শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বউ শাশুড়ির ঝগড়া: সমাধান কোন পথে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুশতারী তাসনীম মুননী
সাহেবজাদী মাওলানা হাবিবুল্লাহ বাহার রাহ.
খিলগাঁও, ঢাকা


একজন মেয়ে বউ সেজে শশুর বাড়ি আসে। সময়ের ব্যবধানে সে মা হয়। সে সন্তান বড় হয়। আরেকটি মেয়ে বউ হয়ে সে সংসারে আসে। এভাবেই চলে আসছে পৃথিবীর শুরু থেকে। অধিকাংশের ক্ষেত্রে, বউ শাশুড়ির সম্পর্কটা একটি সাংঘর্ষিক সম্পর্ক।

সময়ের ব্যবধানে মেয়ে মা হবে। মা শাশুড়ি হবে। এটাই নিয়ম। সামাজিক রীতিতে শাশুড়ির সেবা করা বউয়ের জন্য অপরিহার্য। ছেলেকে বিয়ের যেন একটাই উদ্দেশ্য, মা বাবার সেবা করা। আর এখানে অতি দায়িত্ব পালনের জন্যই পরবর্তীতে শাশুড়ি বউয়ের অপজিট কানেকশনের পড়ে যায়।

আর ইসলামের দৃষ্টি বলে, শশুর শাশুড়ির সেবা পুত্রবধূর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তাদের সেবার দায়িত্ব সন্তানের (আল বাহরুর রায়েক :৪/১৯৩, কিফায়াতুল মুফতি :৫/২৩০)

তবে শশুর শাশুড়ির সেবার জন্য বউ অবশ্যই সওয়াব পাবেন। নম্রতা, শ্রদ্ধাবোধ, মান্যতা এবং সহনশীলতা ইসলামের সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্যই একটি পরিবারকে বেধে রাখে ভালোবাসায়। একজন মা একটি সংসারের ভিত্তি। মায়ের আদর্শ সন্তান এবং পরবর্তীতে বউ সবাই অনুপ্রাণিত হতে বাধ্য।

বউ কখনোই বলতে পারে না, শাশুড়ি মায়ের মতন। কেননা মায়ের কাছে যে আবদার, যে চাহিদা করবেন কিংবা মায়ের কাছে যে প্রাধান্য পাবেন, যেই আদর-যত্ন পাবেন, তা সহজেই শাশুড়ির কাছে পাওয়া যায় না। আবার একজন শাশুড়িও বলতে পারে না, বউ আমার মেয়ের মতো। কেননা মেয়েকে আপনি যে শাসন অনায়াসে করতে পারবেন। তা বউকে করতে পারবেন না। কিংবা মেয়ের যেটুকু অন্যায় সহ্য করতে পারবেন তা বউয়ের ক্ষেত্রে পারবেন না।

বর্তমান সমাজে যে পরিবারে শাশুড়ি নম্র-ভদ্র সেখানে বউ একটু চঞ্চল হয়। আবার বউ নম্র হলে শাশুড়ি রুক্ষ। এক পরিবারে সব বউ এব রকম হয় না। একেকজন একেক পরিবার থেকে আসে। তারা একেক ধরনের শিক্ষা নিয়ে বড় হয়। তাই সব বউ একই রীতি নীতিতে অভ্যস্ত হবে না। তেমনি একেক বউয়ের আর্থিক অবস্থাও ভিন্ন।

আমি নারায়ণগঞ্জের মেয়ে হলেও বেড়ে ওঠা বরিশালে। বরিশালের নিয়ম নীতিতে অভ্যস্ত আমি। যখন আমি ঢাকার স্থানীয় পরিবারের বউ হয়ে আসি, তখন মাত্র ইন্টারমিডিয়েট করছি। এখানে এসে বরিশালের বউ পালনের নিয়ম পাইনি। এখানকার রুলস ভিন্ন। যৌথ সংসারে প্রথম বউ আমি। আল্লাহর মেহেরবানীতে শাশুড়ি আমার এখন সবচেয়ে কাছের মানুষ। ননদ শ্রেণী আমার অস্তিত্ব। আলহামদুলিল্লাহ। প্রসঙ্গটা এজন্যই আনলাম, যেন আপনি চাইলে আলাদা বৈশিষ্টের কারও আপনজন হয়ে উঠতে পারেন।

এক. মনের ভেতর সবসময়ের জন্য শ্রদ্ধাবোধ রাখুন। কেননা সে আপনার স্বামীর মা। যেমনটি আপনি আপনার সন্তানের জন্য কষ্ট করছেন, হয়তোবা এর চেয়ে বেশী কষ্ট করে আপনার স্বামীকে আজ এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।

দুই. কখনোই শাশুড়ির সাথে প্রতিযোগিতা করবেন না। যেমন, স্বামীকে নিয়ে শাশুড়ির চেয়ে অত্যধিক যত্ন কিংবা অত্যধিক ভালোবাসা দেখাতে যাবেন না। স্বামীর প্রতি ভালোবাসা তো থাকবে হৃদয়ে, শ্রদ্ধাবোধে আর কাজকর্মে। সেখানে প্রতিযোগীতার প্রয়োজন নেই।

তিন. বুঝতে শিখুন। শাশুড়ির মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করুন। যখনই আপনি তার মানসিকতা বুঝতে পারবেন, সম্পর্ক ভালো রাখতে সহায়ক হবে।

চার. আল্লাহর জন্য সেবা করুন। শাশুড়িকে খুশি রাখতে তার শারীরিক, মানসিক এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখুন। এর প্রতিদান শুধু রবের কাছেই প্রত্যাশা করুন।

পাঁচ. হাদিয়া দিন। শাশুড়ির জন্য স্বামী কে বলে শাড়ী, শখের জিনিস কিংবা প্রয়োজনীয় সামগ্রী হাদিয়া দিন। সাধ্য হলে নিজে দিন এতে সম্পর্কে একটা হৃদ্যতা তৈরি হয়।

ছয়. শেখার আগ্রহ রাখুন। সাংসারিক কাজে শাশুড়িকে প্রাধান্য দিন। তার থেকে ভালো রান্না কিংবা অন্যান্য নিয়ম শিখুন। না পারলে দু’কথা বললেও পরবর্তীতে তিনিই খুশি হবেন আপনার আনুগত্যের কারনে। মনে রাখবেন, আপনি যতটা হজম করবেন ততটাই আপনার জন্য উত্তম।

এজন্য সেক্রিফাইস করা জানুন। সব শাশুড়ি চায় তার অন্যান্য সন্তানদের বউ ভালো রাখুক। খেয়াল রাখুক। সেদিকেও আপনার সাধ্যমতো চেষ্টা করুন। একদিনে কখনও সম্মান কিংবা স্থান তৈরী করা যায় না। এর জন্য আপনাকে আগে সয়ে রয়ে নিজেকে ঢেলে তৈরী করতে হবে।

সংসার জীবন কে পরিপূর্ণ সুখ দিতে শাশুড়ি বউ দুজনকেই চেষ্টা করতে হবে। আর এককভাবে চেষ্টা করলে ধীরে রয়ে সয়ে করাই শ্রেয়। একদিন আপনার আনুগত্য, শ্রদ্ধাবোধ কিংবা কাজের সৌন্দর্য্যে হলেও আপনি শাশুড়ির কাছে আপনজন হয়ে উঠবেন।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ