আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: বাড়ছে গরম। গরমের এই তীব্রতার মধ্যে কঠিন সময়ে নিজেকে এবং পরিবারকে সুস্থ রাখাটা খুব বেশি জরুরি। তীব্র গরমে অত্যন্ত উপকারি বেলের শরবত। বেলে রয়েছে হাজারও উপকারিতা। আসুন জেনে নেই এই গরমে বেল খাওয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
বেলের পুষ্টি গুনাগুণ
বেল একটি পুষ্টিকর ও উপকারী ফল। বেলের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ফলের চেয়ে অত্যন্ত বেশি। কাঁচা কিংবা পাকা উভয় প্রকারেই ফলটি খাওয়া যায়। বেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের শাঁসে পানির পরিমাণ ৫৪.৯৬-৬১.৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮-২.৬২ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.২-০.৩৯ গ্রাম, শর্করা ২৮.১১- ৩১.৮ গ্রাম, ক্যারোটিন ৫৫ মিলি গ্রাম, থায়ামিন ০.১৩ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেবীন ১.১৯ মিলিগ্রাম, এসকরবিক এসিড ৮-৬০ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ১.১ মিলিগ্রাম ও টারটারিক এসিড ২.১১ মিলিগ্রাম।
বেলের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা
প্রচণ্ড গরমের দাবদাহে একটু বেলের সরবতে যেন প্রান জুড়িয়ে যায়। গরমে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে বেলের সরবতের জুড়ি নেই। কিন্তু শুধু পেট ঠাণ্ডা নয়, বেলের রয়েছে আরও নানা রকম স্বাস্থ্য গুণাগুণ। নিম্নে বেলের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
এক. হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে
গরমকালে প্রায়ই বদহজম, গ্যাস, অম্বল, পেট ব্যাথা এসব সমস্যা লেগেই থাকে। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে বেলের সরবত খুবই কাজের। বেল খেলে তা খাবার হজম হতে সাহায্য করে। এছাড়া ফলটি পেট ঠাণ্ডা রাখতেও সাহায্য করে। ফলটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে বলে গ্যাস, অম্বল, বমির মত সমস্যা সহজে হয় না। তাই ফরমের সময় রোজ বেলের সরবত খেলে এসব সমস্যা থেকে সহজেই বেঁচে থাকা যায়।
দুই. শরীরকে সতেজ রাখতে
শরীরের এনার্জি বা শক্তি বৃদ্ধিতে বেলের অনেক ভুমিকা রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের মধ্যে ১৪০ গ্রাম ক্যালোরি পাওয়া যায়। ক্যালোরি ছাড়াও এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা দেহের এনার্জি বাড়াতে ভুমিকা রাখে। ফলটি পেশিকে মজবুত করা সহ দেহকে সচল রাখতে সাহায্য করে। তাই গরমের সময় শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে শরীরকে সতেজ রাখতে বেলের জুড়ি নেই। গরমে শরীর যখন খুব ক্লান্ত লাগে তখন একগ্লাস বেলের সরবত খেয়ে নিলে মুহূর্তেই দেহে এনার্জি পাওয়া যায়।
তিন. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
বেল রক্তকে পরিষ্কার রাখা ছাড়াও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে ভুমিকা রাখে। ফলটি খেলে তা শরীর থেকে টক্সিন দূর করে শরীরকে পরিষ্কার রাখতে ভুমিকা রাখে। বেলে রয়েছে ভিটামিন সি যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও গ্রীষ্মকালে অনেক সময় অনেক ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এসব ছোঁয়াচে রোগ মোকাবেলায় বেলের ভুমিকা অনস্বীকার্য।
চার. কিডনি সুস্থ রাখতে
কিডনি ভালো রাখতে বেলের গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রয়েছে। বেলে রয়েছে আছে এমন কিছু উপকারী উপাদান যা কিডনিকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। ফলে দেহ বিভিন্ন প্রকার অসুখ থেকে কিডনিকে মুক্ত থাকে। এজন্য কিডনির সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারগণ রোগীকে বেল খেতে বলে থাকেন।
পাঁচ. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
যারা কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য পাকা বেলের সরবত খুব উপকারি ভুমিকা রাখতে পারে। বেল যেহেতু খাবার হজমে সাহায্য করে তাই দেহে কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা বাসা বাঁধতে পারেনা। কেউ যদি নিয়মিত বেলের সরবত খান তাহলে দু তিন মাসের মধ্যেই তার কোষ্ঠকাঠিন্যর এই সমস্যা আর থাকবেনা। আর কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য যে পেট ব্যাথা হয় তাও রোধ করে এই বেল। এছাড়াও কাঁচা বেল খেলে তা ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগ সারাতেও অনেক কাজ করে।
ছয়. গ্যাসট্রিক ও আলসার প্রতিরোধে
বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। এছাড়া বেল হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এর ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা তেমন হয় না। তাই নিয়মিত বেল খেলে গ্যাসট্রিক, আলসার সহ পেটে গ্যাসজনিত ব্যাথা জাতীয় সমস্যা থেকে সহজেই মুক্ত থাকা যায়।
সাত. চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে
বেল শরীরের যেমন উপকার বয়ে আনে তেমনই ফলটি চোখের জন্যও খুব উপকারি। এতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে যা চোখের জন্য একটি উপকারি উপাদান এবং এটি চোখে পুষ্টি যোগায়। ফলটি চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে ফলটির ভুমিকা অপরিসীম। এছাড়া চোখের বিভিন্ন রোগ যেমন গ্লুকমা, জেরসিস রোগ হবার হাত থেকে চোখকে রক্ষা করতেও এর বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। বেলপাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে চোখের ছানি কমে যায়। যারা নিয়মিত বেল খায়, তাদের চোখের বিভিন্ন অসুখ হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
আট. ঠান্ডা জাতীয় সমস্যা প্রতিরোধে
বেলে রয়েছে ঠান্ডা জাতীয় সমস্যা প্রতিরোধী উপাদান। তাই কারও সর্দি জ্বর হলে এক চামচ বেলপাতার রস খাওয়ালে দ্রুত সর্দি ও জ্বরভাব কেটে যায়। এছাড়া বেলপাতার রস ঠাণ্ডা ও ক্রনিক করার জন্যও অনেক উপকারী।
নয়. ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায়
বেলে প্রচুর পরিমানে খাদ্য আঁশ থাকে যা ত্বকের জন্যও খুব উপকারি। নিয়মিত বেল খেলে তা ত্বককে মসৃণ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি ব্রনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
দশ. ক্যান্সার প্রতিরোধে
বেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর গুণাগুণ যা ক্যান্সার প্রতিরোধক। এর রয়েছে স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার রোধে বিশেষ ভুমিকা। বেল থেকে পাওয়া বেটাক্যারোটিন মানবদেহের টিউমার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। তাই বিশেষ করে মহিলারা নিয়মিত বেল বা বেলের শরবত খাওয়ার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে পারেন।
-এএ