।।আদিয়াত হাসান।।
মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী (জন্ম: ১৯৪৮) একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস।
এছাড়াও তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মজলিসে শুরার সদস্য, যুক্তরাজ্যের জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন সহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক।
আরো পড়ুন- দাওয়াতুল হকের ইজতেমার ছবি নিয়ে সমালোচনা: যা বললেন মাওলানা মাহফুজুল হক
জন্ম ও বংশ
মাওলানা জিহাদী ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানাধীন ধুরুং গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রশীদ।
শিক্ষাজীবন
প্রাথমিক জীবনে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় তিনি কুরআনের হেফজ (মুখস্থ) সম্পন্ন করেন। হেফজ সমাপ্তির পর একই মাদ্রাসায় হেদায়াতুন্নাহু জামাত (মাধ্যমিক) পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৭৪ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন।
আরো পড়ুন- স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমেই বেশি হয় কেন ? বাঁচার উপায়
তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, মাওলানা শাহ আবদুল ওয়াহহাব, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা আহমাদুল হক, মাওলানা আবুল হাসান, মাওলানা মুহাম্মদ হামেদ, আল্লামা শাহ আহমদ শফীসহ প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তি।
কর্মজীবন
শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর পটিয়া থানাধীন কৈয়গ্রাম মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। উক্ত মাদ্রাসায় এক বৎসর শিক্ষকতার পর বাবুনগর মাদ্রাসায় আহুত হলে সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়ােজিত হন। বাবুনগর মাদ্রাসায় কয়েক বৎসর অধ্যাপনার পর ঢাকার আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদ্রাসায় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন।
আরো পড়ুন- ‘সোশ্যাল মিডিয়া গভীর ইলমী তাহকীকের জায়গা নয়’
এসময়ে তার পিতার মৃত্যুবরণের পর তিনি নিজ বাড়িতে চলে যান ও পুনরায় বাবুনগর মাদ্রাসায় যােগদান করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ জুলাই তিনি ঢাকা জেলার অন্তর্গত খিলগাঁও-এ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন। অদ্যাবধি তিনি এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
পাশাপাশি তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীর মজলিসে শুরা এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ও আমেলার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ১৯৭৮ সালে ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তিনি ‘ইসলামী আন্দোলন পরিষদ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় ছিদ্দিক আহমদের সাহচর্যে ছিলেন।
কাদিয়ানী বিরােধী আন্দোলন ও খতমে নবুয়ত আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ’র তিনি মহাসচিব। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন।
আরো পড়ুন- ছুটিতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দ্বীনমুখী করতে যে উদ্যোগ নিতে পারেন আলেম সমাজ
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তিনি বেশ কয়েকটি মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য:
জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন, যুক্তরাজ্য
আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া নূরুল উলুম কুমি
তাজবীদুল কুরআন মাদ্রাসা শাহনগর চট্টগ্রাম
আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম নূরনগর মশিউর নগর
অষ্টধার কোতােয়ালী মােমেনশাহী
দারুল উলুম নূরবাগ গােপালপুর টাঙ্গাইল
নূরুল কুরআন একাডেমী
রহমতবাগ মাদানিনগর ইত্যাদি
এছাড়াও তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাদ্রাসার পৃষ্ঠপােষকতা করছেন।
প্রকাশনা
তার রচিত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে রয়েছে :-
আখলাকে রাসূল সাঃ
উজ্জ্বল নক্ষত্র
কাদিয়ানী ফিতনা ও মুসলিম মিল্লাতের অবস্থান
কুরবানীর আহকাম
গুলশানে নুর
আসমানে ইলম কি চাঁন্দ দরখসান্দে সিতারে
তাজকেরায়ে খতীবে আজম
শেখ সাদীর রহ. এর উপদেশ ভান্ডার
কাদিয়ানের বহুরূপী ভন্ড নবী
নুকুশে জিন্দেগী ও পান্দে নামায়ে নছীর
কওমি মাদ্রাসা, উদ্দেশ্য পদ্ধতি ফলাফল ইত্যাদি
আজ সোমবার (২৯ নভেম্বর) বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। বরণ্যে এ আলেমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে আওয়ার ইসলাম পরিবার।
-কেএল