ্চিত্রেরই প্রভাব জনিত।

নারীদের পর্দাহীন বিচরণের ক্ষতিসমূহ

১. নারীদের সতীত্ব সম্ভ্রম ঝুঁকিতে পড়ে।

২. আরও আগে বেড়ে নারীদের সতীত্ব হানি ঘটে।

৩. যুব সমাজের যৌন উত্তেজনা উস্কানি পায় এবং তাদের চরিত্র ধ্বংসের কারণ ঘটে। আর ধ্বংস চরিত্রের মানুষ দ্বারা সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে না।

৪. অবাধ যৌনাচারিতার পথ উন্মুক্ত হয় এবং তার ফলে সমাজে যৌনঘটিত রোগ-ব্যধির বিস্তার ঘটে।

৫. অবাধ যৌনাচারিতার পথে পা বাড়ানো স্বামী স্ত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে বিবাদ দেখা দেয় এবং এভাবে সমাজে দাম্পত্য কলহ বেড়ে যায়, পারিবারিক অশান্তি বৃদ্ধি পায়। আর পারিবারিক কলহ-বিবাদ সুখী সমৃদ্ধ পরিবার ও সুস্থ্য সমাজ বিনির্মানে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। কোন পরিবারে দাম্পত্য কলহ থাকলে সেই পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া, শিক্ষাদীক্ষা, আচার-আচরণ, তাদের প্রতিষ্ঠা অনেক কিছুতেই বিরূপ প্রভাব পড়ে।

মদ গাঁজা প্রভৃতি মাদকদ্রব্যের ক্ষতিসমূহ

১. মাদকদ্রব্য মেধার জন্য ক্ষতিকর। এটা চিকিৎসা বিজ্ঞান কর্তৃক স্বীকৃত। মাদকদ্রব্য বাস্তবতা বিবর্জিত চিন্তার অনুবর্তী করে তোলে এবং আনন্দ-চঞ্চল অবস্থা (Euphoria)-এর বিনাশ ঘটায়।

২. মাদকদ্রব্য শাস্থের জন্য ক্ষতিকর। যেমন মাদকদ্রব্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়, মাদকের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা ও নিষ্ক্রিয়তা (Organic Disorder) দেখা দেয় ইত্যাদি।

৩. মাদকদ্রব্য দেশ ও দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। কারণ মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের কর্মস্পৃহা হ্রাস পায়। ফলে দেশ ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তদুপরি মাদকদ্রব্যের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় হয় যা দেশের ইতিবাচক খাতে ব্যয় হতে পারত।

৪. মাদকদ্রব্য সমাজের জন্য ক্ষতিকর। কারণ মাদককে কেন্দ্র করে বহুরকম সমাজবিরোধী অপরাধ গড়ে ওঠে। বিষয়টা সকলের সামনে স্পষ্ট।

৫. মাদকদ্রব্য পরিবারের জন্য ক্ষতিকর। কারণ মাদকদ্রব্যের পেছনে এত বিপুল অর্থ বিনষ্ট হয় যা পরিবারের কল্যাণে ব্যবহৃত হতে পারত। পরিবার সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, এটা পরিবারের ক্ষতির নামান্তর।

ধর্ম ও আল্লাহ রসূলকে নিয়ে বল্গাহীন কথাবার্তা বলার ক্ষতিসমূহ

১. আল্লাহ ও রসূলকে নিয়ে বল্গাহীন কথা বলা আল্লাহ ও রসূলের শানে জঘন্য বেয়াদবি যা কুফরির শামেল। এটা অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। দুনিয়ার সামান্য একজন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বল্গাহীন কথা বলা যদি অমার্জনীয় অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে, তাহলে আল্লাহ ও রসূলকে নিয়ে বল্গাহীন কথা বলা কেন জঘন্য অপরাধ বলে গণ্য হবে না?

২. ধর্ম আল্লাহর দেয়া, যিনি সকল মানুষের চেয়ে অসংখ্য গুণ বেশি জ্ঞানের অধিকারী। অতএব আল্লাহর জ্ঞানের সঙ্গে তুলনা হয় না এমন ক্ষুদ্রস্য ক্ষুদ্র জ্ঞান নিয়ে কোন মানুষ আল্লাহর দেয়া ধর্ম নিয়ে কীভাবে বিরূপ কথা বলতে পারে! এটা চরম হাস্যকর আস্ফালন। এটাকে প্রশ্রয় দিলে এমন বল্গাহীনতার পথ উন্মুক্ত হবে যা কোন বড় ব্যক্তিত্বের সম্মান নিরাপদ রাখবে না।

৩. ধর্ম ও আল্লাহ আল্লাহর রসূলকে নিয়ে সমালোচনা অন্য লোকদের ধর্মহীনতার দিকে ধাবিত করতে পারে। আর কাউকে সঠিক ধর্ম থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা অবশ্যই অমার্জনীয় অপরাধ। যদি কেউ -নাঊযু বিল্লাহ- বলে, আমি ইসলাম ধর্মকে সঠিক ধর্ম বলেই মানি না। অতএব আমার বিচারে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে বলা সঠিক ধর্ম থেকে বিচ্যুত করার প্রচেষ্টা নয়। তাহলে তার উচিত আগে ইসলামের পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ তথা উলামায়ে কেরামের সাথে বসে যুক্তি ও দলীল-প্রমাণ দিয়ে ইসলাম ধর্ম সঠিক নয় সেটা প্রমাণিত করে নেয়া। সেটা না পারলে ইসলামকে মেনে নেয়া। তাও না পারলে নীরব থাকা। এগুলোর কোনটা না করে একার ধারণার ভিত্তিতে লাখো কোটি মানুষের কাছে স্বীকৃত ও প্রমাণিত ইসলাম ধর্ম নিয়ে সে সমালোচনা করতে পারে না।

৪. ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহ রসূলের সঙ্গে মুসলমানদের পবিত্র আবেগ অনুভূতি জড়িত। আর কারও পবিত্র আবেগ অনুভূতিতে আঘাত করা যেতে পারে না। ধর্মীয় বিচারে তো নয়ই মানবিক বিচারেও না। নি:সন্দেহে কারও মনে আঘাত করা তার শরীরে আঘাত করার চেয়ে গুরুতর।

৫. ধর্ম ও আল্লাহ আল্লাহর রসূলকে নিয়ে কটুক্তি করে যখন মুসলমানদের মনে আঘাত দেয়া হয় আর দেশের প্রচলিত আইনে তার শাস্তির বিধান না থাকায় কটুক্তিকারীরা প্রশ্রয় পেয়ে আরও বল্গাহীন হয়ে ওঠে, তখন কম সবরের অধিকারী আবেগ তাড়িত কোন মুসলমান কটুক্তিকারীদের শাস্তি দেয়ার জন্য আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। যদিও আইন হাতে তুলে নেয়া কাম্য নয় এবং সমর্থনযোগ্য নয় কিন্তু স্বাভাবিকভাবে তা হয়ে যেতে পারে। আর তেমন কিছু হয়ে গেলে তার জন্য ঐ কটুক্তিকারীরা এবং যারা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ না নিবে তারা একেবারে দায় এড়াতে পারে না।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ