প্রথম ধাপের স্থগিত ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন হয়েছে গত (সোমবার) ২০ সেপ্টেম্বর। এই নির্বাচনে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের আজিমপুর এলাকায় বিজয়ী হয়েছেন উম্মুল মাদারিস খ্যাত ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার ফারেগ স্বতন্ত্রপার্থী কারী মাওলানা জাহাঙ্গীর।
হাটহাজারী মাদরাসা ছাড়াও তিনি পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রামের আরেক ঐতিহ্যবাহী ইলমী বিদ্যাপীঠ জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায়। নিজ এলাকার একটি মাদরাসা থেকেই শুরু হয়েছিল তার শিক্ষা জীবন।
আপাদমস্তক সুন্নতে নববীকে ধারণ করা এক মাওলানার বিজয়ে উচ্ছ্বসিত সন্দ্বীপের আজিমপুর এলাকার মানুষজন। মাওলানাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ থেকে নিয়ে সব পেশা-শ্রেণীর মানুষ। নিজের এলাকায় একজন আলেমকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে পেয়ে আপ্লুত তারা।
আপেল মার্কায় বিজয়ী স্বতন্ত্রপার্থী মাওলানা জাহাঙ্গীর ছাত্র জীবন থেকেই ইসলামী আন্দোলনের রাজনীতির সাথে জড়িত। এক সময় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের অর্থ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এবার প্রথম ধাপের স্থগিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে পেয়েছেন নিজ এলাকার মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন। হয়েছেন বিজয়ী।
নির্বাচন, রাজনীতি ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের সাব-এডিটর নুরুদ্দীন তাসলিম।
ইউপি নির্বাচনে নিজের এলাকার মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পেলেন বিষয়টাকে কতটা উপভোগ করছেন?
আলহামদুলিল্লাহ। সাধারণ জনগণ আলেমদেরকে নির্বাচনে এতটা মূল্যায়ন করবে ভাবতেও পারিনি। এলাকার সব শ্রেণীর মানুষ সমর্থন দিয়েছেন, বিজয়ে খুশি হয়েছেন, সব কিছুই আল্লাহ তায়ালার বিশেষ দান। মানুষের এই ভালোবাসার সঠিক মূল্যায়ন যেন করতে পারি আল্লাহ তায়ালার কাছে এখন এটাই চাওয়া।
বিগত কয়েক ইউপি নির্বাচনে আলেমদের বিজয়ী হওয়ার খবর দেখা গেছে, সাধারণের সাথে আলেমদের সম্পৃক্ততা বাড়ার কারণে এমন হচ্ছে নাকি মানুষের রুচিবোধ বদলেছে এতদিনে?
আলেমরা সবসময় জনসম্পৃক্তা বজায় রেখেছেন। এর ধরণ হয়তোবা একেক সময় একেক রকম ছিল। সব থেকে বড় ব্যাপার হলো; বর্তমানে মানষের রুচিবোধ পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ তারা বার বার দেখেছেন যাকেই নির্বাচিত করা হয়; সবাই লুট-পাট করে খেয়ে নিজেরা আঙুলফুলে কলাগাছ হচ্ছে। নির্বাচনের পরে তারা সাধারণ জনগণকে আর চিনে না। এজন্য জনগণ এখন দেশের একনিষ্ঠ খাদেম ওলামায়ে কেরামকে প্রতিনিধি বানাচ্ছেন।
নিজের বিজয়ী এলাকার জন্য আপনার প্রতিশ্রুতিগুলো কী কী?
১) সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক, ইভটিজিংসহ সকল ধরনের অন্যায় নির্মূল করা।
২) গরিবদের অধিকার নিশ্চিত করা।
৩) এলাকার ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা বিষয়ে খেয়াল রাখব যাতে কেউ কোন কারণে ঝরে না পড়ে।
৪)অত্র এলাকার জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সকল বাজেট জনগণের কাজেই খরচ করার প্রত্যয়।
মসজিদ মাদ্রাসার বাইরে একেবারে নতুন পরিবেশ, কতটা প্রতিকূল বা অনুকূল মনে হয়েছে?
নতুন পরিবেশে কিছুটা আড়ষ্ঠতা তো থাকেই। তবে নিজের মধ্যে প্রত্যয় ছিল মানুষকে নিয়ে কিছু করার, মানুষের মাঝে সেবা পৌছে দেওয়ার। অলহামদুলিল্লাহ; যে হারে মানুষের উচ্ছ্বাস দেখেছি, পরিবেশ পুরোই অনুকূলে মনে হয়েছে ।
আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মূলধারার রাজনীতিতে আলেমদের অবস্থান তৈরির সম্ভাবনা কতটুকু?
রাজনীতিতে ওলামায়ে কেরাম পূর্বেও সংযুক্ত ছিলেন; এখনো আছেন, ভবিষ্যতে আরো জোরালো ভূমিকা রাখবেন। বর্তমান অবস্থা থেকে অন্তত তাই মনে হয়েছে।
তরুণ আলেমরা বর্তমানে খেদমতের পাশাপাশি ভিন্ন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন, তাদের জন্য আপনার বিশেষ কোনো পরামর্শ?
সমাজের সকল স্তরে যদি ওলামায়ে কেরাম যুক্ত হন তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সমাজে শান্তি সহজে প্রতিষ্ঠিত হবে। এজন্য আমি বলবো ওলামায়ে কেরাম খেদমতের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হওয়া প্রয়োজন এবং দৃঢ়তার সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত ।
আওয়ার ইসলামকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
আপনাদেরও ধন্যবাদ ।
-কেএল/এএ