শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
হজযাত্রীর জন্য চালু হচ্ছে হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, থাকবে অ্যাপ কুয়েট শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন- ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ  আইন করে ভারতে মুসলিমদের অধিকার হরণ করা যাবে না: জমিয়ত করাচি-চট্টগ্রাম রুটে নৌযান চলাচলকে স্বাগত জানিয়েছে দুই পক্ষ: পাকিস্তান ২৬ এপ্রিল জমিয়তের কাউন্সিল, প্রাধান্য পেতে পারে তরুণ নেতৃত্ব কওমি সনদ বাস্তবায়ন  করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব: ধর্ম উপদেষ্টা কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতেই কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব: জামায়াত সেক্রেটারি গাজায় গণহত্যা ও ভারতে ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে জমিয়তের বিক্ষোভ ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় নিহত অন্তত ৩৮ ভারতীয় মুসলিমরা এখনই না জাগলে অধিকার নয়, পরিচয়ও হারাতে পারে

এক কলেজ ছাত্রের বিশ্ববরেণ্য ইসলামিক স্কলার হওয়ার গল্প!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: তারিক জামিল তখন পাকিস্তানের কিং এডওয়ার্ড মেডিকেল কলেজের ছাত্র। পাঞ্জাবের তুলাম্মা এলাকার বিরাট জমিদার পরিবারের আদুরে দুলাল। স্বভাবে কিছুটা একরোখা এই তরুণের চোখের সামনে এক রঙ্গিন দুনিয়ার হাতছানি। বাঁধনহারা উন্মাদনায় কাটছিল তার মেডিকেল জীবন।

একদিন সকালবেলার ঘটনা। তারিক জামিল প্রতিদিনকার মতো উপস্থিত হয়েছেন ক্যাম্পাসে। তাঁর খুব ঘনিষ্ট একজন বন্ধু তাঁকে এসে বললেন- ‘তারিক, বিকেলে ফ্রি থেকো। তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো।’ তারিক ভাবলেন- হয়তো কোনো নতুন সিনেমা নেমেছে, তা-ই দেখাতে নিয়ে যাবে। বিকেলে বেশ পরিপাটি হয়ে বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।

তিনি জানলেন না- যে মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তা পুরোদস্তুর বদলে দেবে তাঁর জীবন নদীর বাঁক। ‘Morning shows the day’- প্রবাদটিকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করে অধিষ্ঠিত করবে একটি মহাসত্যকে, সহস্রাধিক বছর পূর্বে যেমনটি ঘটেছিল মক্কার বুকে উমর (রা.)-এর হাত ধরে। প্রমাণ করে ছাড়বে- সব সকাল দিনের পূর্বাভাস দিতে পারে না ঠিকঠাক।

বন্ধুকে অনুসরণ করার এক পর্যায়ে যখন তারিক বুঝতে পারলেন- তারা সিনেমা হলে যাচ্ছেন না, তখন জিজ্ঞেস করলেন- ‘আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি?’ বন্ধু জবাব দিলেন- ‘আমরা তাবলীগের কাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছি।’ বন্ধুর এমন জবাবের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। অর্ধেক রাস্তায় থেমে গড়িমসি করতে লাগলেন। কিন্তু বন্ধুর বারংবার অনুরোধে একটা পর্যায়ে গিয়ে হার মানলেন। রাজি হয়ে গেলেন মসজিদে যাওয়ার জন্য।

এরপরের গল্পটা বদলে যাবার। যে হৃদয়তন্ত্রীকে অনুরণিত হত গিটার আর হারমোনিয়ামের ঝংকার, সেখানে জায়গা করে নিলো আল কুরআনের সুর। পালটে দিল বুকের জমিনের মানচিত্র। ফিরে এলেন আপনালয়ে। বাড়ি ফিরে বাবার কাছে জেদ ধরলেন- তিনি আর ডাক্তার হতে চান না, পড়তে চান ইসলাম নিয়ে, হতে চান আলেমে দ্বীন।

বাবা পুত্রের এমন ছেলেমানুষী আবদার শুনে হুংকার দিয়ে উঠলেন- ‘আমি স্বপ্ন দেখছি- তুমি বড় ডাক্তার হবে, সম্মানের পাশাপাশি অগাধ টাকা কামাবে। আর তুমি কিনা মোল্লা হতে চাও! জমিদারের ছেলে হয়ে মোল্লাগিরি করবে? মানুষের বাড়ি ঘুরে ঘুরে খেয়ে জীবন ধারণ করবে? অসম্ভব! যদি মোল্লাই হতে চাও, তাহলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। এ বাড়িতে তোমার কোনো জায়গা নেই।’

ছেলে বাবার চাইতেও দশগুণ বেশি জেদি। অগত্যা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। বিদায়বেলায় মা হাতে তুলে দিলেন হাজার কতক জমানো টাকা আর অশ্রুসিক্ত দোয়া। প্রিয় সন্তান যতক্ষণ চোখের আড়াল না হন, ততক্ষণ অবধি তাকিয়ে থাকলেন বাড়ির সদর দহলিজ থেকে। ভাগ্যবান এ বাবা-মা তখনও জানলেন না- সময়ের অবিশ্রান্ত পথচলায় এই সন্তান হয়ে উঠবেন দ্বীনি দাওয়াতের এক সাহসী মুয়াজ্জিন, ভূবন মোহিত করা বাগ্মী।

তারিক জামিল চলে এলেন লাহোরে। ভর্তি হলেন ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র ‘জামিয়া আরাবিয়া রেইমান্ড’-এ। এখানে কুরআন, হাদিস, শরিয়াহ, ফিকাহ এবং তাসাউফের শিক্ষাগ্রহণ করে কাটিয়ে দিলেন ১৪ টি বছর। একদিন বাবাও হার মানলেন ছেলের দ্বীনি শিক্ষার প্রতি সীমাহীন আবেগের কাছে। সন্তানকে বুকে টেনে নিলেন পরম আদর আর মমতায়।

এই ঘটনাবহুল জীবনের অধিকারী মানুষটি আজ বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম দাঈদের একজন। বিশ্বব্যাপি ইসলামের সুমহান বাণী পৌঁছে বেড়াচ্ছেন বিরামহীন। তাঁর দরদমাখা কথামালায় মুগ্ধ হয়ে লাখো মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে তাওহীদের সুশীতল ছায়ায়। ফিল্মস্টার থেকে ক্রিকেটার, গায়ক থেকে অভিনেত্রী; কেউ বাদ যান না তাঁর দাওয়াহ থেকে।

পাকিস্তানের সদ্যপ্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী জুনায়েদ জামশেদ, বলিউড অভিনেত্রী ভিনা মালিক তাঁর আহ্বানেই লাভ করেন সত্য পথের দিশা। খ্রিস্টান ক্রিকেটার ইউসুফ ইউহানা তাঁর সংস্পর্শে এসেই ইসলাম গ্রহণ করেন, হয়ে ওঠেন মুহাম্মদ ইউসুফ। সাঈদ আনোয়ার, ইনজামাম উল হক, সাকলাইন মুশতাক, মুহাম্মদ মুশতাক, শহিদ আফ্রিদিসহ অসংখ্য তারকা ব্যক্তিত্ব তাঁর থেকে ইসলামি দীক্ষা গ্রহণ করেছেন ।

এ ছাড়াও তাঁর সংস্পর্শে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, সেনাপ্রধান এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষ ইসলামের সঠিক আলোয়ে আলোকিত হয়েছেন।

দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাতে কোথায় যাননি তিনি? ইসলামের সুমহান আহ্বান নিয়ে তিনি যেমন গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে, তেমনি গিয়েছেন নিষিদ্ধপল্লির পতিতাদের কাছেও। ছুটে বেড়িয়েছেন উপমহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বহু দেশে।

শ্রোতারা তাঁর কথা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে, আবেগে অশ্রু বিসর্জন করছে, ফিরে আসছে হেরার রাজ তোরণের দিকে। যে আলো তিনি ছড়িয়ে ফিরছেন বিশ্বময়, আল্লাহ তার সহস্রগুণ আলোয় ভরিয়ে দিন তাঁর জীবনাকাশ।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ