ইবনে নাজ্জার
দেওবন্দ থেকে
জুমাদাল উখরা মাস এলেই বেড়ে যায় দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্রদের ব্যস্ততা। হৃদমাঝারে কাজ করে এক অন্যরকম অস্থিরতা। ভাটা পড়ে শাওয়াল মাসের জোয়ারে কানায় কানায় ভরা আনন্দ-খুশি উৎফুল্লতা-প্রফুল্লতার নদীতে। স্মৃতির পাতায় জমে থাকা স্মৃতির পান্ডুলিপি বাঁধাইয়ের কাজ শুরু হয়ে যায় মনের অজান্তেই। কালের পাখায় ভর করে ধীরে ধীরে ভেসে আসতে থাকে বিদায়ের করুণ সুর।
তবে শিক্ষাবর্ষের এই গোধূলি বেলাটা নববী বাগানের মেহমানদের জন্য কিছুটা খুশিরও বটে। রজব মাসের মাঝামাঝিতে অনেকটা ঘটা করে অনুষ্ঠিত হয় দুই দিনব্যাপী পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপনা মসজিদে রশিদের নিচ তলায় অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন। বার্ষিক পরীক্ষায় নির্ধারিত নম্বর পেলেই পাওয়া যায় মূল্যবান পুরষ্কার। তবে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ছাত্ররা এতো বড় বড় পুরস্কার পায় যে, কয়েকজন মিলে গ্রহণ করতে হয়!
জীবনকে ইসলামের রঙে রাঙিয়ে সুন্দর আগামীর ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়ক বিভিন্ন কিতাবাদি দেওয়া হয় পুরস্কার হিসেবে। আরবি, উর্দু ভাষায় লিখিত আকাবিরে দেওবন্দসহ বিশ্বের খ্যাতিমান আলেমদের সুন্দর প্রসিদ্ধ নামিদামি সব পুস্তক থাকে এই পুরষ্কারে। দেওবন্দের পরিচালক থেকে শুরু করে সিনিয়র শিক্ষকরা ছাত্রদের হাতে তুলে দেন কাঙ্খিত পুরষ্কার।
অনুষ্ঠানের দু’-তিন সপ্তাহ পূর্বেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। ট্রাকে করে আনা হয় পুরষ্কার। প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বার্ষিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের পুরষ্কার তৈরি করে। পুরষ্কারের উপর সুন্দর কাগজে লেখা থাকে প্রাপকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও বার্ষিক পরীক্ষার বিস্তারিত ফলাফল। লেখা থাকে পুরষ্কারে পাওয়া কিতাবাদির নাম ও মূল্য। প্রতি বছর প্রায় দুই তিন হাজার ছাত্রের মাঝে প্রায় বিশ লক্ষাধিক টাকার পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আয়োজিত হতে যাচ্ছে দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্রদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। আগামী ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত হবে অনুষ্ঠানটি। তবে করোনা মহামারির কারণে গত বছর দারুল উলুম দেওবন্দ বন্ধ থাকায় ২০২০ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের পুরষ্কারও এবছর দেওয়া হবে।
প্রতি বছর প্রায় দুই তিন হাজার ছাত্রের মাঝে বিতরণ করা হয় প্রায় বিশ লক্ষাধিক টাকার পুরষ্কার। তবে করোনা মহামারির কারণে এবছর ছাত্র সংখ্যা কিছুটা কম। এবারও দারুল উলুম দেওবন্দ পৌঁছে গেছে পুরষ্কারের বহর। দারুল উলুম দেওবন্দের মসজিদে রশিদের নিচ তলায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে পুরষ্কার। পুরোদমে চলছে পুরষ্কার প্রস্তুতির কাজ। এই আয়োজনকে ঘিরে পুরো দারুল উলুম দেওবন্দ জুড়ে বইছে খুশির শীতল হাওয়া। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে কাঙ্ক্ষিত মূল্যবান পুরষ্কার গ্রহণের।
-কেএল