রাজধানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলায় যে ৫ জনকে আসামি করা হয়েছিল তাদের সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ মামলার রায় দেওয়ার পর আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, ‘৭২ ঘণ্টা পরে পুলিশ যেন কোনো ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়’। আদালতের এমন পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভ ঝাড়ছেন। রাজধানীতে কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রত্যাহার করা হয়েছে এমন পর্যবেক্ষণ দেওয়া বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারকে।
ধর্ষণের ঘটনায় মামলার ক্ষেত্রে সময়ের বাধ্যবাধকতার যৌক্তিকতা ও এ বিষয়ে ইসলামি পর্যবেক্ষণ নিয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার ইফতা বিভাগের প্রধান মুফতি হিফজুর রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রতিবেদক নুরুদ্দীন তাসলিম।
রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণার সময় আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়। এ বিষয়ে ইসলামি পর্যবেক্ষণ কী?
মুফতি হিফজুর রহমান: কেউ অন্যায়ের শিকার হলে তিনি ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দারস্থ হবেন।আদালতে মামলা করার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী তার সুযোগ-সুবিধা, সময় সবকিছু বিবেচনা করে মামলা করবেন, এক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া ইসলাম কখনো সমর্থন করে না।
এখানে ৭২ ঘন্টা অথবা এর থেকে কম বা বেশি সময়ের সীমাবদ্ধতার কোন যৌক্তিকতা ইসলামে নেই।
শরীয়তের দৃষ্টিতে যেসব শর্ত পাওয়া গেলে অপরাধ সাব্যস্ত হয় তা এক্ষেত্রে সেসবের উপস্থিতি পেলে ভুক্তভোগী তার সুযোগ মতো চাইলে ১৫ দিন, এক মাস, ৬ মাস যেকোনো সময় মামলা করতে পারেন।
মামলা করার ক্ষেত্রে অনেক সময় হয়তোবা সামাজিক লজ্জা, হয়রানি বিভিন্ন কারণেই দেরি হতে পারে। তাই এখানে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
ইসলামে ধর্ষণের শাস্তির বিষয়টি নিয়ে যদি বলতেন?
মুফতি হিফজুর রহমান: জেনা বাংলাতে যাকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণের সংজ্ঞাটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ বলতে গেলে এভাবে বলতে হয়; ভুক্তভোগীর অসম্মতিতে জোরপূর্বক তার ইজ্জতহানি করা। দু’জনের সম্মতিতে হয়ে থাকলে একে ধর্ষণ বলা হয় না; তবে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে উভয়টি জেনার সংজ্ঞার আওতাধীন, এক্ষেত্রে নারী অথবা পুরুষের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে অপরাধ সাব্যস্ত হতে হবে অথবা চারজন পুরুষের প্রত্যক্ষ সাক্ষী লাগবে। এই পন্থায় অপরাধ সাব্যস্ত হলে অপরাধীকে অবশ্যই তার কৃতকর্মের সাজা ভোগ করতে হবে।
ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণের মাধ্যমে অপরাধীর অপরাধ প্রবণতার সুযোগ বাড়ল বলে মনে করেন কি?
মুফতি হিফজুর রহমান: ৭২ ঘন্টার পরে মামলা না নেওয়ার যে নির্দেশনার কথা বলা হলো; এতে করে অবশ্যই অপরাধীর দৌরাত্ম্য আরো বেড়ে যাবে। তারা আরো বেশি সাহস পাবে অপরাধ করার। তাই স্পর্শ কাতর এই বিষয়টিতে সময়ের এমন আবদ্ধতা অযৌক্তিক ও ন্যায়-নীতির পরিপন্থী।
ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীর আইনি প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতার মুখোমুখি হওয়ার কথা শোনা যায়। মামলার ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণের এ পর্যবেক্ষণ ন্যায়বিচারের দৃষ্টিতে কতটুকু সংগত?
মুফতি হিফজুর রহমান: সামাজিক চাপ, মান-সম্মানের ভয়, বোঝাপড়ার সমস্যা, সবকিছু মিলিয়ে মামলা করতে দেরি হতে পারে ভুক্তভোগীর। তাই মামলার ক্ষেত্রে সময়ের বাধ্য-বাধকতা ভুক্তভোগীর অধিকার খর্ব হিসেবেই গণ্য করা হবে। এতে তার হয়রানিই বাড়ল ভুক্তভোগীর।
‘ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়’- এ বিষয়ে কী বলবেন?
মুফতি হিফজুর রহমান: ‘আদালত পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। পুলিশ যেন ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর কোনো ধর্ষণের মামলা না নেয়’।- আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে বিভিন্নভাবে অপরাধ শনাক্ত করা সহজ হচ্ছে , তবে প্রযুক্তির মাধ্যমেও যদি বিষয়টি সহজে সমাধান করা সম্ভব না হয়; তাহলে ভিন্ন পন্থা অবলম্বর করা যেতে পারে; অথবা এক্ষেত্রে ইসলামী যে বিধান আছে তা প্রয়োগের মাধ্যমেও ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সুগম করা যেতে পারে। এখানে সময়ের বাধ্যবাধকতা ন্যায় বিচার পাওয়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করবে। তাই এমন সময় নির্ধারণ কোনভাবে সঙ্গত ও যৌক্তিক পন্থা হতে পারে না। এ বিষয়ে ইসলামি আইনের কিতাবাদিতে বিস্তারিত আলোচনা আছে। সেখান থেকেও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুন: ‘ইসলামে যৌতুক বলে কিছু নেই, মোহরের ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ির সুযোগ নেই’
এটি