নুরুদ্দীন তাসলিম।।
লিভ টুগেদার। এটি মূলত একটি ইংরেজি শব্দ। যার বাংলা অর্থ হল একসঙ্গে থাকা। কিন্তু পারিভাষিক দিক থেকে লিভ টুগেদার শব্দটিকে একটা বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিয়ের আগে গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড স্বামী-স্ত্রীর মত একসঙ্গে থাকাকে লিভ টুগেদার বলে। শরয়ী পন্থায় বৈধ উপায়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে নারী পুরুষের এমন বসবাস ইসলাম ও বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নিষিদ্ধ।
‘দেশের সুস্থ সমাজ ব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের হুমকি’
পশ্চিমের দেশগুলোতে নারী-পুরুষের এমন অবৈধ সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক, বলতে গেলে কিছুটা সভ্যতারও অংশ। রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থা ও ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই এসব রুচিহীন পশ্চিমা কালচার থেকে দূরে থেকেছেন। তবে বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্র বিশেষে অনেক তরুণ-তরুণী লিভ টুগেদারের মতো পাপাচারে জড়িয়ে পড়ছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে উঠে আসছে। কেউ কেউ একে স্বাভাবিক বলেও প্রচারণা চালাচ্ছেন। পশ্চিমা অসভ্য কালচারকে স্বাভাবিক চোখে দেখা দেশের সুস্থ সমাজ ব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন অনেক সমাজ চিন্তাবিদ।
এদিকে বিবাহ বহির্ভূত নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্ককে শরীয়তের দৃষ্টিতে সরাসরি জেনা বলা হয়েছে। এর জন্য হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া লিভ টুগেদার যেখানে তরুণ-তরুণী একে অপরকে বোঝার জন্য একসাথে থাকার কথা বলেন, তাদের অনেকের দাবি অনুযায়ী শারীরিক সম্পর্ক না করে একে অপরকে বোঝার চেষ্টা চালার তারা, শরীয়তের দৃষ্টিতে এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কোরআন শরীফে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা জেনা এবং এসব কাজে উদ্বুদ্ধ করে এমন কোন কিছুর কাছেও যাবে না’।
ইসলামে জেনা হারাম হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়, একটি হল, জেনা অশ্লীলতার অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় কারণ, এর মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অনাচার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে যারা লিভ টুগেদার ছড়িয়ে দিতে চান তাদের অনেকেই বলেন, রক্ষণশীল সমাজের কারণে বাংলাদেশে লিভ টুগেদার খারাপ চোখে দেখা হয়, তাদের এমন দৃষ্টিভঙ্গির দিকে লক্ষ করলেই স্পষ্টভাবে বলা যায় শরীয়তে সমাজের অনাচার থেকে বাঁচতে যে জেনাকে হারাম করা হয়েছে তারা এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেই জেনা-ব্যভিচারকে সমাজে সহজলভ্য করে তুলতে চায় এবং সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায়।
এমন মানুষদের বিষয়ে সূরা নূরে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট বলেছেন, ‘স্মরণ রেখ, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার হােক এটা কামনা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তােমরা জান না’।
‘কথিত সভ্যতার দোহাই দিয়ে শরীয়তে নিষিদ্ধ কিছুকে কখনোই গ্রহণের সুযোগ নেই’
এ বিষয়ে রাজধানীর বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মুফতি, মুফতি এনামুল হক কাসেমী আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, 'যারা ইসলামকে সত্যিকার অর্থেই দ্বীনধর্ম হিসেবে মানে তাদের অবশ্যই ইসলামী বিধি-বিধান এবং ধর্মের অধীনে জীবন পরিচালনা করতে হবে। কোন ধরনের সভ্যতা ও কালচারের দোহাই দিয়ে শরীয়তে নিষিদ্ধ এমন কিছুকে কখনোই গ্রহণ করার সুযোগ নেই' বলেন তিনি।
'লিভ টুগেদারের খোলসে একে অপরকে বোঝার নামে যুবক-যুবতীদের এক সাথে থাকার যে প্রচলন তৈরি হতে চলেছে, ইসলাম একে কখনো সমর্থন করে না, অনুমোদন দেয় না। অনুমোদন তো দূরের কথা ইসলামে এমন কর্মকাণ্ড পুরোপুরি নিষিদ্ধ ও গর্হিত হিসেবে চিহ্নিত। তাই মুসলিম হিসেবে এসবের কল্পনা করাও উচিত নয়' বলে মতামত দিয়েছেন এই ইসলামী চিন্তাবিদ।
'আমরা সব সময় নামধারী মুসলমান হিসেবে এক শ্রেণীকে চিহ্নিত করে আসি, যারা ধর্মীয় বিধিবিধান-এর তোয়াক্কা না করে এসবে মাত্তে চান এবং একে স্বাভাবিক মনে করেন তারা এই শ্রেণীভূক্ত' বলেন তিনি।
‘লিভটুগেদার কোনোভাবেই জেনা থেকে মুক্ত নয়’
‘শরীয়তে জেনা দু'ধরনের, হাকিকী ও হুকমি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চোখের জেনা হলো দেখা, মুখের জেনা হল অশ্লীল কথাবার্তা বলা, হাতের জেনা হলো অন্যায ভাবে কোন কিছু ধরা, পায়ের জেনা হলো, খারাপ কাজের দিকে হেঁটে ধাবিত হওয়া। জেনার যে সব উপকরণ আছে এগুলোও জেনার অন্তর্ভুক্ত। তাই লিভ টুগেদার হয়তোবা সরাসরি জেনার মধ্যে পড়বে অথবা জেনার বিভিন্ন উপায় উপকরণের অন্তর্ভুক্ত হবে। কোনোভাবেই এটা জেনা থেকে মুক্ত নয়, বলেছেন মুফতি এনামুল হক কাসেমী ।
বাংলাদেশের সমাজে যেহেতু লিভ টুগেদারের প্রচলন নেই তাই এ নিয়ে আলাদা কোনো আইন নেই। তবে ১৮৬০ সালের ৪৯৭ নং ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে জেনা-ব্যভিচারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এদিকে মুফতি এনামুল হক কাসেমীর বক্তব্য অনুযায়ী লিভ টুগেদার যেহেতু সরাসরি জেনা অথবা জেনার বিভিন্ন উপায় উপকরণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। সে দিক থেকে ইসলামে নিষিদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে দেশীয় আইনেও লিভ টুগেদার অপরাধ হিসেবেই গণ্য হবে।
বাংলাদেশের আইনে ব্যভিচারের শাস্তি হলো, কারো বিষয়ে ব্যভিচার প্রমাণিত হলে তাকে পাঁচ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
কোন মুসলিমের জন্য এমন গর্হিত কাজের কথা কল্পনা করাও উচিত হবে না -বলেছেন তিনি। তরুণ-তরুণীদের এমন ব্যাভিচার থেকেও ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এই ইসলামি চিন্তাবিদ।
আরো পড়ুন: ‘বিয়েও তো ভেঙ্গে যায়, লিভ টুগেদারের মাধ্যমে আগেই বোঝাপড়া করা ভালো’ কী বলছেন ইসলামী চিন্তাবিদ
কেএল/ এএ