হাসনাইন আহমেদ হাওলাদার>
ভোলা থেকে>
ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেই অসহায়দের সহযোগিতা করে থাকেন। সেই অসহায়দের খুঁজে খুঁজে সহযোগিতা করার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন তিনি। যিনি কাজ করেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। ফেসবুকের কল্যাণে তিনি সহযোগিতা করে যাচ্ছেন শত শত মানুষকে, এমনকি করছেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও।
কীভাবে তিনি মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, পুলিশে যোগদান করার পর ডিউটি করতে গিয়ে রাস্তাঘাটে বিভিন্ন ধরনের অসহায় মানুষের অসহায়ত্বের চিত্র দেখতে পাই, পরে আমার সামর্থনুযায়ী কিছু অসহায় মানুষের পাশে থাকি আর কিছু অসহায় মানুষের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) পোস্ট করি। এরপর দেখতাম অনেকেই সে অসহায় মানুষের পাশে থাকতে ইচ্ছা পোষণ করে। তখন চিন্তা করলাম মানুষের উপকারে ফেসবুক একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম।
বলছি দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের (৭নং ওয়ার্ড দফাদার বাড়ি) মোঃ শাহাবুদ্দিন মিয়ার এক মাত্র ছেলে জীবন মাহমুদ এর কথা। তিনি ২০২০ সালে বাংলাদেশ পুলিশে বাহিনীতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বরিশাল জেলায় কর্মরত আছেন।
ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার পরামর্শ ও রক্তদাতার সন্ধান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানিমূলক বিষয়গুলোতে সাহায্য করা, আইনি সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া এমনকি রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষদের ঘরও করে দেন তিনি।
তিনি বলেন, আমার বেতন এবং কিছু অনলাইন শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতায় এপর্যন্ত ভোলা ও বরিশাল জেলায় ১০টি অসহায় পরিবারকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেই। যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যার সমাধানও দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
কারো পুলিশি পরামর্শ, ডাক্তার, অ্যাডভোকেট পরামর্শ লাগলে মুহূর্তে পোস্ট করেন তাতে অল্প সময়েই মিলে পরামর্শ। হয়ে যায় সমস্যার সমাধান৷ এই ফেসবুক আইডিতে বেশিরভাগ রক্তের প্রয়োজনের অনুরোধ আসে এবং তিনি জানান এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ ব্যাগ এর বেশি রক্ত ম্যানেজ করে দিয়েছেন।
করোনাকালে প্রায় ২০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন ফেসবুক ভিত্তিক মানবিক কাজ করা এ জীবন মাহমুদ। সেই সাথে গৃহহীনদের ঘর করে দিয়েছেন তিনি। তিনি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, ইতোমধ্যে ২০জন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও ২৫ জন অসহায় রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে তারা সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে ছিলেন। ৫ জন অসহায় বৃদ্ধা মায়ের দায়িত্ব নিয়ে তাদের পাশে ছিলেন। বরগুনার অভিযান-১০ লঞ্চ দূর্ঘটনায় আহতদের পাশে ছিলেন। এবং শীতে অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করেন।
এমন ব্যতিক্রমি কাজের জন্য ইতিমধ্যে তিনি বরিশাল স্বেচ্ছাসেবী ফ্লাট ফর্ম এর বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। জীবন মাহমুদ বলেন, আমার মানবিক কাজে সহযোগিতা করেন প্রবাসীরা, চিকিৎসক, পুলিশ, আইনজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আমি সকলের সহযোগীতায় একটি অসহায় মুক্ত সমাজ উপহার দিতে চাই।
চাকুরির পাশাপাশি মানবিক কাজ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি অসহায় মানুষের দুঃখ কষ্ট গুলো বুঝার চেষ্টা করতাম। বাবা পানির সেচ যন্ত্র ও পাওয়ারটিলারের ব্যবসায় অনেক গরীব কৃষকদের টাকা নিতেন না, চাকরিতে এসে বিষয়গুলো আরো বেশি মনের কড়া নাড়ে। পুলিশের চাকরিটা এমন একটি চাকুরি যেখানে শতসহস্র মানুষের সাথে মেশার সুযোগ থাকে, মানুষের দুঃখ কষ্ট সহজে অনুভব করা যায়, মানুষের সাথে মিশে সেবা দেয়া যায়।
আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরনা চট্টগ্রাম বেওয়ারিশ সেবা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য মানবিক শওকত ভাই। তিনি আমাকে ভোলা জেলার প্রতিনিধি করেছেন। আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে একটি ডিজিটাল এতিমখানা মাদ্রাসা গড়ার। যেখানে পবিত্র কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক সব শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে এবং সবধরনের সুযোগ সুবিধা পাবে শিক্ষার্থীরা।
বয়স্কদের যেন রাস্তায় ঘুমাতে না হয় সেই জন্য এবং পথশিশুদের জন্য একটি আবাসস্থলও করতে চাই। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে থাকতে চাই, মানুষের জন্যেই কাজ করে যেতে চাই। পরিশেষে সকলের দোয়া ও ভালোবাসা কামনা করেন বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য জীবন মাহমুদ।
-এটি