আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইসলাম সব সময় ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। অসহায় অসচ্ছল মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা ইসলামে পূণ্যের কাজ। আল্লাহ যাকে অর্থ-সম্পদ দিয়েছেন তিনি সে সম্পদ থেকে অভাবী মানুষকে সাহায্য করলে তাতে আল্লাহতায়ালা খুশি হোন। এ ধরনের মানবিক কর্তব্য পালন ‘রাত জেগে অবিরাম নফল নামাজ আদায় ও অবিরত নফল রোজা’র সমতুল্য বা তার চেয়েও উত্তম।
এই কথাগুলো বুকে লালন করে সমাজে একদল স্বেচ্ছাসেবক ‘হাফেজ্জী সেবা ফাউন্ডেশন’ এর ব্যানারে (গভ. রেজিষ্ট্রেশন নং- ১৪৩৮১৬/২২১) নীরবে নিভৃতিতে দুস্থ,অসহায়দের খেদমতে করে যাচ্ছেন।
তাদের কেউ মসজিদের ইমাম, কেউ অধ্যাপক, কেউ শিক্ষক, কেউ আলেম আবার কেউ বা ব্যবসায়ী। অবাক করার বিষয় হলো এই মিডিয়ার যুগে ফ্লাশ লাইটের আলোতে যখন সবাই নিজেদের প্রচার করতে ব্যস্ত তখন তারা তাদের সোস্যাল মিডিয়ায় দানের পোষ্টগুলোর মুখ ঢেকে দেন!
ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম এবং সহ সভাপতি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিচালক মুহাম্মাদ রাজের ভাষা অনুযায়ী, শায়েখে ঢালকা নগর মুফতী জাফর আহমাদ, হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর একমাত্র জীবিত সাহেবজাদা মাওলানা ক্বারী শাহ আতাউল্লাহ, শাইখুল হাদীস মুফতী মনসুরুল হক এবং মাওলানা শাহ্ তৈয়্যেব আশরাফসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের দিকনির্দেশনায় আমরা কাজ করার চেষ্টা করি।
হযরতওয়ালাদের সাপ্তাহিক ইসলাহী মাহফিলগুলোতে আমরা উপস্থিত হতে চেষ্টা করি যাতে অহংকার, রিয়া থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারি, তাদের দিকনির্দেশনায় চলতে পারি। উল্লিখিত হযরতওয়ালাদের কারো না কারো সাথে আমাদের প্রায় সব সাথী ভাইদের ইসলাহী সম্পর্ক আছে আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি জানান, আমরা সেবার কাজে ঢালকানগর হযরত আরেফ বিল্লাহ মুফতী জাফর আহমাদ’র একটি গুরত্বপূর্ণ নসিহতের ওপর খুব আমল করার চলার চেষ্টা করি আর সেটি হলো- ‘যোগ্য হওয়া ভিন্ন জিনিস আর মকবুল হওয়া ভিন্ন জিনিস। অনেক ব্যক্তি কাবেল (যোগ্য) হওয়ার কারণে মানুষের নিকট এবং দুনিয়াতে প্রসিদ্ধ হয়ে যায়। আল্লাহর দরবারে যদি মকবুল না হয়, প্রসিদ্ধি দিয়ে দুনিয়াতে চলা যাবে কিন্তু আখেরাতে লাভ হবে না’।
মুহাম্মদ রাজ বলেন, আমাদের কাজে যেন কোন প্রকার রিয়া না আসে, এরজন্য প্রমান স্বরুপ সেবার কাজের ছবিগুলো আমরা একান্ত না পারতে পোষ্ট করি না৷ আর প্রচারের জন্য যাও পোষ্ট করি প্রতিটি পোষ্টের দান গ্রহনকারীসহ ভলেন্টিয়ারদের মুখ আমরা ঢেকে দেই, আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি বলেন, বর্তমানে দুস্থ অসহায় চিকিৎসা সেবা নিয়ে করা আমাদের প্রজেক্ট ‘জান্নাতের খোঁজে’ থেকে বেশ বড় কয়েকটি চিকিৎসা সেবা নিয়ে আমরা কাজ করছি আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা জেনে খুশি হবেন দুস্থ, অসহায়, বেওয়ারিশদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে করা আমাদের ‘জান্নাতের খোঁজে’ প্রজেক্ট এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাজার হাজার অসহায় মানুষদের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিতরণ কার্যক্রম পরিসেবা দিয়ে আসছে।
চলমান উক্ত প্রজেক্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে মুহাম্মদ রাজ বলেন, এর মধ্যে ২০২২ সালে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চিকিৎসা সেবার মাঝে ১৭ পারা সম্পন্ন একজন হাফেজা টিবি রোগে আক্রান্ত বোন জামিলা, ক্যান্সারে আক্রান্ত মাদরাসা শিক্ষিকা তাছলিমা বেগম, এক্সিডেন্টে গুড়িয়ে যাওয়া নওমুসলিম খালিদ ভাই, কৃষক পরিবারের ১৪ বছরের সন্তান হার্টে ছিদ্র তালহা, বাগেরহাটের হিমানজোমিয়া রোগে আক্রান্ত অসহায় সেলিম মোড়ল, সিলেটের ক্যান্সার আক্রান্ত দশ মাসের হাবিব সহ একাধিক ভাই ও বোনেদের সম্পূর্ণ চিকিৎসাজনিত সেবা আমাদের ফাউন্ডেশন থেকে চলমান।
এ পর্যন্ত গত কয়েকদিন আমরা এদের চিকিৎসা সেবায় ১০ লক্ষ টাকার উপর খরচ করেছি। উল্লিখিত সবাই জাকাতের হকদ্বার। এই ফান্ডটি এসেছে সমাজে বিত্তবানদের জাকাতের টাকা ও আশেপাশের পরিচিত মানুষ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের সহযোগিতা থেকে, আলহামদুলিল্লাহ।
প্রতিটি ব্যয়ের মানি রিসিপ্ট, চিকিৎসার আপডেট, হসপিটালের ভাউচার আমরা ডোনারদের ফাইল করে পাঠিয়ে দিই। কেউ চাইলে জাকাতের অর্থ শতভাগ সততার মাধ্যমে ব্যয়ের দায়িত্ব আমাদের দিতে পারেন।
সেবার কাজের পরিব্যপ্তি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার মাদরাসাগুলোতে ৭০টি এতিম এবং অন্ধ শিশুদের হেফজ পড়াবার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্যোগে অসহায়দের ত্রাণ বিতরণ সহায়তাসহ বাগেরহাট, মাঝের চর, গাজীপুর, কফিলের চর, ভোলায় আমরা মাসজিদ মাদরাসা নির্মান করেছি। বিভিন্ন চরাঞ্চলে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিতরণ ক্যাম্পেইন আমরা কয়েকমাস পরপরই করে থাকি।
ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়টি উল্লেখ করে রাজ বলেন, আগামীতে বেকারদের কর্মসংস্থান, রাস্তার ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন, মৃৎশিল্প কার্যক্রম, শিশুপাচার রোধ, হস্তশিল্পের প্রচার, পথশিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রজেক্ট আমরা হাতে নিয়েছি।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রতি রমজানের মত এই রমজানেও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় টানা ১ মাস দুস্থ, অসহায়দের মাঝে আমাদের ইফতার বিতরণ কার্যক্রম চলবে ইনশাআল্লাহ। কেউ চাইলে এই মহতী কার্যক্রমে আমাদের সঙ্গে শরিক হতে পারেন।
চলমান প্রজেক্টগুলোর ফান্ডিং বিষয়ে জানতে চাইলে আমিরুল ইসলাম ও মুহাম্মাদ রাজ হেসে বলেন, বড় বড় কোম্পনিগুলো যদি তাদের সেবামূলক দানের কোন অংশ দিয়ে আমাদের প্রজেক্টগুলোতে সাহায্য করতেন তাহলে আমরা আমাদের কাজগুলো আরও সুন্দরভাবে করতে পারতাম।
ফান্ডের অভাবে অন্তরে অনেক স্বপ্ন লালিত থাকলেও অর্থের অভাবে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি না। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর দয়ায় ও সবার সহযোগিতায় দুস্থ, অসহায়দের খেদমতে লেগে আছি আমরা। আল্লাহ যেন এখলাসের সাথে আমাদের কাজ করার তাওফিক দেন ও শো-অফ থেকে আমাদের দূরে রাখেন।
তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, আমাদের নামের সাথে নাম মিলিয়ে অনেক আইডি ও পেইজ দেখবেন যেগুলো কোনটাই সমাজ কল্যান অধিদপ্তর বা জয়েন স্টোক থেকে রেজিস্টার্ড নয়। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ রইল। আমাদের ঠিকানা, ৮/১প্রধান সড়ক, মুহাম্মাদী হাউজিং লিমিটেড, মুহাম্মদপুর ১২০৭, ঢাকা। যেকোনো প্রয়োজনে ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন - 01727-216100, 0140
-এটি