নুরুদ্দীন তাসলিম।।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সহযোগিতা কামনা করেছেন। রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে শেষ করা সম্ভব হবে।’
এরই অংশ হিসেবে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রথম দিন জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি জাপা প্রতিনিধি দল এ আলোচনায় অংশ নেন।
৩৯ টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩১ টি দল আমন্ত্রণ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সংলাপের জন্য আটটি রাজনৈতিক দলের সাক্ষাতের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে।
আরো পড়ুন: স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে কতটা আগ্রহী ইসলামী দলগুলো?
‘রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে জনগণের কথা তুলে ধরবে খেলাফত মজলিস’
এই আটটি দলের মধ্যে রয়েছে ইসলামপন্থী দল খেলাফত মজলিস। তারা ইতোমধ্যে আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং আগামী ২৭ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দলটির সংলাপের কথা রয়েছে বলে আওয়ার ইসলাম জানিয়েছেন দলের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী।
আওয়াজ ইসলামকে তিনি বলেছেন, ‘গতবার সংলাপের জন্য নিবন্ধিত দল হিসেবে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছিল খেলাফত মজলিস। এবারের সংলাপেও অংশগ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে আমাদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে’।
তিনি মনে করেন সংলাপের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি চাইলে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ ইসি গঠন করতে পারেন। তবে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে বরাবরের মতই জনমতের প্রতিফলন না ঘটলে জাতির জন্য এটা দূর্ভোগ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আরো পড়ুন: আলেমদের চোখে সংলাপ
'দেশের দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে রাষ্ট্রপতি আমন্ত্রণে খেলাফত মজলিস সংলাপে অংশগ্রহণ করবে এবং জনগণের পক্ষের কথা তুলে ধরবে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে' আওয়ার ইসলামকে বলছিলেন দলটির নায়েবে আমির।
সংলাপ অনেকটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এর মাধ্যমে অর্থবহ কোন ফলাফল আসবে না এমন বক্তব্য ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন জায়গায়- এ বিষয়ে মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেছেন, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, তবে বারবার এমনটাই হোক তা আমরা চাই না, এবং এ বিষয়ে অগ্রিম কোন নেতিবাচক মন্তব্য করার আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। ‘সংলাপ শেষেই বোঝা যাবে এর ফলাফল অর্থবহ হবে কিনা’ বলেন তিনি।
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সংলাপের আমন্ত্রণ না পেলেও শিগগির আমন্ত্রণ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘সংলাপ কতটা অর্থবহ হবে এ নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে’
দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, ‘সংলাপ কতটা অর্থবহ হবে এ বিষয়টি নিয়ে বেশ শঙ্কা রয়ে গেছে। তবে দেশ-জাতির কল্যাণ বিবেচনায় সংলাপে অংশগ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মতামত দিয়েছেন তিনি।
আরো পড়ুন: নির্বাচনী সহিংসতা রোধে যে পরামর্শ ইসলামি রাজনীতিবিদদের
তিনি বলেছেন, ‘ সংলাপের বিষয়টি আলোচনায় এলেই পূর্বের অভিজ্ঞতাগুলো বারবার সামনে আসে, তাই সবদিক বিবেচনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংলাপে অংশগ্রহণ করবে কিনা এ নিয়ে আগামী ২৩ ডিসেম্বর বৈঠক হবে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের পক্ষ থেকে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আমন্ত্রণ পেলে ইসলামী আন্দোলন সংলাপে অংশগ্রহণ করবে কিনা’।
আমন্ত্রণ পেলে কি ধরনের প্রস্তাবনা পেশ করতে পারে ইসলামী আন্দোলন। এ বিষয়ে এখনো কিছু জানাননি দলের মহাসচিব, তবে ২৩ ডিসেম্বর সবকিছু চূড়ান্ত করবে দলটি।
‘নিরপেক্ষভাবে যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে রাষ্ট্রপতির’
এদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সংলাপের জন্য আমন্ত্রণপত্র হাতে পায়নি দলটি। তবে নিবন্ধিত দল হিসেবে আমন্ত্রণ পাওয়ার আশা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংলাপ ইতোপূর্বে খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি তবে এবারও আগের মতই হোক সেটা দেশবাসী চায় না, সবগুলো দলের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি জনগণের কল্যাণে কোন সিদ্ধান্ত নিবেন, এবং রাষ্ট্রপতি চাইলে নিরপেক্ষভাবে যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে তার’।
আরো পড়ুন: ‘শুধু ভালো ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার প্রয়োজন’
সংলাপ নিয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য সব দলের সমন্বিত মতামতের ভিত্তিতে ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে বলেও মতামত এই রাজনীতিবিদের।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে এবার তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রথমবার ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেন। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শুরু হয়, চলে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। বঙ্গভবনে পর্যায়ক্রমে মোট ৩১টি রাজনৈতিক দল এই সংলাপে অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। পরদিন নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
আরো পড়ুন: ইউপি নির্বাচনে আলেমপ্রার্থীর জয়ের ধারাবাহিকতা: কীভাবে দেখছেন ইসলামি রাজনীতিবিদেরা
এর আগে রাষ্ট্রপতি ২০ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এই সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন কমিশন গঠনে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে। সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে সিইসির জন্য দুইজন, চারজন নির্বাচন কমিশনারের জন্য ৮ জনের নাম প্রস্তাব করবে। পরে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত মোট ১০ জনের নামের তালিকা থেকে একজন সিইসি ও ৪ জন নির্বাচন কমিশনার চূড়ান্ত করবেন রাষ্ট্রপ্রধান।
এটি