।।মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি।।
বিবাহবন্ধন মানব জীবনেরস্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নারী-পুরুষের সুখ-সমৃদ্ধি ও প্রশান্তিময় সহজাত অবস্থান। বৈধভাবে মানব সম্প্রসারণের একমাত্র উপায়। বিবাহ পদ্ধতি মহানবী (সা.)-এর একটি সুন্নত রীতি। এর মাধ্যমে ইমানের পরিপূর্ণতা লাভ হয়।
পাপমুক্ত জীবন পরিচালনায় সহযোগিতা হয়। সহায়ক হয় শান্তিময় পরিবার এবং সম্প্রীতিপূর্ণ একটি আদর্শ সমাজ গঠনে। ইহ ও পরকাল উন্নয়নে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সহায়ক, একে অন্যের অনুপ্রেরণা। শান্তিময় জীবন এবং সম্প্রীতিপূর্ণ একটি পরিবার গঠনে একে অন্যের পরিপূরক।
বিশ্ববরেণ্য গবেষক আল্লামা তাকি উসমানি লিখেছেন, রেলগাড়ি চলার গতি ও ভারসাম্যতা রক্ষার জন্য দুটি সিক সমানভাবে সক্রিয় হতে হয়। কোনো একটি সিক ব্যতিক্রম হলে গাড়ি বিপদের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ একটি পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রী উভয় জনের অবদান অতুলনীয়। এর জন্য দুজনকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিবেদিত হতে হবে। তিনি অন্যত্র লিখেছেন, দোষে-গুণে মানুষ।
কোনো একজনের মধ্যে অনেক দোষত্রুটি থাকতে পারে। সুনজরে তাকালে তার মধ্যে মহৎ কোনো গুণও পাওয়া যেতে পারে। লক্ষ্য করুন! সম্পূর্ণ অকেজো একটি ঘড়ি ২৪ ঘণ্টায় দুবার সঠিক সময় বলে দেয়।
মহান প্রভু কোরআনে কারিমে ঘোষণা করেন, ‘নারীদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন কর। তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত ১৯)।
রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নারীদের সঙ্গে সদাচরণ কর, কেননা তাদের তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ। আর আল্লাহর একটি বাক্যের মাধ্যমে তাদের থেকে তোমাদের জন্য উপকৃত হওয়ার বৈধতা লাভ করেছ।’ (আবু দাউদ)।
অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) ফরমান, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সে যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম, আমি আমার স্ত্রীর কাছে তোমাদের মধ্যে উত্তম। আর তোমাদের কারও সাথী যদি মৃত্যুবরণ করে তাকে ক্ষমা করে দাও।’ (তিরমিজি)।
হজরত ওমর (রা.)-এর মহৎ আদর্শ ইতিহাসে শোভা পেয়েছে। নিজের স্ত্রী সম্পর্কে অভিযোগ করার লক্ষ্যে জনৈক ব্যক্তি তাঁর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত। ওই ব্যক্তি তখন শুনতে পান খলিফা ওমরের স্ত্রী তাঁর মুখোমুখি। আর খলিফা ছিলেন নির্বাক। অভিযোগ করার জন্য আগত ব্যক্তি অবস্থাদৃষ্টে বিব্রত হয়ে ফিরতি পথে পা রাখেন। ওমর (রা.) আগন্তুকের পদচারণ আঁচ করতে পেরে বের হলেন। খোঁজাখুঁজি করে তাকে বের করে প্রয়োজন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। প্রতিউত্তরে ওই আগন্তুক বললেন, আমার স্ত্রী সম্পর্কে কী অভিযোগ করব? আপনারও তো ঠিক ওই অবস্থাই।
খলিফা ওমর (রা.) তখন তাকে কী চমৎকার উপদেশ প্রদান করেন! সে তো আমার নিষ্ঠাবান সেবিকা। আমার খানা তৈরি করে, আমার কাপড় পরিষ্কার করে, আমার সন্তান লালনপালন করে, অথচ এসব সম্পাদন করা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। হারাম থেকে নিবৃত থাকার ক্ষেত্রে আমাকে আন্তরিক সান্ত্বনা প্রদান করে।
আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। ইসলাম নারীকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সব ধরনের অধিকার প্রদান করেছে। দিয়েছে সব মানুষকে নিজ নিজ কর্তব্য আদায়ের প্রতি নির্দেশনা।
স্বামী তার কর্তব্যপরায়ণ হলে স্ত্রীর অধিকার কখনো বাধাগ্রস্ত হবে না। স্ত্রী তার আপন দায়িত্বে যত্নবান হলে স্বামীর অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে না। ইসলাম ধর্মে যেভাবে স্ত্রীর অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে ঠিক তেমনিভাবে স্বামীর অধিকারও স্থান পেয়েছে। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘সুতরাং নেক নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের
অনুপস্থিতিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজেদের ইজ্জত রক্ষাকারিণী, আল্লাহর হিফাজতে তারা তা হিফাজত করে।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত ৩৪)।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।
-কেএল