রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির

আকাবিরে দেওবন্দের কথা কি কুরআন-হাদিস বিরোধী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা আতাউল কারীম মাকসুদ।।

আমাদের ফেইসবুকীয় প্রজন্ম ইমামুল আসর হজরত শাহ কাশমিরি রাহ.কে চিনে না, জানে না। আরেকটু ব্যাপকভাবে বললে, তারা আকাবিরে দেওবন্দ সম্পর্কে জানে না, তাদেরকে চিনে না। তাদের জীবনীগ্রন্থসমূহ পড়ার মত সময়-সুযোগ এই প্রজন্মের নেই।

‘বাররে সগির’ তথা উপমহাদেশীয় অঞ্চলের জন্য আকাবিরে দেওবন্দের অনবদ্য অবদান, ইলম অর্জনে তাদের আবশ্যকীয়তা এই প্রজন্ম জানে না, বুঝে না; এবং বুঝার চেষ্টাও করে না।

তাই মুক্তমনা কেউ যখন বলে; কুরআন-হাদিস থাকতে আকাবিরে দেওবন্দকে কেন মানবো, তাদের কথা বয়ানে-লিখনীতে কেন আনবো? তখন তাদের কাউন্টার দিতে জানে না। শক্তভাবে খন্ডন করতে জানে না মুখরোচক এসকল মূর্খতার।

আচ্ছা, আমরা কি কুরআন, হাদিস ছুড়ে ফেলে আকাবিরে দেওবন্দের কথা মানতে বলি? আকাবিরে দেওবন্দের কথা কি কুরআন ও হাদিস বিরোধী? তারা কি কুরআন, হাদিস পিছনে ফেলে নিজের জীবন পরিচালনা করেছেন? এসকল প্রশ্নের জবাব আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে নেই। কেন নেই, তারও কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব নেই আমার কাছে; আমাদের কাছে।

হজরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ. থেকে দেওবন্দিদের মিছিল শুরু। মিছিলের শেষ দিকে আছেন, হজরত শায়খুল হাদিস জাকারিয়া রাহ. এবং মুফতি মুহাম্মাদ শফি রাহ.। তাদের মাধ্যমেই দেওবন্দ ও দেওবন্দিয়াত প্রচার, প্রসার লাভ করেছে। আকাবিরে দেওবন্দ মানে তাদের মধ্যবর্তী উলামায়ে কেরাম। তাদের জীবনী তো সংরক্ষিত, মাহফুজ রয়েছে। তাদের স্বরচিত কিতাবাদি, খুতুবাত, মাওয়ায়েজ, মালফুজাত, রাসায়েল তো কাগজের পাতায়-পাতায় বিদ্যমান।

ফেইসবুক রেখে, মিডিয়া থেকে অবসর নিয়ে একটু পড়ে দেখুন না, কেমন স্নিগ্ধ ছিল তাদের জীবন। কুরআন ও হাদিসকে কতটা ফলো করেছেন তারা, আপনি আমি যতটুকু করি, ততটুকু? নাকি একটু বেশি করেছেন তারা। নিজেই পেয়ে যাবেন জবাব, সমাধান।

একটা অস্থির সময় আমরা পার করছি। সবকিছু উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। মাজহাবে হানাফি রেখে যদি ভিন্ন মাসলাক প্রচার প্রসার করতে পারেন, তাহলে আপনি উদার। কথায় কথায়, মাসআলা-মাসায়েল জিজ্ঞাসা করা হলে, হানাফি মাজহাবকে দাবিয়ে রেখে অন্য কিছু যদি বলতে পারেন, তাহলে আপনি স্কলার, শায়খ।

দুদিন আগে এক শায়খের বক্তব্য শুনছিলাম ইউটিউবে। ফজরের সুন্নত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তাকে। জবাব দিলেন নিজস্ব চিরায়ত স্বভাবে, সুকৌশলে। হানাফি মাজহাবকে হাদিসের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিলেন। যে হাদিস দ্বারা দলিল প্রদান করে তিনি মাজহাবে হানাফিকে হাদিস বিরোধী দাঁড় করালেন, স্বয়ং হজরত ইমাম আজম আবু হানিফা রাহ. এবং ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. এই হাদিস জেনে, এই হাদিসের চমৎকার সমাধান দিয়ে তারপর ভিন্ন দুটি হাদিসের আলোকে তারা সমাধান দিয়েছেন। তাদের কিতাবে বিষয়টি সুস্পষ্ট বিদ্যমান। কিন্তু মুহতারাম শায়খ সবকিছু এড়িয়ে গেলেন। হয়তো জেনে-শুনে, অথবা না জেনে, না বুঝে, তিনি মাজহাবে হানাফিকে হাদিসের বিরোদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিলেন। এভাবে এক-দুটি নয়, শত শত মাসআলায় এমন করা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত, প্রায়শই। এবং এটাকে গর্বভরে প্রচার করা হচ্ছে।

ফিরে আসি হজরত শাহ ছাহেবের কথায়। আমাদের স্কলারদের মত মূর্খতাপ্রসুত নয়, দলিলের আলোকে তিনি ২/৪টি মাসআলায় মাজহাবে হানাফি থেকে ভিন্ন ‘রাওয়িয়্যাহ’ পছন্দ করতেন। শুরু যুগে, জীবনের প্রারম্ভে। কিন্তু তাহকিক-তাফতিশ অব্যাহত রেখেছিলেন। মাজহাবে হানাফির অবস্থান ও মেজাজ সেই মাসআলাগুলোতে বুঝার জন্য প্রাণপন মুতালাআ অব্যাহত রেখেছিলেন। দুই লাখ কিতাবে সমুদ্ধ দারুল উলুম দেওবন্দের তৎকালীন মাকতাবা চষে বেড়ান। এক সময় উন্মোচন হলো বাস্তবতা। বুঝলেন, মাজহাবে হানাফির কোনো তুলনা হয় না। প্রকাশ্যে বললেন, ‘মাজহাবে হানাফির দুর্বলতা প্রমাণে আমি অনেক সময় ব্যয় করেছি, বিভিন্ন মাসআলায় ভিন্ন রাওয়িয়্যাহ তারজিহ দিয়েছে, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার সে অবস্থান ভুল ছিল। মাজহাবে হানাফিই কুরআন ও হাদিসের বেশি নিকটবর্তী মাজহাব। হানাফি মাজহাব কুরআন ও হাদিসের আক্বরাব অবস্থানে বিদ্যমান।’ [ নকশে দাওয়াম]

হায়! আফসোস!! ইউটিউবের শায়খরা, এবং ফেইসবুক প্রজন্ম যদি ইমামুল আসর আল্লামা আনওয়ার শাহ ছাহেব কাশমিরি রাহ.-এর কথার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারতো, তাহলে উম্মাহ বেঁচে যেত অস্থিরতা থেকে। সময় ব্যয় করা যেত কুরআন, হাদিসের প্রকৃত গবেষণার কাজে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ