নুরুদ্দীন তাসলিম।।
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়লেও প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিন দিন ধরে ধর্মঘটের মুখে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ এবং বাস মালিকদের দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
এতে করে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ল বলে মনে করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
‘গত দুইদিন জনগণকে জিম্মি করে যারা ভোগান্তির মুখোমুখি করেছে। পরীক্ষার দিনে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপে ফেলেছে তাদেরকেই পুরস্কার দিল সরকার’ আওয়ার ইসলামকে বলেন তিনি।
তিনি মনে করেন, ‘জনগণের পক্ষে এবং স্বার্থের সরকার নেই বলেই জনগণের এমন দুর্ভোগ। এসব দেখার আদৌ কেউ নেই’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৬ নভেম্বর) ভার্চুয়ালি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি ও পাচার রোধে ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
‘পাচার রোধের খেসারত কি তবে জনগণের পকেট থেকে’
মন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘মন্ত্রীর বক্তব্য শুনে মনে হল পাচার রোধে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। পাচার রোধের খেসারত হিসেবে যদি জনগণের পকেট কাটার আয়োজন হয়, তাহলে বিজেবি পুলিশসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীল যারা রয়েছেন তারা কি করছেন?’ প্রশ্ন করেন তিনি।
তিনি আরো বলেছেন, পাচার রোধে যদি দাম বাড়ানোর মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে কি আমরা ধরে নেব দেশের পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে’?
এই ইসলামী রাজনীতিবিদের মতে, তিনদিনের ধর্মঘটের মুখে সরকার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও বাস মালিকদের দাবি মেনে নিয়েছেন, এতে করে সরকার এক ধরনের আত্মসমর্পণ করল’।
‘ভাড়া বৃদ্ধিতে সরকারই লাভবান’!
‘এছাড়া পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও বাস মালিক সমিতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা আছেন তারা সরকার পক্ষীয় লোক। এর দায়িত্বশীলদের দিকে লক্ষ করলেই আপনি বিষয়টি বুঝতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলছেন, এসব দাম বৃদ্ধিতে সরকারেরই লাভ। তাই জনগণের কথা চিন্তা করবে কেন সরকার?- বলছিলেন মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
দুর্ভোগ বাড়ল জনগণের
খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমীও মনে করেন ২৭% ভাড়া বৃদ্ধির কারণে জনগণের ভোগান্তিই বাড়লো।
২৩% জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি সামনে যেহেতু এসেছে তাই সমন্বয় করে সমপরিমাণ ভাড়া বাড়ানো যেতে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলছেন, সরকার পরিবহন মালিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তার মতে, যতদিন পর্যন্ত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হবে, ততদিন জনগণকে এসব দুর্ভোগ বইয়ে বেড়াতেই হবে। তাদের পক্ষে কথা বলার মত কেউ নেই। অথবা থাকলেও তাদের কথা বলার কোন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ দাম বাড়ানো হয়েছে এ বিষয়ে মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেছেন, করোনার সময় যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছিল; তখন কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানো হয়নি তাই এসব জনগণকে বুঝ দেওয়ার জন্য এক ধরনের অজুহাত বলে মনে করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ এবং বাস মালিকদের দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সারা দেশে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা হচ্ছে। আর মহানগরীতে বিভিন্ন রুটের বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সার থেকে বেড়ে হচ্ছে ২ টাকা ১৫ পয়সা। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ২ টাকা ৫ পয়সা।
এই হিসাবে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ এবং ঢাকায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ছে। বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে যেসব গাড়ি সিএনজিতে চলে সেসবের ভাড়া বাড়বে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।
এটি