মুফতি আবুল ফাতাহ কাসেমী।।
ভোলা থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম। আলিয়া মাদ্রাসা পড়ুয়া এক আলেম আত্মীয় দেখা করতে আসলেন আমাদের কেবিনে। কথা প্রসঙ্গে আলাপ গড়ালো কওমি মাদরাসার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাকওয়াবান, যোগ্য নেতৃত্ব গঠনে কওমি মাদরাসার শিক্ষা সিলেবাস নিয়ে কথা হয়। কওমি মাদ্রাসার প্রতি তার আবেগ ও শ্রদ্ধার জায়গা থেকে তিনি আমায় প্রশ্ন রাখলেন নোটের মাধ্যমে মাদ্রাসাগুলোতে হচ্ছেটা কি? প্লিজ আপনারা আমাদের আস্থার জায়গা কওমি মাদ্রাসাকে আলিয়া মাদ্রাসা বানাবেন না।
গত পাঁচ থেকে দশ বছরে কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা কেন্দ্রিক যে লঘু অরাজকতা চলছে তা নিয়ে এখনই না ভাবলে এর পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ হবে তার ইয়াত্তা নেই।
কপালে ভাঁজ পরার মতো বিষয় হচ্ছে, ক্লাসের তৃতীয় টেবিলের ছেলেদের সাথে প্রথম সারির ভালো ছাত্ররাও এক রকম বাধ্য হয়ে গাইড পড়া শুরু করেছে। পরীক্ষা আসলে কোন ছাত্রের সামনে মূল কিতাব থাকে না। এ যদি হয় দেশের প্রধান প্রধান মাদ্রাসাগুলোর অবস্থা, তাহলে এ প্রজন্ম থেকে যোগ্য, মেধাবী আলেম কিভাবে তৈরি হবে তা সচেতন মহল ভালো করেই জানেন।
একজন শিক্ষক হিসেবে এই অরাজকতা প্রতিনিয়ত দেখছি। সেদিন মেশকাতের ক্লাসে গিয়ে দেখলাম প্রতি কিতাবের বাংলা নোট রয়েছে অধিকাংশের কাছে। আর পরীক্ষা উপলক্ষে সাজেশন গাইড তো সবার কাছেই। এভাবে চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরে যোগ্য শিক্ষক খুঁজে পাওয়া যাবে না, তা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।
আরো পড়ুন: ‘গাইড নির্ভর পড়াশোনা বন্ধে শিক্ষাবোর্ডের কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই’
দীনের যোগ্য খাদেম তৈরি করার এ কেন্দ্রগুলোর গাইড বিতর্ক নিয়ে কয়েক বছর যাবত আলোচনা চলছিল। গত কয়েক বছর পূর্বে বিশ্ব বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস মুফতি আবুল কাসেম নোমানী দা.বা. গাইড বন্ধে দেওবন্দের লাইব্রেরিগুলোতে চিঠি দেন। এতে করে সেখানে যে অসুস্থ প্রবণতা ছিল, তা কিছুটা কমলেও অবিবেচক বাংলাদেশি লাইব্রেরী মালিকদের দৌরাত্ম্য অনেক বেড়েছে। অধিক মুনাফার আশায় এদেশের কিছু অসাধু ‘কাগজ ব্যবসায়ী’ প্রতি বছর পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অরাজকতা বন্ধে চিন্তাশীল আলেমগণ বোর্ডগুলোর কাছে অনেক আগে থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন।
আরো পড়ুন: বলা যায় গাইড নির্ভরতার কারণে একটি প্রতিবন্ধী প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে: মাওলানা জিকরুল্লাহ খান
দীর্ঘদিন পরে হলেও দেশের সবচেয়ে বড় বোর্ড বেফাক কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্রে যে পরিবর্তন এনেছে তা প্রশংসার যোগ্য। শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা সম্পন্ন করে তুলতে গাইড নির্ভরতা বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। প্রশ্ন উঠেছে পরীক্ষার আগে কেন এ বিষয়ে সতর্ক করা হলো না? যুক্তির বিচারে এমন সব প্রশ্নের কোন ভ্যালু নেই। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি কি ছাত্রদের সাথে পরামর্শ করে প্রশ্ন তৈরি করবে?
আজকে আমি আমার মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে দেখেছি সচেতন ছাত্র-শিক্ষকগণ প্রশ্নপত্রের পরিবর্তনের এ বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। আমাদের প্রাণের কওমি মাদ্রাসাগুলো যোগ্য, মেধাবী আলেম তৈরিতে তার প্রাচীন ধারায় ফিরে যাক।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, ওস্তাদবৃন্দ, শিক্ষাবোর্ড ও লাইব্রেরি মালিকদের সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকলে ছাত্রদের কিতাবমুখী করা সহজেই সম্ভব। সামনের দিকে আমরা এ ধরনের আরো ইতিবাচক পদক্ষেপ কামনা করছি।
লেখক: অনুবাদক ও শিক্ষক জামিয়া কারিমিয়া রামপুরা মাদরাসা।
এনটি