বেলায়েত হুসাইন।।
আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীরা কিছু খেতে পারবে না এবং এসময় তারা মাছ, তরিতরকারি বা এজাতীয় কোন কিছু কাটাকাটিও করতে পারবে না। এসময় কিছু খেলে কিংবা কাটাকাটি করলে নাকি গর্ভস্থ সন্তানের বিকলাঙ্গ হওয়ার অথবা যেকোনও ক্ষতির আশংকা থাকে। এ দু‘টি ধারণাই অমূলক ও কুসংস্কার। ইসলামি শরিয়তে এরকম বিশ্বাসের কোনও সুযোগ নেই।
ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের মানুষের বিশ্বাস ছিল, জগতের বৃহৎ কোন পরিবর্তনের কারণে চাঁদ এবং সূর্যের গ্রহণ লাগে। যেমন বড় কারও জন্ম, মৃত্যু কিংবা দুর্ভিক্ষের আগমন ইত্যাদির কারণে প্রকৃতিতে এমনটি ঘটে। তবে আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের এ ভুল বিশ্বাস খণ্ডন করে বলেন, ‘সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ কারো জন্ম-মৃত্যুর কারণে হয় না; এগুলো আল্লাহর নিদর্শনাবলির দুটি নিদর্শনমাত্র। যখন তোমরা তা (সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ) দেখবে তখন নামাজে নিমগ্ন হবে।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস: ১০৪২, মুসলিম শরিফ, হাদিস: ৯১৪।-হাদিস দু‘টির ব্যাখ্যা লক্ষণীয়)
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় কি করা উচিৎ-এ ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় একবার সূর্যগ্রহণ হল। তখন তিনি লম্বা কেরাত ও লম্বা রুকু-সিজদার মাধ্যমে নামাজ আদায় করলেন। অতপর বললেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলির দুটি নিদর্শনমাত্র। কারও মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। যখন তোমরা তা দেখবে তখন বেশি বেশি আল্লাহকে ডাকবে (দুয়া করবে), বেশি বেশি তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলবে, নামাজ পড়বে এবং সদকা করবে।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস: ১০৪৪)
মুসলিম শরিফের ৯০১ নম্বর হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা সূর্যগ্রহণ দেখবে তখন তা শেষ হওয়া পর্যন্ত বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করবে।’
অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় একজন প্রকৃত মুমিনের কর্তব্য হল, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ দূরীভূত হওয়ার আগপর্যন্ত নামাজ, জিকির, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নেক আমলের মধ্যে মশগুল থাকা। গর্ভবতী নারীদের জন্যও একই করণীয়। প্রচলিত রেওয়াজের কোন ভিত্তি নেই।
এনটি