আমাদের সমাজে যারা লিভ টুগেদারের মত পাপাচারে লিপ্ত তাদের অনেককে এর পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দিতে দেখা যায়। এর মধ্যে একটি হলো, মানুষের জীবনে বৈবাহিক সম্পর্কও ভেঙ্গে যায়, এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই পরিবার। আবার এমন দম্পতির সন্তান থাকলে বিষয়টি তো আরো জটিল হয়ে যায়। এর থেকে লিভ টুগেদার ভালো. যেখানে দুজন দুজনকে বোঝার চেষ্টা করে, ভালো বোঝাপড়া না হলে একজন অপরজনকে ছেড়ে চলে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মুফতি, মুফতি এনামুল হক কাসেমী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতিবেদক নুরুদ্দীন তাসলিম।
‘বৈবাহিক সম্পর্কও ভেঙ্গে যায়, লিভ টুগেদারের মাধ্যমে আগেই বোঝাপড়া করে নেওয়া ভালো’ লিভ টুগেদারের পক্ষে অনেকেই এমন যুক্ত দেন- এ বিষয়ে একজন ইসলামি চিন্তাবিদ হিসেবে কি বলবেন?
মুফতি এনামুল হক কাসেমী: ‘বিবাহ হলো একটি বৈধ পন্থা। বিবাহের মাধ্যমে দুজনের মধ্যে তৈরি হওয়া দাম্পত্য জীবন সুখী, স্থায়ী করতে ইসলামী বিধি-বিধান মানা প্রয়োজন। ইসলামী বিধি-বিধান মানলে সহজেই দাম্পত্য জীবনে ভাঙ্গন ও অশান্তি সৃষ্টির কোন সুযোগ নেই’।
‘বর্তমানে আমাদের সমাজে বৈবাহিক জীবনে ইসলামের নির্দেশনা মানার প্রবণতা একদম নেই বললেই চলে। ইসলামী নির্দেশনা না মানার কারণেই পারিবারিক জীবন অশান্তি ও ভাঙ্গনের মত অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায়। দাম্পত্য জীবন এই অবস্থায় আসার জন্য লিভ টুগেদার না করা দায়ী নয়। ইসলামি বিধান না মানা দায়ী।
‘স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের অধিকারের বিষয়ে সচেতন থাকে তাহলে তাদের সর্ম্পকের মধ্যে ভাঙ্গন ও অশান্তি সৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই, উল্টো দাম্পত্য জীবন সুখী ও দীর্ঘস্থায়ী হবে’।
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে হালাল বস্তুর মধ্যে সবথেকে অপছন্দনীয় হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ। তাই প্রত্যেক দম্পতির উচিত দাম্পত্য জীবনে ইসলামের যে সব নির্দেশনা আছে তা জানা ও মানার চেষ্টা করা‘।
দাম্পত্য জীবনে একান্ত ভাঙ্গনের মত পরিস্থিতি এসে গেলে এক্ষেত্রে ইসলামি নির্দেশনা কী?
মুফতি এনামুল হক কাসেমী: ‘এরপরও যদি দাম্পত্য জীবনে বনিবনা না হয়, কারো সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়, এক্ষেত্রে ইসলাম কয়েকটি স্তর ভাগ করে দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, দাম্পত্য-জীবনে পরস্পরের মাঝে বনিবনা না হলে, প্রথমে বুঝানোর পন্থা অবলম্বন করতে হবে, এতেও কাজ না হলে বিছানা পৃথক করতে হবে, এসবের পরেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে হালকা প্রহারের অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। এই তিন স্তর পার করে যদি উভয়ের মাঝে সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তাহলে অন্য কোন পন্থা অবলম্বনের আর কোন দরকার নেই। কিন্তু যদি এরপরেও সমস্যা হতেই থাকে এবং উভয় পক্ষ বসে কোন ধরনের সমাধানে আসতে চায় তাহলে, নারী-পুরুষ উভয় পক্ষের লোকজন সালিশি বৈঠকে বসবেন। কোনো দম্পতি বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করলে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য বিষয়টি সহজ করে দেন’।
‘এইসব স্তর পার করেও যদি কোন দম্পতির মাঝে বনিবনা না হয়, তাহলে সব শেষে ইসলাম তালাকের নির্দেশনা দেয়। তবে তালাকের ক্ষেত্রেও তিনটি স্তর ভাগ করে দিয়েছে শরীয়ত। প্রথমে এক তালাক দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে, দাম্পত্য জীবন টিকানোর সম্ভাব্য সব ধরনের উপায় অবলম্বন করতে হবে। এতেও সম্ভব না হলে এরপর প্রত্যেক তুহুরে এক তালাক দেওয়ার অনুমতি আছে’।
আরো পড়ুন: লিভ টুগেদার নামের পাপাচার: ‘কোনভাবেই সমর্থন করে না ইসলাম’
‘দাম্পত্য জীবনকে টিকিয়ে রাখার সম্ভাব্য সব ধরনের পন্থা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে ইসলামে। এ সম্পর্ক যেন ভেঙ্গে না যায় এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। তাই ইসলামী নির্দেশনা মানলে বিবাহের মাধ্যমে বৈধ পন্থায় যে সম্পর্ক তৈরি হয় তা সহজেই ভাঙবে না। এর জন্য লিভ টুগেদারের মতো পাপাচারে লিপ্ত হয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের কোন মানে হয় না। এই জেনা থেকে সবাইকে দূরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
লিভ টুগেদারের প্রতি ঝুঁকছেন, এমন তরুণ-তরুণীদের প্রতি বিশেষ কোন বার্তা দিতে চাইবেন কি?
মুফতি এনামুল হক কাসেমী: ‘ইসলামে বিবাহের মাধ্যমে যে বৈধ সম্পর্ক তৈরি হয় তা ধ্বংস করার জন্য ইসলামবিরোধীরা সব সময় চেষ্টা করে আসছে। ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হলে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এদিকে ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে বৈধ সম্পর্কের বাইরে গিয়ে তরুণ-তরুণীদের পাপাচারে লিপ্ত করার সব ধরনের চেষ্টা চলছে। একথায় বিয়ের মত বৈধ সর্ম্পকে কঠিন করে পাপাচারের সব রাস্তা সহজ করা হয়েছে।
মুসলিম সমাজে ধর্ম-ধর্মীয় বিধি-বিধান সম্পর্কে ব্যাপক উদাসীনতা রয়ে গেছে। তাই সবাইকে ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে, ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে’।
আরো পড়ুন: ‘ইসলামে যৌতুক বলে কিছু নেই, মোহরের ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ির সুযোগ নেই’
এএ