মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন।।
বুদ্ধিজীবীদের কাছে আর একটি কথা যা নিবেদন করতে চাই তা হল- মাথায় কোন প্রতিকূল চিন্তা না রেখে ইসলামের কথা শুনুন। কেউ যখন কোন বক্তার আলোচনা শুনে এই চিন্তা মাথায় রেখে যে, সে যা-ই বলুক তার কথা মেনে নিব না, সে যা-ই বক্তব্য দিক তার খণ্ডন আমাকে বের করতেই হবে, তার বিরুদ্ধে যুক্তি আমাকে দাঁড় করাতেই হবে, তাহলে সেই বক্তার বক্তব্য থেকে সে কখনোই সঠিক দিশা লাভ করতে পারবে না। সেই বক্তার কথা কোনোভাবেই তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হবেও না, তা সে বক্তা যত জ্ঞানী-গুণীই হোক না কেন এবং তার বক্তব্য যত ন্যায়সংগত ও যুক্তিসংগতই হোক না কেন। বস্তুত কারও কথা থেকে সঠিক দিশা লাভ করতে চাইলে মাথায় কোন প্রতিকূল চিন্তা না রেখেই তার কথা শুনতে হয়।
জ্ঞানী-গুণী লোকের কথা যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সংগত হলে তা মেনে নিব- মাথায় এই চিন্তা রেখেই তার কথা শুনতে হয়। এটা একটা স্থূল নীতিকথা, যা খুব বেশি ব্যাখ্যার প্রয়োজন রাখে না। কুরআন হাদিসের কথা থেকে হেদায়েত তথা সঠিক দিশা লাভ হওয়ার জন্যও এ নীতিটি প্রযোজ্য। তাই হেদায়েত চাইলে কুরআন হাদিসের কথা মাথায় কোন প্রতিকূল চিন্তা না রেখেই শুনতে হবে।
এ মর্মে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ وَأُولَئِكَ هُمْ أُولُو الْأَلْبَابِ.
অর্থাৎ, যারা এই কালাম মনোযোগ দিয়ে শোনে, অত:পর এর সর্বোত্তম কথার অনুসরণ করে, তারাই এমন যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত করেন এবং তারাই জ্ঞানী। (সূরা যুমার: ১৮)
অতএব কেউ যদি আগ থেকেই মাথায় প্রতিকূল চিন্তা নিয়ে কুরআন হাদিসের কথা শোনে তাহলে কুরআন হাদিসের কথায় তার হেদায়েত নাও হতে পারে, না হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ তার দ্বারা হেদায়েত পাওয়ার শর্ত পূরণ হয়নি। সে নিজেকে এমন অবস্থানে নিয়ে যায়নি যাতে বুঝায় সে হেদায়েত পাওয়ার প্রত্যাশী। বরং সে নিজেকে এমন অবস্থানে রেখেছে যেন তার হেদায়েতের প্রয়োজন নেই। আর আল্লাহ কারও হেদায়েতের মুখাপেক্ষীও নন যে, সে না চাইলেও তাকে হেদায়েত দিয়েই দিবেন। সারা জগতবাসী কুফরী করলেও আল্লাহর তাতে কিছু ক্ষতি নেই। আমরা হেদায়েতপ্রাপ্ত না হতে পারলে আমাদেরই ক্ষতি। আল্লাহ কারও হেদায়েতের মুখাপেক্ষী নন- এ মর্মে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ.
অর্থাৎ, কেউ কুফরী করলে (সে জেনে রাখুক) আল্লাহ তো জগতবাসী থেকে মুখাপেক্ষীহীন। (সূরা আলে ইমরান:)
অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, إِن تَكْفُرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنكُمْ ۖ وَلَا يَرْضَىٰ لِعِبَادِهِ الْكُفْرَ ۖ وَإِن تَشْكُرُوا يَرْضَهُ لَكُمْ.
অর্থাৎ, তোমরা যদি কুফরী কর, তবে (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন। আর (-ও জেনে রাখো) আল্লাহ তার বান্দাদের কুফরিতে সন্তুষ্ট নন। আর যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তাহলে তিনি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। (সূরা যুমার: ৭)
আল্লাহ আমাদের হেদায়েতের মুখাপেক্ষী নন বরং আমরাই হেদায়েতের মুখাপেক্ষী। আমাদের হেদায়েত পাওয়া না পাওয়ার সাথে আল্লাহর লাভ বা ক্ষতির কোন সম্পর্ক নেই। বরং হেদায়েত পাওয়া না পাওয়ার সাথে আমাদেরই লাভ ক্ষতির সম্পর্ক। হেদায়েত পেলে আমাদেরই লাভ না পেলে আমাদেরই ক্ষতি।
এ মর্মে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, .مَّنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ
অর্থাৎ, কেউ হেদায়েত গ্রহণ করলে সে তার নিজের উপকারের জন্যই হেদায়েত গ্রহণ করবে। আর কেউ গোমরাহী গ্রহণ করলে তার নিজের ক্ষতির জন্যই সে গোমরাহী গ্রহণ করবে। (সূরা বনী ইসরাঈল: ১৫)
আমরা হেদায়েত গ্রহণ করলে আল্লাহর কোনো লাভ নেই। এর বিপরীত আমরা বিমুখ হলে আল্লাহর কোনো ক্ষতি নেই- এ মর্মে এক হাদীছে কুদছীতে সুন্দর বর্ণনা এসেছে- আল্লাহ জাল্লা শানুহূ বলেছেন, يا عبادي! لو أن أولكم وآخركم وإنسكم وجنكم كانوا على أتقى قلب رجل واحد منكم ما زاد ذلك في ملكي شيئًا، يا عبادي! لو أن أولكم وآخركم وإنسكم وجنكم كانوا على أفجر قلب رجل واحد منكم ما نقص ذلك من ملكي شيئًا. (أخرجه الإمام مسلم في صحيحه)
অর্থাৎ, হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের আগের পরের সমস্ত জিন ও ইনসান যদি সর্বোচ্চ তাকওয়া পরেযগারির অধিকারী হয়ে যায় তবুও তা আমার রাজ্যের কিছুই বৃদ্ধি ঘটাবে না। (পক্ষান্তরে) হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের আগের পরের সমস্ত জিন ও ইনসান যদি সর্বোচ্চ পাপাচারী হয়ে যায় তবুও তা আমার রাজ্যের কিছুই হ্রাস ঘটাবে না। (সহীহ মুসলিম: ২৫৭৭)
পরিশেষে বুদ্ধিজীবীদের কাছে নিবেদন- ইসলামের কথা তথা কুরআন হাদিসের কথা শুনুন মাথায় কোন প্রতিকূল চিন্তা না রেখে। ভাল কথা গ্রহণ করার জন্য মনকে প্রস্তুত করুন। কুরআনের ভাষায় (পূর্বে উল্লেখিত আয়াত দ্রষ্টব্য) যারা ভাল কথা শুনলে তা গ্রহণ করে, তারাই বুদ্ধিমান। Those are wise who accept good words when hear it.
-এএ