সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

লালমনিরহাটে জুমা আদায়ের মাধ্যমে সাহাবা কমপ্লেক্সের শুভযাত্রা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জুলফিকার জাহিদ।।

 লালমনিহাটের রামদাস পঞ্চগ্রামে ঐতিহাসিক জামিউস সাহাবা মসজিদে বৃহত্তর পরিসরে আজ জুমা নামাজ শুরু হয়েছে ।এতে ইমামতি করেছেন বরেণ্য আলেম ও খতিব মাওলানা তাজুল ইসলাম।

৬৯ হিজরীতে সুদূর মদিনা থেকে এই অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে আসা সাহাবায়ে কেরামের একটি কাফেলা মসজিদটি নির্মাণ করেন। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায় মসজিদটি। ইতিহাসের সূত্র ধরে পুনরুদ্ধার করা হয় ৯৮৭ সালে।

পরবর্তীতে ইসলাম প্রিয় জনতার সহযোগীতায় জামিউস সাহাবা নামে সংস্কার করা হয় সাহাবায়ে কেরামের পবিত্র হাতের স্মৃতিচিহ্ন এই মসজিদকে।

এখানে আজ থেকে বৃহত্তর পরিসরে জুমা নামাজ শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিতে এলাকাবাসী ও ইসলাম প্রিয় জনতার ঢল নেমেছিল।

উৎসবমুখর পরিবেশ ও ভাবগম্ভীর্যতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে মসজিদটির বৃহত্তম জুমার নামাজ। মুসল্লিদের পদভারে মুখরিত হয়েছিল মসজিদ প্রাঙ্গণ। এই জুমায় অংশ নিতে পেরে অনেক মুসল্লিই ছিলেন উচ্ছ্বসিত। সাহাবাদের হাতের স্পর্শের কথা স্মরণ করে উপস্থিত মুসল্লিদের অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। এখান থেকে এই এলাকা ও দেশব্যাপী শান্তির বার্তা ছড়িয়ে পড়বে বলে আশ্বাস অনেকের।

জুমার নামাজের খুতবা খতিব মাওলানা তাজুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে আমরা যেখানে জুমার নামাজ আদায় করছি, এটা সেই পবিত্র স্থান যেখানে আজ থেকে প্রায় ১৩৭৪ বছর আগে ৬৯ হিজরীতে সুদূর মদিনা থেকে সাহাবায়ে কেরামের একটি কাফেলা এসে অবস্থান করেন।

তখন তারা এখানে নির্মাণ করেছিলেন একটি মসজিদ। ১৩৭৪ বছর আগে ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দেওয়ার মিশন নিয়ে তিস্তা বিধৌত অববাহিকা দিয়ে যাত্রাপথে এখানে মসজিদ নির্মাণ করার পর সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে সাহাবাদের পবিত্র কাফেলা।

শেষ পর্যন্ত চীনের ঝুংঝু শহরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সাইয়্যেদুনা আবু আক্কাস রাদি. সাইয়্যেদুনা কায়স ইবনে হুযাইফা রাদি. সাইয়্যেদুনা ওরওয়াহ ইবনে নওফেল রাদি, সাইয়্যেদুনা আবুল কাশেম ইবনে হারেসা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুম।

জুমার খুতবায় তিনি বলেন, কালের বিবর্তনে মসজিদটি একদিন হারিয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া যে ১৯৮৭ সালে কালেমা খচিত একটি ফলক উদ্ধারের সূত্র ধরে হারানো মসজিদটি আবার আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়।

তিনি বলেন, আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। কিশোর বয়সে সংবাদপত্রের মাধ্যমে খবরটি জেনে মনের ভেতর গভীর আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল এই পবিত্র ভূমি ও মসজিদটি দেখার।

বিশেষ করে বলা যায়, মসজিদটি আল্লামা মহিউদ্দিন খান রহ.-এর গবেষণার ফল। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেহনত-এর বদৌলতে হারিয়ে যাওয়া সেই ইতিহাস আমাদের সামনে নির্ভুল ভাবে ফুটে উঠেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে সাহাবার ভূমি। সাহাবাগণের পদধূলিতে ধন্য এই জনপদ আমাদের জন্য গৌরব ও সম্মানের। বাংলাদেশের সাথে মদিনার যোগাযোগ সুপ্রতিষ্ঠিত  ও সুদৃঢ় হবে ইনশাল্লাহ।

খতিব মাওলানা তাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৭ সালে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম তা বাস্তবতায় রূপ নেয় ২০১৯ সালে। সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ করে একটি ভিডিও দেখতে পাই; যেখানে আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, আর্কিওলজিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এই উপমহাদেশে সাহাবা কেরামের হাতে বানানো একমাত্র মসজিদ এটি।

খবরটি শুনে আমি অভিভূত হয়ে উঠি। আওয়ার ইসলাম-এর সম্পাদক মুফতি হুমায়ুন আইয়ুবকে প্রেরণ করি বাস্তবতা যাচাইয়ের জন্য। তিনি দু’বারে সবকিছু সবিস্তারে আমাদের সামনে তুলে ধরেন। ঐতিহাসিক এই মসজিদের করুণ অবস্থা দেখে হৃদযয়ে বেদনা অনুভব করি, তখন থেকে ভাবতে শুরু করি। এরপর নব উদ্যমে শুরু হয় জামিয়াতুস সাহাবার শুভযাত্রা।

তিনি বলেন, জামিউস সাহাবা নির্মাণের ক্রেডিট দিতে চাই আমাদের ইংল্যান্ড প্রবাসী ভাইদের। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবা প্রেমিক প্রবাসী ভাই বোনদের মুক্তহস্তে দানের বদৌলতেই আজকের এই আঙ্গিনা। এছাড়া দেশ বিদেশে অবস্থানরত সকল ইসলামপ্রিয় দরদী ভাইবোনদের অবদান অনস্বীকার্য।

জুমার খুতবায় তিনি বলেন, আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। মসজিদের উপরের তলা এবং কমপ্লেক্স-এর বাকি অংশ নির্মাণের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ একটি ইসলামী শিক্ষার প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে রয়েছে। তিনি বলেন, এই কাজ যদি আমরা এখলাসের সঙ্গে করতে পারি, তখনই আমরা সাহাবাদের সার্থক উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারব ইনশাআল্লাহ।

এ সময় তিনি কুরঅঅনের আয়াতকে উদ্ধৃত করে বলেন, নিশ্চয়ই তারা আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণ করে যাদের বিশ্বাস আছে আল্লাহ তায়ালার উপর ও আখিরাতের প্রতি।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যারা আল্লাহ তা'আলার জন্য মসজিদ নির্মাণ করে আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য জান্নাতের বালা খানা তৈরি করবেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের নেক আমলগুলোকে কবুল করুন এবং সাহাবাদের সাথে আমাদের হাশরের ময়দানে ওঠার তৌফিক দান করুন।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ