রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির

‘সমকামিতার অপরাধে আল্লাহ তায়ালা একটি জাতিকে দেশসহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সমকামিতা ইসলামে শুধু হারামই নয় বরং এটি অভিশপ্ত অপরাধ। এই অপরাধের কারণে আল্লাহ তাআলা কাওমে লুত তথা লুত আলাইহিস সালামের অপরাধী জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। হাদিসে সমকামিতার এ মরাত্মক অপরাধের পাশাপাশি নারীদের সঙ্গে অনৈতিক উপায় অবলম্বন করে তাদের পেছনের রাস্তায় যৌনাচারকেও কবিরা গোনাহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এসব অপরাধীদের দিকে তাকাবেন না মর্মেও হাদিসের বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট। বিংশ শতাব্দী জুড়ে, মনোবিজ্ঞানের সাধারণ মানদণ্ড অনুযায়ী রোগনির্ণয়ক আদর্শসমূহের পরিভাষায় সমকামিতাকে মানসিক অসুস্থতা হিসেবে দেখা হত।

বর্তমানে অনেকে এই অপরাধের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই আবার বিভিন্ন যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে একে স্বাভাবিক বলতে চাইছেন। এর ক্ষতি-ভয়াবহতা সম্পর্কে আওয়ার ইসলামের সম্পর্কে কথা বলেছেন রাজধানীর উচ্চতর ইসলামী আইন ও ফতোয়া বিষয়ক প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মুফতি, মুফতি এনামুল হক কাসেমী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতিবেদক নুরুদ্দীন তাসলিম


ইসলামে সমকামিতার ভয়াবহতা বিষয়ে জানতে চাই?

মুফতি এনামুল হক কাসেমী: সমকামিতার ক্ষতি ও ভয়াবহতা বুঝতে অনেক বেশি পড়াশোনা ও জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। একটু খেয়াল করলেই বুঝা যায়, এটা সম্পূর্ণ মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি বিরোধী এক অপরাধ।

এর ভয়াবহতা ও নিকৃষ্টতা বুঝতে শরয়ী দৃষ্টিকোণ, শরিয়া আইন- এসবের প্রয়োজন নেই, স্বাভাবিক দৃষ্টিতে চিন্তা ভাবনা করলেই বোঝে আসে এটা কতটা ঘৃণ্য কাজ ।

পৃথিবীর সব প্রাণীর মাঝেই পুরুষ-নারী রয়েছে। সবাই তাদের যৌন চাহিদা পূর্ণ করে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ থেকে।  সমলিঙ্গের সঙ্গে বিকৃত যৌনচার কোন প্রাণীর মাঝেই নেই।

যারা সমকামিতার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন তারা এমন একটি নিকৃষ্টতম কাজের সঙ্গে নিজেদের জড়াতে চান যেটা পশুদের মাঝেও নেই।

পৃথিবীতে এমন অনেক  অবৈধ  ও হারাম কাজ আছে যেটা জান্নাত বাসীদের জন্য জায়েজ হিসেবে গণ্য হবে; কিন্তু স্বভাব ও প্রকৃত বিরোধী সমকামিতার মতো অপরাধ জান্নাতেও হারাম হিসেবেই গণ্য করা হবে।

ইতিহাসের আলোকে সমকামিতার ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছু বলতে চাইবেন কি?

মুফতি এনামুল হক কাসেমী: আল্লাহ তায়ালার কাছে সমকামিতা এতটাই নিকৃষ্ট যে এই অপরাধের কারণে তিনি একটি জাতিকে দেশসহ সমূলে বিলুপ্ত করে দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোন জাতির সঙ্গে এমনটি ঘটেনি যে একটি জাতিকে পুরো দেশসহ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এখান থেকেই অনুমান করে নেওয়া যায় আল্লাহ তায়ালার কাছে এই অপরাধ কতটা ভয়াবহ ও মারাত্মক।

এসব বিবেচনা করে বলা যায় কোন মুসলমানের জন্য এগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করাও  ঠিক নয়, বাস্তবায়ন তো দূরের কথা।

ইসলাম ও দেশীয় আইনে সমকামিতার বিষয়টি নিয়ে যদি একটু আলোচনা করেন?

মুফতি এনামুল হক কাসেমী: কুরআন-হাদিসে এ বিষয়ে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা এসেছে। কুরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এ অভিশপ্ত কাজ সম্পর্কে কখনো কল্পনাও করা যায় না। এ কাজে লিপ্ত উভয়কেই অভিশপ্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে শরীয়তের দৃষ্টিতে। এমন ব্যক্তিকে চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় (হত্যা) করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হদ অর্থাৎ যেনা-ব্যভিচার, অপবাদ, চুরি ও হত্যার বিষয়ে কোরআনে যেমন স্পষ্ট শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ বিষয়টির ক্ষেত্রে কোরআনে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়নি ।

আরো পড়ুন: লিভ টুগেদার নামের পাপাচার: ‘কোনভাবেই সমর্থন করে না ইসলাম’

তবে এর শাস্তির বিষয়টি প্রত্যেক রাষ্ট্রপ্রধানের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধানরা পরিস্থিতি বুঝে শাস্তি নির্ধারণ করবেন। শরীয়তে সমকামীতার মত অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হত্যা পর্যন্ত শাস্তি নির্ধারণের অনুমতি রয়েছে।

এজন্য সাহাবায়ে কেরাম, খোলাফায়ে রাশেদীন,  ইসলামী শাসনামল ও ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করেছি।

এছাড়া দেশীয় আইনে ৩৭৭ ধালা অনুযায়ী সমকামিতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ: এতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোন পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে দুই বছর কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্টকালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও দিতে হবে।

৩৭৭ ধারার ব্যাখ্যায় পায়ুসঙ্গমজনিত যে কোন যৌথ যৌন কার্যকলাপকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একারণে, পরস্পর সম্মতিক্রমে বিপরীতকামী মুখকাম ও পায়ুমৈথুনও উক্ত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। বাংলাদেশের বিয়ের আইনে একজন পুরুষ একজন নারীর সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে, সমলৈঙ্গিক বিয়ের কোনো স্বীকৃতি বাংলাদেশের আইনেও নেই।

সমকামিতার পক্ষে অনেকেই কথা বলতে দেখা যায়, যুক্তিতর্কও পেশ করেন কেউ কেউ-এমন মানুষদের বিষয়ে আপনার বিশেষ কোন মূল্যায়ন আছে কি?

মুফতি এনামুল হক কাসেমী: আমি বলব, যারা এসবের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের যুক্তিতর্ক পেশ করতে চান, তারা সুস্থ রুচি বোধসম্পন্ন মানুষ নন। আকার-আকৃতিতে মানুষের মতো দেখা গেলেও এরা মূলত মানুষ নয়, পশুর থেকেও নিকৃষ্ট এক জাতী।

সমাজ এবং তরুণদের প্রতি বিশেষ কোনো বার্তা দিতে চাইবেন কি?

মুফতি এনামুল হক কাসেমী: দুনিয়া-আখেরাতে সমকামীতার  যে ভয়াবহ ক্ষতি তার প্রতি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এবং এর ক্ষতির দিকগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে। এটা যে আসলে কোন সুস্থ মানুষের কাজ নয় এটা সমাজ ও তরুনদের বোঝাতে হবে। শাস্তির বিষয়গুলো কুরআন হাদিসের আলোকে বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। তাহলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো যাবে। এবং আশা করা যায় আল্লাহ তা'আলা মানুষের মাঝে এ ধরনের কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিবেন। উম্মতও বিকৃত চর্চা থেকে ফিরে আসবে।

আরো পড়ুন: বিয়েও তো ভেঙ্গে যায়, লিভ টুগেদারের মাধ্যমে আগেই বোঝাপড়া করা ভালো’ কী বলছেন ইসলামী চিন্তাবিদ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ