আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে সূরা তাহরীমে মুমিনদের উদ্দেশে বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْۤا اِلَی اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا، عَسٰی رَبُّكُمْ اَنْ یُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَ یُدْخِلَكُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ ...
হে মুমিনগণ! আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা কর। অসম্ভব নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নহর বহমান থাকবে...। -সূরা তাহরীম (৬৬) : ৮
এ আয়াতে تَوْبَةً نَّصُوْحًا দ্বারা উদ্দেশ্য হল, খাঁটি তওবা, একনিষ্ঠ তওবা। গোনাহ থেকে এমন তওবা, যার পর ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যক্তি আর ঐ গুনাহের দিকে ফিরে আসে না।
ইবনে কাসীর রাহ. تَوْبَةً نَّصُوْحًا -এর অর্থ করেছেন-
أَيْ: تَوْبَةً صَادِقَةً جَازِمَةً
অর্থাৎ সত্যনিষ্ঠ ও সুদৃঢ় তওবা। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, আলোচ্য আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
নোমান ইবনে বাশীর রা. বলেন, আমি ওমর ইবনে খাত্তাব রা.-কে বলতে শুনেছি-
التوبة النصوح، أن يتوب من الذنب فلا يعود
‘তওবায়ে নাসূহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, গুনাহ থেকে এমনভাবে তওবা করা যে, পরবর্তীতে আর সে উক্ত গুনাহে লিপ্ত হয় না। (তাফসীরে তবারী, আলোচ্য আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
হাসান বসরী রাহ. বলেন-
"التّوْبَةُ النّصُوحُ أَنْ يَهْجُرَ الْعَبْدُ الذّنْبَ وَهُوَ يُحَدِّثُ نَفْسَهُ أَنْ لَا يَعُودَ إِلَيْهِ أَبَدًا
তওবায়ে নাসূহ হল, গুনাহ বর্জন করা এবং সাথে সাথে মনে এই সংকল্প করা যে, আর এ গুনাহ করবে না। -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৬৬৩৬
ইবনে আব্বাস রা. বলেন, (তওবায়ে নাসূহ দ্বারা উদ্দেশ্য)-
أن لا يعود صاحبها لذلك الذنب الذي يتوب منه
যে গুনাহ থেকে তওবা করবে, আর কখনো সে গুনাহে লিপ্ত হবে না। (তাফসীরে তবারী, আলোচ্য আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
ইবনে কাসীর রাহ. এ বিষয়ে বিভিন্ন সাহাবী-তাবেয়ীর বক্তব্য উল্লেখ করার পর বলেন-
وَلِهَذَا قَالَ الْعُلَمَاءُ : التّوْبَةُ النّصُوحُ هُوَ أَنْ يُقلعَ عَنِ الذّنْبِ فِي الْحَاضِرِ، ويندمَ عَلَى مَا سَلَفَ مِنْهُ فِي الْمَاضِي، ويعزِم عَلَى أَلّا يَفْعَلَ فِي الْمُسْتَقْبَلِ. ثُمّ إِنْ كَانَ الْحَقّ لِآدَمِيٍّ رَدّهُ إِلَيْهِ بِطَرِيقِهِ.
একারণেই উলামায়ে কেরাম বলেন, তওবায়ে নাসূহ হল, গুনাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। অতীতের গুনাহের ব্যাপারে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। ভবিষ্যতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় সংকল্প করা। আর গুনাহটি যদি বান্দার হক সংক্রান্ত হয় তাহলে যথাযথ পন্থায় হক আদায় করা। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, আলোচ্য আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
এই হল আলোচ্য আয়াতে تَوْبَةً نَّصُوْحًا দ্বারা উদ্দেশ্য।
কিন্তু আমাদের সমাজে কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায়, আলোচ্য আয়াতে تَوْبَةً نَّصُوْحًا দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নাসূহের মতো তওবা করা।
এখন ‘নাসূহ’ কে? এ ব্যাপারে আবার কয়েক ধরনের কিসসা প্রচলিত রয়েছে। কেউ বলে, পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে বা নবীজীর যুগে নাসূহ নামক এক বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এমন খালেছ তওবা করেন যে, আল্লাহ তাআলা তার নাম কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং মুমিনদের বলেছেন, তোমরা নাসূহের মতো তওবা কর।
কেউ আবার এভাবে বলে, এক রাজার মহলে ‘নাসূহ’ নামক একজন খাদেম ছিল। সে ছিল মূলত পুরুষ; কিন্তু দেখতে নারীদের মতো ছিল। ফলে সে নারীর বেশে অন্দর মহলে নারীদের খেদমত করত। একবার রাজ মহলে এক চুরির ঘটনা ঘটে। ফলে খাদেমদেরকে বিবস্ত্র করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। তখন ‘নাসূহ’ চিন্তায় পড়ে যায়; এবার সে ধরা খেয়ে যাবে। তখন সে দিল থেকে তওবা করে। তার তওবায় আল্লাহ খুশি হন...।
এগুলো সবই বানোয়াট কথা; এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ ‘নাসূহে’র মতো তওবা করার কথা বলেননি। আরবী ভাষার জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তিমাত্রই বুঝতে পারবেন যে, এটি কোন্ পর্যায়ের মূর্খচিত কথা। ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন-
আর মূর্খেরা যেমন বলে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য- নাসূহের মতো তওবা কর; এটাই যদি হত তাহলে তো বলা দরকার ছিল-
تُوبُوا إلَى اللهِ تَوْبَةَ نَصُوحٍ
সেভাবে তো বলা হয়নি; বলা হয়েছে-
تَوْبَةً نَّصُوْحًا
(মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া, খ. ১৬, পৃ. ৫৯)
সূত্র: আল কাউসার।
এনটি