জুলফিকার জাহিদ।।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বর্তমানে দেশের জাতীয় সমস্যাগুলোর অন্যতম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ এখন দিশেহারা। অধিকাংশ নিত্যপণ্যের মূল্যই এখন নিম্ন-আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্য হরদম বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। সেই সাথে গাড়ি ভাড়া নিয়ে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য।
ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ বলে মানে করেন বিশ্লেষকগণ। তাদের মতেএক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ। সরকারও বিভিন্ন সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য এসব ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটকেই দায়ী করেছে।
ইসলাম অধিক মুনাফার লোভে মজুদদারি নিষিদ্ধ করেছে। মজুদদারের ঘৃণ্য মানসিকতার নিন্দা করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মজুদদার কতই না নিকৃষ্ট! দ্রব্যমূল্য হ্রাসের খবর তার কাছে খারাপ লাগে; আর মূল্যবৃদ্ধির খবরে সে আনন্দিত হয়।’
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন,, বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতিতে আমরা বারবার এসব নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীলদের আহ্বান জানিয়ে আসছি; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দিনদিনমধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। মাছ দোষ গোস্ত দূরের কথা শাকসবজি পাতে পাওয়াও দূরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য।
খাদ্যদ্রব্য মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরির যে অভিযোগ বারবার উঠে আসছে এ বিষয়ে তিনি বলছেন, ইসলামে এমন মজুতদারী পুরোপুরি নিষিদ্ধ ও অবৈধ কাজ।
তিনি বলেন, অর্থনীতির মূলনীতি হলো বস্তুর চাহিদা অনুযায়ী বস্তু বাজারে পাওয়া না গেলে তার দাম অটোমেটিক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাজারে যেসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে কেউ যদি এই পণ্যের চাহিদার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় এবং মজুদ করে রাখে তাহলে এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয় এবং ইসলাম কখনই তা সমর্থন করে না।
তিনি আরো সংযোগ করেন, রাসূল সাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম হাদিসে বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন ডে সহজে ক্রয় করে এবং সহজে বিক্রি করে। তাই বেচাকেনার ক্ষেত্রে সহজতা কাম্য এক্ষেত্রে মজুদ ও মূল্যবৃদ্ধি সঠিক পন্থা নয় বলে মন্তব্য করেন এই ইসলামী চিন্তাবিদ।
ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব দেশের সর্বস্তরের মানুষের উপর পড়ে। ব্যবসা তো কেবল ব্যবসা না, ব্যবসা একটি সেবাও। তাই ব্যবসায়ীরা যদি সেবার মনোভাব রাখেন আর প্রশাসন যদি বাজারে পণ্যের প্রবাহ ধরে রাখতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় তাহলেই দেশের মানুষ স্বস্তি ও শান্তি পাবে।
এনটি