আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: বাংলাদেশে যেভাবে ইসলাম এসেছিলো এটা আমরা সবাই জানি। ইসলাম আগমনের ইতিহাসে যিনি আলোচিত, তিনি হলেন হজরত শাহজালাল রহ.। তিনি হিজরি ৭০৩/০৪ মোতাবেক ১৩০৩ খ্রি. সিলেট বিজয়কালে তার তিন শতাধিক সঙ্গীর মধ্যে অন্যতম ছিলেন জরিপ শাহ (রহ.)। তিনি বাংলাদেশের উত্তর সীমান্ত এলাকা শেরপুরে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব পান।
এ মহান সাধক তার ৩৬০ একর খানকা এলাকা নিরাপত্তার জন্য চারপাশে খাল খনন করান। প্রচলিত আছে, তাঁর জিন মুরিদরা এক রাতে খাল খননের কাজ করে ফেলে।
এতেই তার সুনাম ছড়িয়ে যায় এবং এলাকার নাম হয় গড় জরিপা। অন্যদিকে জরিপ শাহের (রহ.) খালটিই কালক্রমে ‘কালিদহ সাগার’ নামে পরিচিত হয়। এ মহান সাধকের মৃত্যুর পর তাঁর খানকাহর পাশে তাঁকে দাফন করা হয়, বর্তমানে যা জরিপ শাহর মাজার নামে খ্যাত। তাঁরই স্মৃতিস্মারক গড় জরিপা বারো দুয়ারী মসজিদ।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের গর্ব ও মুসলিম স্থাপত্যকলার অনন্য নিদর্শন হলো গড় জরিপা বারো দুয়ারী মসজিদ। জনশ্রুতি অনুযায়ী, অন্তত সাত শ বছর আগে জরিপ শাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটিতে ১২টি দরজা থাকার কারণেই বলা হয় বারো দুয়ারী। আছে তিনটি জানালা, তিনটি গম্বুজ।
কথিত আছে, মসজিদটি বর্তমানে যে অবস্থানে আছে, মোগল আমলে সেখানে মসজিদটি একটি সেনা ছাউনি মসজিদ বলে পরিচিতি পায়। কালের বহতাধারায় ভূমিকম্পে মসজিদটি ধ্বংস হয়ে মাটিচাপা পড়ে। মসজিদের ওপর জমতে থাকে মাটির স্তূপ এবং আস্তে আস্তে তৈরি হয় টিলা। টিলার ওপর গজায় নানা জাতের গাছ-গাছালি। বিশাল জঙ্গল হয়ে ওঠে ‘আড়া’ (জঙ্গলের স্থানীয় পরিভাষা), মানুষের উচ্চারণে মজিদের (মসজিদ) আড়া।
গড় জরিপা মসজিদকে আবারও ইবাদতের মহিমায় ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখলেন আরেক মহান দরবেশ। ঐতিহ্যবাহী শর্ষিণা পাকদরবারের মহান পীর সাহেবের খলিফা হয়ে শ্রীবরদীতে আগমন করলেন আজিজুল হক সাহেব। তিনি জামালপুর জেলা সদরের মানুষ। আজিজুল হক সাহেব একদিন এক শুভ স্বপ্নযোগে গড় জরিপা মসজিদ সম্পর্কে আধ্যাত্মিক ইশরা লাভ করেন।
স্বপ্নের নির্দেশনামতো তিনি গড় জরিপা গিয়ে উঁচু ঢিবি খুঁজতে থাকলেন। গ্রামের বয়োবৃদ্ধ লোকজনের সঙ্গে আলাপে তিনি জানতে পারলেন গ্রামের ওই উঁচু ঢিবি বা টিলার ওপরের গাছ-গাছালির বিশাল জঙ্গলে একসময় মসজিদ ছিল, যা স্থানীয়দের উচ্চারণে ‘মজিদের আড়া’।
আজিজ সাহেব তার স্বপ্নের কথা এলাকার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করলেন এবং মুরিদদের নিয়ে মাটি খনন করতে লাগলেন। তারা জঙ্গল পরিষ্কার করে মাটির কয়েক গজ গভীরেই এক প্রাচীন মসজিদের অস্তিত্ব খুঁজে পান।
মসজিদের ইটগুলো গোলাপ ফুলের নকশা খোদাইকৃত ছিল। দীর্ঘদিন দুর্লভ ইটগুলো জনগণের হেফাজতে থাকলেও ১৯৬৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তা নিয়ে যায়।
হারিয়ে যাওয়া জরিপ শাহের স্মৃতিবিজরিত ও সাত শ বছরের প্রাচীন বারো দুয়ারী মসজিদ খুঁজে পাওয়ার পর বহুবার সংস্কার ও সম্প্রসারণের ফলে বর্তমান রূপ পেয়েছে।
এতে প্রাচীনত্ব ও আধুনিকতার চমৎকার সমন্বয় ফুটে উঠেছে শিল্পীর সযত্ব ছোঁয়ায়। অপরূপ প্রত্ন নিদর্শন বারো দুয়ারী মসজিদ ইবাদত ও ঐতিহ্যের আবহে পর্যটক আকর্ষণে বিশাল অবদান রাখতে পারে।
-এটি