নুরুদ্দীন তাসলিম।।
ইসলামী দলগুলোর বিএনপি জোট ছাড়া নিয়ে সম্প্রতি দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। সাক্ষাৎকারের দেওয়া তার বক্তব্য বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে ইসলামী রাজনীতি ও সচেতন মহলে।
ইসলামী রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে শাহজাহান ওমরের কোন ভদ্র সুশীল রাজনীতি চর্চাকারীর শব্দ হতে পারে না।
এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চলতি বছরের জুলাইয়ে বিএনপি জোট ছেড়ে আসা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া।
আওয়ার ইসলামকে তিনি বলেছেন, ‘প্রথমত আমি শাজাহান ওমরকে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধী মনে করি। তিনি যে শব্দ ব্যবহার করেছেন তা শিষ্টাচার ও সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন রাজনৈতিক নেতার হতে পারে না’।
তিনি আরো বলেন, ‘বক্তব্য দাতা বাংলাদেশে তেমন পরিচিত রাজনৈতিক পর্যায়ের কেউ নন, মূলত আলোচনায় আসার জন্যই এসব বক্তব্য দিয়েছেন তিনি’।
তার ভাষ্য, ‘রাজনীতিতে জোট স্থায়ী কোনো বিষয় নয়, আমরা জোটে গিয়েছি আবার প্রয়োজনে জোট ছেড়ে দিয়েছি, তার এমন বক্তব্য অবান্তর’।
আরো পড়ুন: স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে কতটা আগ্রহী ইসলামী দলগুলো?
‘এমন বক্তব্যের পর বিএনপি'র দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া ও প্রতিবাদ জানানো আবশ্যক বলে মনে করেন তিনি। অন্যথায় বিএনপি প্রধান দায়িত্বশীলরাও এমন মনোভাব পালন করেন বলে আমরা মনে করব’- উল্লেখ করেন মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া।
সদ্য ও সর্বশেষ বিএনপি জোট ছেড়ে আসা খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমীও চটেছেন শাহজাহান ওমরের বক্তব্যে।
তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, ‘হীনমন্যতা থেকেই শাহজাহান ওমর এ বক্তব্য বলে আমরা ধরে নেব। রাজনীতিতে স্বভাবতই কেউ জোট করবেন আবার জোট থেকে বেরিয়ে আসবেন এ নিয়ে এমন অশালীন বক্তব্যের কারণ কি তা আমরা বুঝতে পারি না’।
তিনি বলছেন, ‘দেখুন যতদিন বিএনপি জোটের মধ্যে দলগুলো ছিল; ততদিন তাদের এমন মন্তব্য আসেনি। ছেড়ে আসার পরেই তারা এমন মন্তব্য করতে শুরু করেছে। এ বক্তব্য পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছু নয়’।
তিনি আরো বলেন, ‘ইসলামী দলগুলো বিএনপি জোটের মধ্যে থাকার কারণে তারা নির্বাচনে সবসময় ইসলামপন্থীদের ভোটের সুবিধা পেত এই বিষয়টি তাদের ভুলে গেলে চলবে না’।
মাওলানা আহমদ আলী কাসেমীর মতে, ‘জোটের অধীনে থাকা সব থেকে বড় দল হিসাবে অন্যান্য দলগুলোকে পরিচালনার যে যোগ্যতা থাকা দরকার তা বিএনপির মধ্যে নেই বললেই চলে’।
মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া মত মাওলানা আহমদ আলী কাসেমীও মনে করেন শাহজাহান ওমরের এ বক্তব্যের পর বিএনপি'র কেন্দ্রীয় পর্যায়ে থেকে এর প্রতিবাদ জানানো আবশ্যক, অন্যথায় একে দলীয় বক্তব্য ও মনোভাব হিসেবে গণ্য করা হবে।
একই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ২০১৬ সালে বিএনপি জোট ছেড়ে আসা ইসলামী ঐক্যজোট।
দলটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসাইন আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘শাহজাহান ওমর শুধু সাম্প্রতিক সময়ে নয় বরং চারদলীয় জোট গঠন হওয়ার পর থেকেই তিনি এমন অশালীন মন্তব্য করে আসছেন,তার কার্যকলাপ আগে থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। দেশে ইসলামবিদ্বেষী মহল হিসেবে যারা পরিচিত এই শাহজাহান ওমর তাদের একজন’ বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘এসব মূলত তারা এক ধরনের হতাশা থেকেই করছে। তবে এতে ইসলামী দলগুলো কোন ধরনের ক্ষতির হবে না বরং তারা নিজেরাই সর্বমহলে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা হারাবে’।
আরো পড়ুন: ‘শুধু ভালো ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার প্রয়োজন’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে ‘চারদলীয় জোট’ গঠন করেছিল বিএনপি। পরে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বেরিয়ে গেলে যুক্ত হয় নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নতুন ১২টি দলের সংযুক্তির মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চারদলীয় জোট কলেবরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দলীয় জোটে। এরপর জোটের পরিধি দাঁড়ায় ২০ দলে।
বিএনপি-জোটে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ভাঙ্গন শুরু হয়। ওই সময় জোট ত্যাগ করে শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারিতে বিএনপির সঙ্গে প্রায় দুই যুগের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ইসলামী ঐক্যজোট।
২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের পর ১৬ অক্টোবর জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও খন্দকার গোলাম মোর্তুজা নেতৃত্বাধীন এনডিপি বেরিয়ে যায়।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর জোট ত্যাগ করেন বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ।
চলতি বছরের ১৪ জুলাই জোট ত্যাগ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।
সর্বশেষ শুক্রবার (১ অক্টোবর) বিএনপি জোট ত্যাগ করে খেলাফত মজলিস।
আরো পড়ুন: করোনা পরবর্তী রাজনীতি: কতটা মাঠে গড়াবে ইসলামী দলগুলো?
এটি