নুরুদ্দীন তাসলিম।।
সম্প্রতি ভারতের সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্যে বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খানের অংশগ্রহণ ও শ্রদ্ধা জানানো নিয়ে নেট মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এরমধ্যে খবর বেরিয়েছে ভারতীয় অভিনেতা বিজেপি ঘেষা এই কণ্ঠশিল্পীর জন্য ‘সূরা ফাতিহা’ পড়ে মাগফেরাত কামনা করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা যেমন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, মুসলিম হিসেবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর শেষকৃত্যে গ্রহণ ও মাগফেরাত কামনার মত ঘৃণ্য কাজ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসলামি বিধান জানাতে গিয়ে গবেষক আলেম মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী বলেছেন, ‘মুসলিম হিসেবে একজন হিন্দু অথবা অন্য যে কোন ধর্মের অনুসারীর শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ জায়েজ নেই’।
তিনি বলেছেন, ‘প্রতিবেশী অথবা পরিচিত ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কেউ মারা গেলে তার জন্য শোক প্রকাশ করা যেতে পারে। কিন্তু তার শেষকৃত্য এবং এ জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নয়’।
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য মাগফেরাত কামনা ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো কোনভাবে জায়েজ হবে না বলে জানিয়েছেন এই গবেষক আলেম।
উদাহরণ দিতে গিয়ে কোরআন শরীফের উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, ‘নুহ আলাইহিস সালাম নিজের ছেলের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তালার কাছে দোয়া করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তালার সরাসরি নিষেধ করে দিয়েছেন। কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘ লাইসা মিন আহলিক’।
‘রাষ্ট্রীয় নাগরিক ও প্রতিবেশী হিসেবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিশেষ সীমারেখা আরোপ করে দিয়েছে ইসলঅম। এই সীমা রেখা অনুযায়ী ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা কর্তব্য এবং দায়িত্ব’।
‘প্রতিবেশীর হকের বিষয়ে ইসলাম মুসলিম অমুসলিম কোন তারতম্য করেনি। অমুসলিম হলেও প্রতিবেশীর হক পুরোপুরি আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম’। তাই বলে তাদের শেষকেৃত্যে অংশগ্রহণ করা ও মাগফেরাত কামনা করা জায়েজ নেই’।
‘অমুসলিম প্রতিবেশীর জন্য হাদিয়া পাঠানো এবং তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর কথাও বলেছে ইসলাম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নিজেও অসুস্থ ইহুদিদের খোঁজখবর নিতে গেছেন। তবে আখেরাতে নাজাতের বিষয়টি যেহেতু ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত তাই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নাজাত-মাগফিরাত কামনা কোনভাবেই জায়েজ হবে না। কারণ সে তো অমুসলিম এবং ইসলাম ধর্মের জান্নাত-জাহান্নামে তার কোন বিশ্বাস নেই। তাই পরিচিত প্রতিবেশী হিসেবে তার যতটুকু হক আছে তার সীমাবদ্ধ থাকার’ কথা বলেছেন গবেষক আলেম মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী।
আরেক গবেষক আলেম মুফতি আতাউল করিম মাকসুদ বলেছেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য ইব্রাহিম আলাইহি সালামের জীবনীতে আদর্শ রয়েছে। তবে তিনি তার পিতার জন্য যে ইস্তেগফার কামনা করেছেন তা ব্যতীত। অর্থাৎ মুশরিক কারো জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না এখানে এ কথাই বলা হয়েছে’ ।
‘রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তায়ালার স্পষ্ট বলেছেন, ‘মুশরিকদের জন্য কখনও আপনি দোয়া করবেন না’।
কোরআনে করিমে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, ‘আপনি মুশরিকদের জন্য ৭০ বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আমি তাদের ক্ষমা করব না’।
এ আয়াত এবং হাদিসের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট যে কোন অমুসলিম কাফেরদের জন্য দোয়া করা যাবে না।
মুফতি আতাউল করিম মাকসুদ বলেছেন, ‘তবে এখানে একটি বিষয় থাকে যে, কেউ হয়তোবা সারা জীবন অমুসলিম ছিলেন, জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আবার এর বিপরীত অবস্থা আছে যে কেউ সারা জীবন মুসলিম ছিলেন, মৃত্যুর আগে অমুসলিম হয়ে গেছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম হাদীসেও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন’।
তিনি বলেন, ‘তবে শরীয়তে বাহ্যিক অবস্থার উপর বিধান দেওয়া হয়। এবং এখানে স্পষ্ট যে, মৃত্য ব্যক্তি হিন্দু অবস্থায় মারা গেছেন এবং হিন্দু অবস্থায় সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তাই কোন মুসলমান সেখানে অংশগ্রহণ-এর মত গর্হিত কাজ ও মাগফেরাত কামনা করতে পারে না।
‘সম্প্রীতি অনেকে উদারতার কথা বলেন, কিন্তু উদারতা মানে এই নয় যে অমুসলিমের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করে তার মাগফেরাত কামনা করতে হবে। ইসলাম সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা এবং ইসলামের বিধান-এর প্রতি তোয়াক্কা না করার কারণেই এসব ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষক আলেম মুফতি আতাউল করিম মাকসুদ ।
এটি / কেএল/ এনটি