সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির

ইস্তেখারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্বতন্ত্র ইবাদত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যোবায়ের ইবনে ইউসুফ।।

'ইস্তেখারা' শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো, কল্যাণ কামনা করা, সঠিক দিক-নির্দেশনা চাওয়া ইত্যাদি। জগৎ বিখ্যাত হাদিসবিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার রহ. লিখেছেন, ইস্তেখারা মানে, কোনো বিষয় বাছাই বা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। উদ্দেশ্য, আল্লাহর পক্ষ থেকে সঠিক দিক-নির্দেশনা পাওয়া।

ইস্তেখারার হুকুম
ইস্তেখারা সুন্নত এবং একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। ইস্তেখারা করলে নেকী অর্জন হয় এবং সঠিক পথের দিশাও পাওয়া যায়। কোনো জায়েজ কাজের ব্যাপারে মন স্থির করতে না পারলে ইস্তেখারা করা উচিত। মনে রাখতে হবে, ফরজ ওয়াজিব বা নাজায়েজ বিষয়ে ইস্তেখারা করা যাবে না। ইস্তেখারা শুধু জায়েজ কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। (আল বাহরুর রায়েক: ২/৫৫)।

ইস্তেখারার প্রয়োজনীয়তা
হযরত ওমর রা. বলেন, আমার পছন্দ-অপছন্দের পরোয়া আমি করি না। কেননা আমি তো জানিনা, কিসে কল্যাণ নিহিত; আমার পছন্দের বস্তুর মধ্যে নাকি অপছন্দের বস্তুর মধ্যে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, 'এটা তো খুবই সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিস মন্দ মনে করো, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এটাও সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিস কে পছন্দ করো, অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর (প্রকৃত বিষয়ে তো) আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না।' (সূরা বাকারা: ২১৬)। তাই আমাদের উচিত, কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসলে ইস্তেখারা করে নেওয়া।

ইস্তেখারার গুরুত্ব
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে ইস্তেখারার নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত জাবের রা. বলেন, 'নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সেভাবে ইস্তেখারা শেখাতেন, ঠিক যেভাবে শেখাতেন কুরআনের কোনো সূরা। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ইচ্ছা করে, তখন যেন সে দুই রাকাত নামাজ পড়ে এবং এই (ইস্তেখারার) দোয়া বলে।' (বুখারী: ১১৬২)।

আরেক হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'বনি আদমের সৌভাগ্য হলো, আল্লাহর কাছে ইস্তেখারা করা।

বনি আদমের আরো সৌভাগ্য হলো, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকা। আর বনি আদমের দুর্ভাগ্য হলো, আল্লাহর নিকট ইস্তেখারা বন্ধ করে দেওয়া। বনি আদমের আরও দুর্ভাগ্য হলো, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তার উপর অসন্তুষ্ট হওয়া।' (মুস্তাদরাক হাকেম: ১৯০৩)।

ইস্তেখারার উপকারিতা
শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহ. বলেছেন, সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না; যে আল্লাহর নিকট ইস্তেখারা বা কল্যাণ কামনা করে, মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।

এছাড়াও ইস্তেখারার রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা। যেমন, ইস্তেখারা ব্যক্তিগত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তি মিলে। গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজেও টেনশন ফ্রি ও মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আল্লাহর উপর ঈমান ও তাওয়াক্কুল বৃদ্ধি পায়।

দুনিয়াবী কাজে ব্যর্থতার লজ্জা পেতে হয় না। আল্লাহর নিকট থেকে চেয়ে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়। আল্লাহর সাথে বান্দার একটা গোপন, অথচ সরাসরি যোগসুত্র তৈরি হয়। যা প্রতিটি বান্দার দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হওয়ার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

ইস্তেখারা কখন করবে
দৈনন্দিন জীবনে মানুষ কতো রকম কাজের সম্মুখীন হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য, কাজে সফল হওয়ার জন্য, ছোট-বড় প্রত্যেক কাজের ক্ষেত্রেই ইস্তেখারা করে নেয়া চাই।

এটিই ইসলামের নির্দেশনা। আর কোনো কাজ করতে গিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেলে; সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ইস্তেখারার কোনো বিকল্প নেই।

সুন্নাতের অনুসরণে ইস্তেখারা করলে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইঙ্গিত প্রদান করেন। তাই নতুন যে কোনো কাজ, যেমন: বিয়ে-শাদী, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা দেশ-বিদেশে সফর ইত্যাদি বিষয় সামনে আসলে আগে ইস্তেখারা করে নেওয়া উচিত।

ইস্তেখারা করার নিয়ম
প্রথমে অজু করতে হবে। তারপর ইস্তেখারার নিয়ত করে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে। নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পর, সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পর, সূরা এখলাছ পড়া সুন্নত। (সায়দুল ফাওয়ায়েদ)। নামাজের পর দুই হাত উত্তোলন করে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে, মনোযোগ সহকারে আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে। দোয়ার মধ্যে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা এবং নবীজির উপর দরুদ পাঠ করত এই দোয়া পড়তে হবে:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي ومعاشِى وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي ومعاشِى وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ.

বাংলা উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্তাখিরুকা বি-ইলমিকা, ওয়া আস্তাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা, ওয়াআসআলুকা মিনফাদলিকাল আযীম। ফা-ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়া লা আ’লামু, ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব। আল্লাহুম্মা ইন কুন্তা তা’লামু, আন্না হা-যাল আমরা খাইরুনলী, ফীহ- দ্বীনী ওয়া মা’আশী, ওয়া আ-ক্বিবাতি আমরী, ফাকদুরহুলী, ওয়া-্ইয়াসসিরহু লী।

সুম্মা বা-রিকলী ফীহি। ওয়া ইন কুনতা তা’লামু, আন্না হা-যাল আমরা, শাররুনলী, ফী দ্বীনী ওয়া মা’আশী, ওয়া আ-ক্কিবাতি আমরি, ফাসরিফহু আন্নী, ওয়াসরীফনী আনহু। ওয়াকদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কানা। সুম্মা আরদিনী বিহী।"

অর্থ: 'হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্য চাচ্ছি, আপনার শক্তির সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার মহান অনুগ্রহ চাচ্ছি। আপনি শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী। আমার কোনো ক্ষমতা নেই। আপনি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী। আমার কোনো জ্ঞান নেই। আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত।

হে আল্লাহ! আপনি যদি এ কাজটি আমার জন্য দ্বীনের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমার জীবন যাপন ও কাজের পরিণামের দিক থেকে ভালো মনে করেন, তাহলে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দিন এবং সহজ করে দিন। তারপর তাতে আমার জন্য বরকত দান করুন।

আর যদি আপনি এ কাজটি আমার জন্য দ্বীনের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমার জীবন যাপন ও কর্মের পরিণামের দিক হতে ক্ষতিকর মনে করেন, তাহলে আপনি আমার থেকে তা দূরে সরিয়ে দিন এবং আমাকে তা থেকে বিরত রাখুন। আর যেখান থেকেই হোক আপনি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করে দিন ও তার ওপর আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন।' (তিরমিজি: ৪৮০, ইবনে মাজাহ:১৩৮০, রিয়াদুস সলিহীন: ৭২২)

হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেছেন, 'এ দোয়ার যেখানে ‘হা-জাল আমরা’ শব্দটি আসবে, সেখানে যে কাজটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাওয়া হচ্ছে, সেটি মনে মনে উল্লেখ করা। পুনরায় সে বিষয়টি ভেবে নেওয়া।

তারপর দরুদ পাঠ করে দোয়া শেষ করা।' (তুহফাতুল আলমায়ি : ২/৩৩৮) ইস্তেখারা সমাপ্ত করে সিদ্ধান্তের ভার আল্লাহর উপর সোপর্দ করে নির্ভার হয়ে যাওয়া এবং আল্লাহ তাআলা কল্যাণকর ফায়সালা করবেন, এই বিশ্বাসে অটল থাকা।

ইস্তিখারার সংক্ষিপ্ত দোয়া
শাইখুল ইসলাম আল্লামা তকী উসমানী বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, ইমারজেন্সি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। সে অবস্থায় হাতে এই পরিমাণ সময়ও থাকে না যে, দুই রাকাত নামাজ পড়ে ইস্তেখারার লম্বা দোয়া পড়া যায়। তখন হাদীসে বর্ণিত এই সংক্ষিপ্ত দোয়া পড়ে নিলেও ইস্তেখারা আদায় হয়ে যাবে।

اللهم خرلي واخْتَرْلي
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার জন্য কোন পথ নির্বাচন করা উচিত, তা আপনিই পছন্দ করে দিন। (ফাতহুল বারি: ১১/১৮৭)

اللهم اهدني وَسَدِّدْني
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত করুন। (সহীহ মুসলিম: ২৭২৫)

اللهم الهمني رشدي
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে সঠিক পথ উদ্রেক করে দিন। (আলবানি, দয়িফুল জামি: ৪০৯৮)

ইস্তেখারার পরে পরামর্শ
অনেকেই মনে করেন, ইস্তেখারা করার পরে অন্য কারো কাছ থেকে আর পরামর্শ গ্রহণ করা যাবে না। তাদের ধারণা আসলে ঠিক নয়। বরং ইস্তেখারা করার পরেও দ্বীনদার এবং উদ্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান সম্পন্ন সৎ ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করে নেওয়া চাই। শায়খ ইবনে উসাইমীন রহ. বলেছেন, তিনবার ইস্তেখারা করার পরেও যদি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া না যায়, তাহলে পরামর্শ নেওয়া। হজরত কাতাদা রহ. বলেছেন, মানুষ যখন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পরে পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তাওফিক দেন।

কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, 'এবং তাদের সাথে পরামর্শ করতে থাকুন। অতঃপর যখন আপনি কোনো বিষয়ে মনস্থির করবেন, তখন আল্লাহর উপর নির্ভর করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ভরসারীদের ভালোবাসেন।' (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)।

কয়েকটি জ্ঞাতব্য বিষয়
১। উদ্দিষ্ট বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনিত হলে আল্লাহর উপর ভরসা করে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যেতে হবে। পিছুপা হওয়া বা হীনমন্যতায় ভোগা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন: 'আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেলো, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করো।' (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)

২। ইস্তিখারার নামাজ ও দোয়া পড়ার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত না হতে পারলে, একাধিকবার ইস্তেখারা করা জায়েয আছে। হযরত আনাস রা. কে নবীজি সাতবার ইস্তেখারা করতে বলেছিলেন।

৩। মহিলাদের ঋতুস্রাব বা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কারণে রক্তস্রাব চলা অবস্থায় ইস্তেখারার নামাজ পড়া যাবে না। যদি এই সময়ের মধ্যে ইস্তেখারার প্রয়োজন হয়, তাহলে শুধুমাত্র দোয়া পড়ে নেবে।

৪। ইস্তেখারার দোয়া মুখস্থ না থাকলে তা দেখে দেখেও পড়ে নেওয়া যায়। তবে মুখস্থ করে নেওয়া উত্তম।

৫। ইস্তেখারার জন্য আলাদাভাবে নিয়ত করে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে। ফরজ বা ওয়াজিব নামাজের পরে সেটাকে ইস্তেখারার নামাজ ধরে, তারপর ইস্তেখারার দোয়া পড়লে তা শুদ্ধ হবে না। তবে নফল নামাজের তাকবিরে তাহরিমা শুরু করার পূর্বে ইস্তেখারার নিয়ত করে নিলে তা আদায় হয়ে যাবে।

৬। হাদীসে বর্ণিত ইস্তেখারার দোয়ার মধ্যে কোনোরকম কম-বেশি করা যাবে না। যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই পড়তে হবে।

৭। একাধিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে, প্রত্যেক বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা ইস্তেখারা করা উত্তম। তবে সব বিষয়ের জন্য একবার ইস্তেখারা করে নিলেও হয়ে যাবে।

ইস্তেখারা সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্তি নিরসন
১। অনেকে মনে করেন, ইস্তেখারার পরে স্বপ্নে দেখা বা স্বপ্নে ইঙ্গিত পাওয়া জরুরি। আসলে ইস্তিখারা করার পর তার উদ্দিষ্ট বিষয়ে স্বপ্ন দেখা বা ইঙ্গিত পাওয়া জরুরি নয়। তবে স্বপ্নের মাধ্যমেও সঠিক জিনিসটি জানতে পারে। আবার স্বপ্ন ছাড়াও মনের মধ্যে সে কাজটির প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে। তাই স্বপ্ন দেখা বা স্বপ্নের অপেক্ষায় না থাকা উচিত।

২। অনেক সময় দেখা যায়, একজনের ইস্তেখারা অন্য আরেকজন করছেন। এটা ঠিক নয়। এক জনের পক্ষ থেকে আরেকজন সালাতুল ইস্তিখারা আদায় না করা। কেননা হাদিসের নির্দেশনা হলো, প্রয়োজনগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে ইস্তেখারা করবে। তবে সাধারণভাবে কারো কল্যাণের জন্য দোয়া করা যেতে পারে।

৩। অনেকে মনে করেন, ইস্তেখারা শুধুমাত্র রাতে কিংবা ঘুমানোর সময় করতে হয়। এটিও একটি ভ্রান্ত ধারণা। ইস্তেখারার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় ধরাবাঁধা নেই। দিনে বা রাতে যখনই প্রয়োজন, তখনই ইস্তেখারা করা যেতে পারে। শুধুমাত্র নামাজের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সময় না হলেই চলবে।

৪। অনেকে মনে করেন ইস্তেখারা করার পরে শয়ন করা জরুরি। এটাও ঠিক নয়। ইস্তেখারা দাঁড়িয়ে বসে শুয়ে যে কোনো অবস্থায় করা যায়।

৫। অনেকে মনে করেন, নামাজ ছাড়া ইস্তেখারা হয়না। এটাও ঠিক নয়। নামাজের সময় না পেলে শুধুমাত্র দোয়া পাঠ করে নিলেও ইস্তেখারা হয়ে যায়। তবে ইস্তেখারা করার নিয়ত করে নিতে হবে।

৬। কুরআন মাজিদ, দিওয়ানে হাফিজ, বা মসনবী শরীফ দেখে অনেকে ইস্তেখারা হিসেবে ইঙ্গিত গ্রহণ করেন। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ এবং কুরআনের শানে বেয়াদবীও বটে। এগুলো পরিহার করা জরুরি।

লেখক: মুহাদ্দিস, আল-জামিয়াতু সাকিনাতুল উলুম মহিলা মাদরাসা। শিবচর, মাদারিপুর। খতীব, ফুকুরহাটি মধ্যপাড়া জামে মসজিদ। ভাঙ্গা, ফরিদপুর।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ