আদিয়াত হাসান: নতুন অফিস উদ্বোধন উপলক্ষে শুক্রবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় আওয়ার ইসলামের নিজস্ব কার্যলয়ে ‘আওয়ার ইসলাম: উন্নয়ন অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন রাজধানী ঢাকার চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কোরআন মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মাহফুজুল হক কাসেমী, মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বপ্নচারী লেখক অনুবাদক ও মুহাদ্দিস মাওলানা যাইনুল আবিদীন, প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফকীহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান রহ. এর সাহেবজাদা মুফতি শাহেদ রাহমানী, বিশেষ অতিথি ছিলেন শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কোরআন মাদরাসার মুতাওয়াল্লী জনাব আলহাজ মুহাম্মদ ইমাদুদ্দীন নোমান। আলহাজ মুহাম্মদ ইমাদুদ্দীন নোমান উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি চমৎকার এ আয়োজনের জন্য আওয়ার ইসলাম সম্পাদককে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠান শুরু হয় আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুবের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে। শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ার ইসলাম একটি নিয়মতান্ত্রিক ধারার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। এই প্রজন্মের তরুণদের আস্থা ও ভালবাসায় আওয়ার ইসলাম আগলে আছে। মুরব্বি আলেমদের পরামর্শ নিয়ে আওয়ার ইসলাম পথ চলে। বরাবারের মতো আগামী দিনেও পেশাদারিত্বের সাথে সংবাদ প্রচার করে যাবে আওয়ার ইসলাম। চলার পথে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক আবদুল্লাহ তামিম ও বার্তা সম্পাদক কাউসার লাবীবের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, শাইখুল কোরআন আল্লামা কারী বেলায়েত হুসাইন রহ. এর সাহেবজাদ, নুরানী তালিমুল কোরআন বোর্ডের পরিচালক মাওলানা ইসমাইল বেলায়েত হুসাইন, মাকতাবাতুল আখতারের কর্ণধার লেখক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আলী, আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশর সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি এনামুল হাসান খান, খিদমাহ হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব নজরুল ইসলাম, রকমারি ডটকমের সহকারী ম্যানেজার মাওলানা ইহসানুল হক, দ্বীনিয়াত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুফতি সালমান আহমাদ, ঢাকা মেইলের জয়েন্ট নিউজ এডিটর জহির উদ্দিন বাবর।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি মিনহাজ উদ্দীন, চৌধুরীপাড়া শেখ জনুরুদ্দীন রহ. দারুল কোরআন মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মাহবুবুর রহমান, শিক্ষাসচিব মাওলানা মুসলিম উদ্দীন, জামিয়া ইকরা বাংলাদেশের সিনিয়র মুদাররিস মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, আল ওয়াসি হজ ট্রাভেলসের কর্ণধার মাওলানা আব্দুল গাফফার খান, রাহনুমা প্রকাশনীর কর্ণধার মাওলানা মাহমুদুল হাসান তুষার, মারকাযুল কোরআন শিক্ষা পরিবারের চেয়ারম্যান মাওলানা মোশাররফ হুসাইন মাহমুদ, লেখক মাওলানা এনায়েত কবীর, মরিয়ম এয়ার ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার আলহাজ ওমর ফারুক, জামিয়া মাহমুদিয়া মেরাদিয়ার প্রিন্সিপাল মুফতি নুরুল আলম প্রমূখ।
সভাপতির বক্তব্যে মুফতি মাহফুজুল হক কাসেমী বলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের কোনো এক মিটিংয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বড় বড় সব উলামায়ে কেরাম। বৈঠকে মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় একটি দৈনিক পত্রিকা করার। কিন্তু কী কারণে তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি, সেটি এখনো জানিনা। আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ নিজেদের উদ্যোগে ইসলামের কথা বলার জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার জন্য। আওয়ার ইসলামের কাছে সবসময় আমরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ আশা করি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি শাহেদ রাহমানী বলেন, আমাদের আকাবির ও আসলাফের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় তারা সুস্থ মিডিয়া গড়ে তোলার বিরোধী ছিলেন না। বরং মানুষের মাঝে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পৌঁছে দেয়ার জন্য নিজেরাও মিডিয়া গড়ে তুলেছেন এবং তোলার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি মানুষজনকেও উৎসাহিত করেছেন। বর্তমান সময়টি অনলাইন দুনিয়ার। কয়েক বছরের ব্যবধানে হয়তো প্রিন্ট মিডিয়া বিলুপ্তির পথ ধরবে। আওয়ার ইসলাম এ বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে আরো অর্ধযুগ আগে থেকেই এ পথে যাত্রা শুরু করেছে। সেজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ।
তবে বর্তমান সময়ে আওয়ার ইসলামকে ভিডিও কন্টেন্ট আরো বাড়াতে হবে। টিভি চ্যানেলের মতো বিষয় ভিত্তিক ভিডিও, সাক্ষাৎকার, টকশো, নিউজ ইত্যাদির বিষয়ে কাজ আরো বাড়াতে হবে’ বলে মতামত দেন মুফতি শাহেদ রাহমানী।
অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক মাওলানা যাইনুল আবিদীন বলেন, আওয়ার ইসলামের প্রধান কাজ হতে হবে ইসলামের সৌন্দর্য্য মানুষের মাঝে তুলে ধরা। তবে এ পথে অনেক চড়াই-উৎড়াই পোহাতে হবে। মাওলানা মহিউদ্দীন খান রহ. এর মতো অভিজ্ঞ মানুষও পত্রিকা করার ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ার ইসলাম সবসময় যেকোনো ইস্যুর মাঝামাঝি জায়গায় থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এটি খুবই পজেটিভ একটি দিক। আমি আশা করছি আমাদের সহযোগিতা পেলে পত্রিকাটি আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
শাইখুল কোরআন আল্লামা কারী বেলায়েত হুসাইন রহ. এর সাহেবজাদ, নুরানী তালিমুল কোরআন বোর্ডের পরিচালক মাওলানা ইসমাইল বেলায়েত হুসাইন বলেন, আওয়ার ইসলামকে চেষ্টা করতে হবে মূলধারার গণমাধ্যমের তালিকায় স্থান করে নেয়ার। তবে একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মূলধারার গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানিসহ অনেকের সহযোগিতা পায়। কিন্তু আওয়ার ইসলাম সেটি পায় না। তবুও আমরা আমাদের জায়গা থেকে নিজেদের মতো করে আওয়ার ইসলামের পাশে সবসময় থাকবো ইনশাআল্লাহ।
মাকতাবাতুল আখতারের কর্ণধার লেখক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আলী বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন নেককারদের সঙ্গী হওয়ার জন্য। আজকের নেককারদের এ মজলিসে উপস্থিত হতে পেরে আমার খুবই ভাল লাগছে। আওয়ার ইসলামকে দেখছি আমি সেই শুরুর সময় থেকেই। আমার পরিচিত মানুষজন পৃথিবীর প্রায় ছয়টি মহাদেশে বসবাস করে। তাদেরকেও আমি আওয়ার ইসলামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। বলেছি, এটি অনলাইন জগতে আল্লাহর সঙ্গে মানুষকে জুড়ে দেয়ার একটি মাধ্যম। তারা এখন নিয়মিত আওয়ার ইসলামের পাঠক।
তিনি বলেন, ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাংবাদিক ছিলেন হযরত জিব্রিল আমিন। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য সংবাদ হযরত মুহাম্মদ সা. এর কাছে পৌঁছাতেন। তাই সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আমাদেরকে জিব্রিল আ. এর সততা অনুসরণ করতে হবে।
আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি এনামুল হাসান খান বলেন, বিভিন্ন অসত্য সংবাদ ছড়িয়ে দেয়ার ফলে দিনদিন মিডিয়ার ওপর থেকে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগে মানুষ ভুয়া খবর ছড়াতো, মিডিয়া সত্য খবর প্রচার করতো। কিন্তু এখন হচ্ছে পুরো উল্টো। তাই আওয়ার ইসলামকে সে বিষয় খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে।
দ্বীনিয়াত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুফতি সালমান আহমাদ বলেন, আমরা একসময় প্রচুর মিডিয়া বিমুখ ছিলাম। যার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এখন হাড়ে হাড়ে টের পেতে হচ্ছে। এ থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিয়ে সুস্থ ধারার মিডিয়া গড়ে তোলার জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি আওয়ার ইসলামের মতো যারা সুস্থ মিডিয়া গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করছে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে।
খিদমাহ হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ার ইসলাম বরাবরের মতোই দেশ, স্বাধীনতা ও ইসলামের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। খিদমাহ হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড তাই আওয়ার ইসলামের সঙ্গে বেশকিছু ইভেন্টের আয়োজন করেছে। সামনেও আমাদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা মেইলের জয়েন্ট নিউজ এডিটর জহির উদ্দিন বাবর বলেন, আমি আওয়ার ইসলামের সঙ্গে আছি সেই শুরুর সময় থেকেই। মিডিয়া গড়ে তোলা চাট্টিখানী কথা নয়। দেখেছি হুমায়ুন আইয়ুব কথা যুদ্ধ করে এখানে টিকে আছে। আওয়ার ইসলাম যদি আমাদেরকে আরো বেশি পাশে পায় তাহলে তাদের কাজগুলো আরো সুন্দর ও সহজ হবে।
রকমারি ডটকমের সহকারী ম্যানেজার মাওলানা ইহসানুল হক বলেন, সেই শুরুর সময় থেকে আমি আওয়ার ইসলামের সঙ্গী। আমার যতটুকু মনে পড়ছে ইতোমধ্যেই আওয়ার ইসলাম অর্ধযুগ পাড় করছে। এই সঙ্কটাপন্ন সময়ে পত্রিকাটি টিকে আছে এটিই সবচেয়ে বড় কথা। এর জন্য হুমায়ুন আইয়ুব ভাই প্রসংশার দাবিদার। তবে কর্তৃপক্ষ যদি তাদের কাজের পরিধি আরো বাড়ায় তাহলে খুবই ভালো হবে। বিভিন্ন স্পট থেকে নিউজ সংগ্রহ করার বিষয়ে এখন সিরিয়াস হতে হবে।
-কেএল