মুফাককিরে ইসলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদবী রহ.।।
ভাষান্তর: আবদুল কাইয়ুম শেখ।।
আমি মাদরাসার ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা দুটি উপায়ে নিজেদের উপযোগিতা, উপকারিতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করুন। একটি হলো নিজেদের অন্তর্জগতে বিপ্লব সৃষ্টি করুন। অন্যটি হলো, বাইরের অঙ্গনে নিজেদের উপকারিতা প্রমাণ করুন। অন্তর্জগতে বিপ্লব সৃষ্টি করার উপায় হলো- আপনারা জ্ঞান গভীরতায় যোগ্যতা অর্জন করুন। পূর্ণতা সৃষ্টি করুন। উৎকৃষ্টতা লাভ করুন। আমি আপনাদেরকে একজন বিশ্ব পরিব্রাজক হিসাবে বলছি। আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত ছিল যে, আমার বারবার বিভিন্ন দেশে যাবার সুযোগ হয়েছে। কেবল বিভিন্ন দেশে যাওয়াই নয়, বরং আমার সেখানকার সেসব সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছে যেগুলো শিক্ষাগত সমস্যাবলির সমাধান পেশ করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আর অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার বিশেষ সম্পর্কও রয়েছে।
আমি এ কথা এ জন্য বললাম, আপনারা আমার নিবেদনের কদর ও মূল্য বুঝুন! এটা কোন সাধারণ পথচারী ব্যক্তির কথা নয়। এটা এমন এক ব্যক্তির কথা যিনি সেসব অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেছেন যেগুলো জ্ঞানগত জটিল সমস্যাবলির সমাধান ও গবেষণার জন্য অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
আমি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের পানশালা দেখেছি। এজন্য আমি আপনাদের সামনে আরজ করছি, জ্ঞানগত বিষয়ে পূর্ণতা অর্জন করুন। বিশেষজ্ঞতা সৃষ্টি করুন। উপযোগিতা লাভ করুন। যোগ্যতা অর্জন করুন। জ্ঞানগত যেকোনো বিষয়ে যদি আপনি দক্ষতা অর্জন করেন, তাহলে তা আপনার জন্য নিতান্ত কল্যাণকর হবে। বহুবিধ উপকার বয়ে আনবে। যদি আপনারা মনে করে থাকেন, আমরা ধর্মীয় জ্ঞান বিজ্ঞানে যোগ্যতা অর্জন করলে এই যোগ্যতার স্বীকৃতি কোন জঙ্গলে দেওয়া হবে? ইলমের যোগ্যতার মূল্যায়নকারী কে আছে? এ কথা আপনার অজ্ঞতার প্রমাণ।
আমি আপনাদের বলছি, এখান থেকে নিয়ে আমেরিকা পর্যন্ত, ইউরোপ পর্যন্ত, ম্যাকগিল পর্যন্ত, অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ পর্যন্ত প্রতিটি স্থানে এই ঐশী ইলমের মূল্যায়ন রয়েছে। তবে শর্ত হলো আপনি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবেন। পূর্ণতা অর্জন করবেন। কিন্তু পূর্ণতা কাকে বলে? সামান্য যোগ্যতা অর্জন করাকে পূর্ণতা বলে না। একে বিশেষজ্ঞতা বলে অভিহিত করা হয় না। কোনমতে প্রথাগত লেখাপড়া শেষ করার নাম পূর্ণতা, যোগ্যতা ও বিশেষজ্ঞতা নয়! পূর্ণতা এর নাম নয় যে, আপনি কিছু আরবি পড়ে বুঝতে পারলেন। একে কেউই পূর্ণতা ও উৎকর্ষতা বলে না। পূর্ণতা ও উৎকর্ষতা হলো এমন এক ‘জাদু যা মাথা উঁচু করে কথা বলে।’
পূর্ণতা ও উৎকর্ষতা হলো এমন এক শক্তিমান সত্তা যা তার নিজের যোগ্যতার স্বীকৃতি আদায় করে নিতে সক্ষম হয়। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে চাই ও বিশ্বাস করাতে চাই যে, সময় পরিবর্তিত হওয়া ও যুগ পালটে যাওয়ার যতসব দাস্তান সব ভিত্তিহীন। সেসব লোক আপনাকে একদম ধোঁকা দেয় যারা বলে, সময় পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে! আপনি কোথায় আছেন? কোন মরীচিকার পিছনে ছুটছেন? আপনার জীবনের মূল্যবান সময় কোথায় ব্যয় করছেন?
আরে ভাই! আপনি যদি কলেজ ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করতেন, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতেন, ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়ন করতেন, অর্থনীতি (Economics) নিয়ে গবেষণা করতেন, পদার্থবিদ্যা (Physics) নিয়ে পড়াশোনা করতেন, প্রযুক্তিবিদ্যা নিয়ে (Technology) তত্ত্বানুসন্ধান করতেন, তাহলে আপনার জন্য কতই না কল্যাণকর হতো! আপনার ভবিষ্যৎ কতইনা উজ্জ্বল হতো! এ সব কথা আহম্মকি, বোকামি ও খামখেয়ালি ছাড়া আর কিছুই নয়।
ইলমি জ্ঞান বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয়ে আপনি যোগ্যতা, উপযোগিতা ও উৎকর্ষতা অর্জন করুন। কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করে আপনি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হোন। এরপর আপনাকে কখনো এই অভিযোগ করতে হবে না যে, যুগ আমাকে জিজ্ঞাসা করে না। সময় আমাকে মূল্যায়ন করে না। কোথাও আমার স্থান হয় না। আজ আপনারা ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষার যে অধঃপতন দেখতে পাচ্ছেন তার সবই অলসতা, অযোগ্যতা ও অদক্ষতার ফল!
অনুবাদক: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, পোস্তা, চকবাজার, ঢাকা-১২১২।
-এএ