।।কাউসার লাবীব।।
মাম কাদের হামা। ইরাকের ওয়ারতি গ্র্যান্ড মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি। ৬৭ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ প্রায় ৬০ বছর ধরে জুমার নামাজের পর নিয়মিত এই মসজিদের মাঝখানে দাঁড়ান। তিনি দাঁড়ান হয়তো মুসল্লিদের মাঝে বাদাম বিতরণের জন্য। অথবা নিজে মসজিদে বিতরণ করা বাদাম পকেটে নেয়ার জন্য। তবে বেশিরভাগ সময় তিনি মুসল্লিদের মাঝে বাদাম সদকাহ করার জন্যই দাঁড়ান। আর এই বিষয়টি তিনি বেশ উপভোগও করেন। কেননা এটি তিনি তার বাবার কাছ থেকে পরম্পরা সূত্রে পেয়েছেন।
ওয়ারতি। ইরাকের এই জেলাটি কুর্দিস্তানের এরবিল থেকে ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। জুমার পর সবজি জাতীয় শুকনো ফল বিতরণ প্রায় কয়েক শতাব্দি পূর্ব থেকে চলে আসা এ জেলার অন্যতম প্রধান রুসম। বিশেষ করে শরৎ ও শীতকালে। এই কাজকে এখানে সামাজিক কাজ বলেও বিবেচিত করা হয়। তাছাড়া তারা এ কাজটি করে থাকেন সদকায়ে জারিয়ার উদ্দেশ্যে।
মুসল্লিদের মাঝে বাদাম বিতরণ করতে করতে মাম কাদের বলেন, আমরা আমাদের পিতা এবং পিতামহের কাছ থেকে এই সামাজিক ঐতিহ্যটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি এবং তারা আমাদেরকে এটি বাস্তবায়নের জন্য ওয়াসিয়ত করে গিয়েছেন। ৩শ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসার এই ঐতিহ্য মহানুভবতার পরিচয়ক।
আগে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের মাঝে আখরোটের সঙ্গে কিসমিস ও খেজুর মিশ্রিত করে বিতরণ করা হত। পরবর্তীতে ছোট্ট একটি শাদা থলের ভেতওে আখরোটের ১০ টুকরা রাখা হতো। এটি মুসল্লিরা যার যার মতো করে নিয়ে যেত। তবে সময়ের ব্যবধানে এটি এখন বাদাম বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে এসেছে। এই রুসমটি এখানে চলমান রেখেছেন স্থানীয় বয়স্ক, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ধর্মীয় পণ্ডিতগণ। কেননা তারা পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া আমানত রক্ষায় খুব সচেতন।
বাদাম বিতরণের জন্য শুক্রবার কেন বেছে নেয়া হলো? জানতে চাইলে মাম কাদেও বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা সদকায়ে জারিয়ার এই কাজটি করার জন্য শুক্রবারকে বেছে নিয়েছিলেন। কারণ এটি ইসলামে একটি বরকতময় দিন’।
ইরাকি এই প্রবীণ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘তাদের জেলায় চলমান এ ঐতিহ্য পাশর্^বর্তী অঞ্চল ও পুরো দেশে একটি অন্যরকম খ্যাতি এনে দিয়েছে। তাছাড়া তাদের নিজেদের মধ্যেও এই বিষয়টি ভালবাসা বৃদ্ধি করছে’। সূত্র : আল জাজিরা
-কেএল