আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইসলাম একজন নারীকে মর্যাদা দিয়েছেন। তার সম্মান রক্ষার্থে তাকে তার সম্পদের যথাযথ অংশীদার করেছেন। তার দায়িত্ব একেক সময় একেক জনের কাছে রেখেছেন। সর্বোচ্চ মর্যাদা দিতে তাকে কখনো মা কখনো স্ত্রী কখনো কন্যা হিসেবে মর্যাদাবান করেছেন। কুরআনে স্ত্রী হিসেবে অনেক সম্মান করা হয়েছে। কখনো তাকে জোড়া, কখনো অর্ধাঙ্গীনি বলে উল্লেখ করেছেন।
১. জোড়া (সূরা রুম ২১)
২. গায়ের পোষাক (বাকারা ১৮৭)
৩. কল্যাণের উৎস (নিসা ১৯)
৪. প্রশান্তি (রুম ২১)
৫. সর্বোত্তম ভালোবাসা ( বুখারী ৩৬৬২)
৬. পাঁজরের বাঁকা হাড্ডি (বুখারী ও মুসলিম)
৭. সর্বোত্তম সম্পদ (আল হাদিস)
৮. চারিত্রিক সার্টিফিকেট (রিয়াদুস সালেহীন)
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল করিমে বলেন, ‘তারা তোমাদের আবরণ এবং তোমরা তাদের আবরণ।’ (সুরা: ২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)। ‘আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে বসবাস করো সদাচারের সাথে। আর যদি তোমরা কোনো কারণে তাদের অপছন্দ করো, তাহলে হয়তো তোমরা এমন একটি বস্তুকে অপছন্দ করলে, যাতে আল্লাহ তায়ালা প্রভুত কল্যাণ রেখেছেন। (সূরা নিসা : ১৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে অন্যতম হলো তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জন্য সঙ্গী জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি লাভ করো এবং তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।’ (সুরা: ৩০ রুম, আয়াত: ২১)
আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীকে অপছন্দ না করে।’ (সহিহ মুসলিম: হাদিস-১৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজা : হাদিস-১৯৭৯)
রাসূল সা: যখন ঘরে যেতেন, স্ত্রীদের সাথে ঘরের কাজে শরিক হতেন। তাদের সাথে সদাচার করতেন। স্ত্রীদের সাথে খোশগল্প করতেন। তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। রাসূল সা: কখনো কোনো স্ত্রীকে প্রহার করেননি। তিনি যখন তাহাজ্জুদের সময় উঠতেন, তখন খুব আস্তে দরজা খুলতেন, যাতে ঘরের লোকদের ঘুমে ব্যাঘাত না হয়। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ করো।’
(তিরমিজি : হাদিস-১১৬৩)
রাসূল সা: তার স্ত্রীর সাথে খেলাধুলা করতেন। হাদিস শরিফে আছে, ‘রাসূল সা: হজরত আয়েশা রা:-এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন’। আয়েশাকে নিয়ে মসজিদে তিনি আবিসিনিয়দের খেলা দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন যার চরিত্র সুন্দর, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (রিয়াদুস সালিহীন ১/১৯৭)
হজরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স) বলেছেন, তাদের ওই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করে। স্ত্রীর প্রতি ব্যবহারে তোমাদের মধ্যে আমি উত্তম। যখন তোমার সঙ্গীর মৃত্যু হয়, তাকে ত্যাগ কর। (তিরমিজী)
হজরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, কোনো বিশ্বাসী স্বামী কোনো বিশ্বাসিনী স্ত্রীকে ঘৃণা করবে না। তার একটি দোষ পেলে, অন্য গুণের কারণে তাকে ভালোবাসবে। (মুসলিম)
হজরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স) বলেছেন, বিশ্বাসীদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাসের অধিকারী এ ব্যক্তি যার স্বভাব-চরিত্র তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম। তোমাদের মধ্যে সে উত্তম যে তার স্ত্রীর প্রতি ব্যবহারে উত্তম। (মিশকাত)
আম্র ইব্নু ‘আস (রা.) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, ‘আয়িশাহ্! আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, তাঁর পিতা (আবূ বাক্র)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোন লোকটি? তিনি বললেন, ‘উমার ইব্নু খাত্তাব অতঃপর আরো কয়েকজনের নাম করলেন। (সহিহ বুখারী-৩৬৬২)
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বেশী বাঁকা হল তার উপরের অংশ। যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই তোমরা নারীদের জন্য মঙ্গলকামী হও।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘মহিলা পাঁজরের হাড়ের মত। যদি তুমি তাকে সোজা করতে চাও, তবে তুমি তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তুমি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তাহলে তার এ বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে।’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, মহিলাকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে কখনই একভাবে তোমার জন্য সোজা থাকবে না। এতএব তুমি যদি তার থেকে উপকৃত হতে চাও, তাহলে তার এ বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে। আর যদি তুমি তা সোজা করতে চাও, তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর তাকে ভেঙ্গে ফেলা হল তালাক দেওয়া। (বুখারী ও মুসলিম) (সহীহুল বুখারী ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬, ৬০১৮, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮)
-এটি