নুরুদ্দীন তাসলিম।।
বছর ঘুরে আবারও এলো শীত। রাজধানীতে শীতের লুকোচুরি খেলা দেখা গেলেও দেশের গ্রাম অঞ্চলে বেশ আগেই কড়া নেড়েছে শীত। লেপ-কাঁথা কম্বল নিয়ে বাড়তি প্রস্তুতি প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। শীতের কেনাকাটায় ব্যস্ত লোকজন।
নতুন নতুন বাহারি পোশাকে শীতকাল উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তের জন্য সুখের হলেও একেবারে বিপরীত চিত্র নিম্নবিত্তের পরিবারে। গ্রীষ্মকালে ভাঙ্গা ঘর, ফুটপাত ও বিভিন্ন স্টেশনে কাটিয়ে দিতে পারলেও শীতকাল তাদের জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ। তবে দেশের সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঋতু ঘটিত রোগ-ব্যাধি ও সমস্যায় অসহায়ের পাশে মানবিকতার আহবানে সাড়া দেন বিভিন্ন সেবা সংস্থা। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন দেশের আলেমদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সেবা সংস্থাগুলো। এবারো শীতের শুরুতেই অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। পুরো শীতকাল জুড়ে করবেন নানামূখী সহায়তা।
শীতার্তদের পাশে কাজ করা আলেম সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
বছরজুড়ে সারাদেশে অসহায়দের মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করে থাকে বাসমাহ ফাউন্ডেশন। শীতেও অসহায়দের মাঝে ব্যাপক বস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি রাখা হয়েছে এই সেবা সংস্থাটির অধীনে। এই শীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-সহ সারাদেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে বলে আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন সংস্থাটির দায়িত্বশীল মাওলানা আমিন মাহমুদ।
ইতোমধ্যে সিলেট, বরিশাল, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতার্তদের কাছে ছুটে গেছে হাফেজ্জী হুজুর রহ. সেবা ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির প্রধান দায়িত্বশীল মাওলানা রজিবুল হক বলেছেন, শীতার্ত মানুষ ছাড়াও মসজিদ মাদরাসাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক হারে শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সংস্থাটি।
শীতকালে গরীব অসহায় মানুষজন চাহিদা অনুযায়ী কাপড় পাচ্ছেন কি?
দীর্ঘদিন ধরে সেবা সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে আওয়ার ইসলামকে মাওলানা রজিবুল হক বলেছেন, রাজধানীসহ দেশের জেলা শহর গুলোতে শীতকালে অসহায় ও ছিন্নমূলের মানুষজন মোটামুটি চাহিদা মোতাবেক পেয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেন প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার মানুষজন। এছাড়াও মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছুটা অসহায় শিক্ষার্থীরাও এ বিষয়টিতে অবহেলিত থাকেন বলে ধারণা তার।
এদিকে পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (পিসব)- এর পরিচালক মাওলানা ইমরান হোসাইন হাবিবী বলেছেন, শীতকালে সেবা সংস্থাগুলোর বাইরেও বিভিন্ন, ব্যাংক, কারখানা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। তাই শীতার্তদের মাঝে চাহিদা অনুযায়ী শীতবস্ত্র পৌঁছে বলে ধারণা তারও।
তবে তিনি বলেছে, ‘বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে এমন ব্যাপক সহায়তা নজরে পড়ে না। দেখা যায় ঝড় ও বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে শুধু সেবা সংস্থা গুলোর সহায়তায়ই পৌঁছায়’।
‘শীতে অবশ্যই সহায়তা করতে হবে; তবে সহায়তার থেকে অসহায় মানুষদের কর্মক্ষম ও কর্মসংস্থান দেওয়াটা বেশি জরুরি ‘ বলে মনে করেন মাওলানা ইমরান হোসাইন হাবিবী।
‘এতে করে যাকে এই শীতে আমরা কাপড় দিচ্ছি পরবর্তীতে তাকে এই সহায়তাটা আর করতে হবে না, উল্টো দেখা যাবে কর্মসংস্থান হওয়ায় এ বছর যিনি শীতের কাপড় নিয়েছেন তিনি সামনের বছর হয়তোবা অন্য কাউকে শীতের কাপড় দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবেন’- বলেন তিনি।
অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ বছর শীতবস্ত্র বিতরণে কিছুটা ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে পিসব। ভিন্নধর্মী উদ্যোগের অধীনে অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখক মাদরাসাতে ৮ আইটেমের শীতবস্ত্র বিতরণ করবে সংস্থাটি।
শীতকাল সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী
শীতকাল সম্পর্কে হাদীস শরীফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শীতকাল মুমিনের জন্য বসন্তকাল। বসন্তকালে যেভাবে গাছগাছালি ও প্রকৃতি পত্রপল্লবে সমৃদ্ধ থাকে। পশুপাখি যত ইচ্ছা খেয়ে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। ঠিক তেমনি মুমিন শীতকালের দীর্ঘ রাতকে ইবাদতে কাটিয়ে এবং দিনকে রোজায় কাটিয়ে লাভ করতে পারে প্রভুত আত্মিক উন্নতি।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,“শীতকালের রোযা শীতল গনিমত!” সোম ও বৃহস্পতিবার এবং চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোযার বিষয়ে তো সহীহ বুখারী ও মুসলিমে হাদীস রয়েছে। এতে এক আমলে দুই সাওয়াব লাভ করা যাবে ইনশাআল্লাহ!!
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি ইরশাদ করেন, ‘শীতকালকে মারহাবা! এতে বরকতের ঝরণা ধারা বয়ে যায়! রাত দীর্ঘ হয় ‘কিয়ামুল্লাইলের’ জন্য! দিন ছোট হয় সিয়ামের জন্য!’
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তব রা. বলেন, ‘শীতকাল মুমিনের গনিমত’।
শীতকালে আল্লাহর শোকরিয়ার একটি অংশ হল, শীতের মৌসুমে সামর্থ্য অনুযায়ী শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এটি যেমন নৈতিক কর্তব্য তেমনি ঈমানী দায়িত্ব। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দেশে। এখানে বহু সংখ্যক লোক শীতে কষ্ট পায়। তাই এ দায়িত্ব পালন করা আমাদের উপর অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের পরে এবং পূর্বেও নিজেকে আর্তমানবতার কাজে নিয়োগ করেছেন।
এটি