নুরুদ্দীন তাসলিম।।
হিজাবের বৈধতার পক্ষে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মুসলিম শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। এর মধ্যেই একেবারে উগ্র হিন্দুদের নাকের ডগায় মুসকান খান নামক এক তরুনীর বীরাঙ্গণা ভঙ্গিতে তাকবীর ধ্বনি প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। ‘আল্লাহু আকবার, লাভ হিজাব’ হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গেছে অনলাইন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে শুরু করে উপমহাদেশের পাবলিক ফিগার সবাই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।প্রতিবেশী রাষ্ট্রটিতে মুসলিমদের অধিকার যে অরক্ষিত এ ঘটনা তারই একটি খন্ড চিত্র তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
চট্টগ্রাম ওমর গণি এম ই এস ডিগ্রী কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতাই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ। মুসলমানদের স্বার্থে দেশটিতে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন মুফাক্কিরে ইসলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.। বর্তমান সরকার দেশটিকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ বহন করছে মুসকান নামক সাহসী তরুণীকে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হেনস্থার ঘটনা’।
‘শত বছর ধরে ভারতে হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির এক অনন্য ঐতিহ্য রয়েছে; কিন্তু এ ঘটনার মাধ্যমে উগ্র হিন্দুত্ববাদের চেহারা ফুটে উঠল’।
তিনি বলেন, ‘হিজাবের বৈধতার জন্য শিক্ষার্থীদের হাইকোর্ট পর্যন্ত যেতে হয়েছে। কোর্ট যদি হিজাব নিষিদ্ধ করে (প্রতিবেদনের সময়) তাহলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে’।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির প্রফেসর শাহেদ হারুন বলেছেন, ‘হিজাব ভারতের বাসিন্দাদের আদি পোশাক। রাজস্থানের নারীদের দেখা যায় তারা শাড়ি দিয়ে বড় করে ঘোমটা টেনে নিজের চেহারা ঢেকে নেন। একসময় কলকাতার অমুসলিম সম্ভ্রান্ত নারীরাও হিজাব পরিধান করতো।’
পোশাক সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয় এটা ভারতের কর্মকর্তারা ভালোভাবেই জানেন এবং প্রতিনিয়ত তারা এর সবক দিয়ে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ কর্নাটকে হিজাব ইস্যুতে উত্তেজনা তৈরিকে বিজেপি সরকারের নির্বাচনী ফায়দা লুটার খেলা বিলে মনে করেন তিনি।
মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসাইনের মন্তব্য হল, বিজেপি সরকার যে মুসলিম বিদ্বেষ পুষে রেখেছে নিজের ভেতরে, তা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ব্যবহার করে সময়ে সময়ে।
তিনি বলেন, দুঃখজনক বিষয় হল মুসলমানদের উপর এত জুলুম নির্যাতনের পরেও ভারতের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা সৌদি আরব, আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো নিয়ম রক্ষার জন্যও নিন্দা জানায় না।
প্রফেসর শাহেদ হারুন বলেছেন, খেয়াল করবেন বর্তমানে ভারতে শুধু হিজাব নিয়েই উত্তেজনা চলছে না, দেওবন্দের বিভিন্ন ফতোয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করেছে প্রশাসন। এসব কাজে লাগিয়ে বিজেপি মূলত নির্বাচনী মাঠ গরম করতে চাইছে।
‘ভারতে মুসলমানদের নির্যাতনের চিত্রগুলো বেশিরভাগই নির্বাচনকেন্দ্রিক। নির্বাচনী স্বার্থের কাছে মুসলমানদের অধিকার বলি হতে হয়’ বলেন তিনি।
গণতান্ত্রিক ভারত পাশ্চাত্য কালচারেই স্বস্তি খুঁজতে চেষ্টা করে। তাদের মোড়ল আমেরিকায় কারো পোশাক, ব্যক্তি অধিকারে হস্তক্ষেপের নিয়ম নেই, তাই ভারতেরও উচিত মোড়লদের নীতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হিজাবের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া’ -বলেন শাহেদ হারুন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেছেন, ‘মুসলিম নারীর পোশাক বেছে নেয়া ধর্মীয় অধিকারের পাশাপাশি মৌলিক মানবাধিকারের অধীন। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পোশাক পছন্দের অধিকার সীমিতকরণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের দ্বিচারিতা উম্মোচন হচ্ছে।
তিনি বলেন, মাল্টিকালচালার স্ট্যাটে মুসলিম নারীদের হিজাব একটি পারস্পরিক ভিন্নতা ও বোঝাপড়ার সৌন্দর্য এবং সহিষ্ণুতা হিসেবে বিবেচিত হয়। ভারতে এখন যেটা হচ্ছে তা নারীর স্বাধীনতা ও প্রগতির সাথে প্রতারণা বলতে হবে।
শিক্ষার্থীদের অবশ্যই প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত পোশাকের সাথে ধর্মীয় পোশাকের সমন্বয় ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠানে আসতে দিতে হবে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এটি/ এনটি