শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ইখলাস না থাকলে পাহাড় পরিমাণ কাজেও ফায়দা নেই: আল্লামা আরশাদ মাদানি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লিআলা রাসূলিহীল কারীম। যখন মানুষ মারা যায় তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল বাকী থাকে। এক. সদকায়ে জারিয়াহ। দুই. নেক আমল। তিন. নেক সন্তান।

মূলত আজকের দিনটি একটি দোয়ার দিন। আমরা এই মসজিদ ও মাদরাসার জন্য দোয়া করার উদ্দশ্যে এসেছি । মসজিদ ও মাদরাসা আবাদকারীদের জন্য আমরা সবাই দোয়া করবো। যাতে এই মসজিদ মাদরাসা আল্লাহ তায়ালা চিরদিন টিকিয়ে রাখেন।

আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেনো এ মসজিদকে ছহী তরিকায় আবাদ করেন। আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো মানুষকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন। যখন কোনো মানুষের সৃষ্টি হয়। তখন তার রিযিক দিয়েই তাকে সৃষ্টি করা হয়। তার নাম পঞ্চাশ হাজার বছর আগে লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়ে। সে কি দুনিয়াতে ধনী হয়ে জীবন-যাপন করবে? নাকি ফকীর হয়ে জীবন-যাপন করবে?

দেখা যায় পৃথিবীতে কেউ অনেক টাকার মালিক। আবার কেউ পথের পথিক। আল্লাহ কাউকে কোটি কোটি টাকার মালিক বানিয়ে দেন। আবার কাউকে ফকীর বানিয়ে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, দুনিয়া হলো পরীক্ষার জায়গা।

সুতরাং দুনিয়ার সবকিছুতেই পরীক্ষা করা হয়। কাউকে ধনী বানিয়ে পরীক্ষা করা হয়। আবার কাউকে ফকীর বানিয়ে পরীক্ষা করা হয়। কারো দ্বারা ভালো কাজ করিয়ে পরীক্ষা করা হয়। আল্লাহ তায়ালা দেখেন যে আমার বান্দা কি আমার সন্তুষ্টির জন্য ভালো কাজ করেছে নাকি মানুষকে দেখানোর জন্য করেছে।

সে কি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে নাকি মানুষের শুকরিয়া করে। যদি কোনো বদনসীব বা কোনো বদবখত মনে করে যে আমি এই কাজ করেছি।

মানুষ আমাকে ভালো বলবে। মোটকথা যে মানুষের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে। সে হলো দূর্ভাগা। হতভাগা। বরং সদা সর্বদা মনে করতে হবে এটা আল্লাহর তৌফিক। মানুষ ভুলে যায় এটা যে আল্লাহর অনুগ্রহ। তার উপর আল্লাহর দয়া। সেটা সে বেমালুম ভুলে যায়।

পৃথিবীর কোনো মানুষ কখনো সফল হতে পারবে না। যদি না তার সাথে আল্লাহর তৌফিক না থাকে। আর যদি মানুষের সাথে আল্লাহর তৌফিক থাকে তাহলো সে পূর্ণাঙ্গ সফল ও স্বার্থক হতে পারবে।

হে মানুষ! তুমি যখন কোনো ভালো কাজ করো তখন এটা মনে করোনা যে তা তোমার দেমাগ দ্বারা অর্জন করেছো। বরং তোমার দেমাগ আমি (আল্লাহ) দিয়েছি। তোমার শক্তি আমি দিয়েছি। তোমার হাত আমি দিয়েছি। তোমার ব্রেন আমি দিয়েছি। তুমি এসব দ্বারাই সবকিছু করেছো।

সুতরাং তুমি যা কিছু করছো তা আমিই তোমাকে দিয়েছি। আজ তুমি মনে করছো যে যা আমি কামাই। আমি যা বানিয়েছি কিংবা নির্মাণ করছি তা আমি মায়ের পেট থেকে নিয়ে আসছি।

এমনটা মনে করার কোনো সুযোগ নেই। বরং সব কিছু আমি দিয়েছি। সবসময় তোমার এটাই মনে করতে হবে। এজন্য কুরআনের মাঝে আছে, হে লোকসকল! তোমাদের মাল থেকে তোমরা আল্লাহর জন্য খরচ করো। যা আমি তোমাদের দিয়েছি।

শায়খুল হিন্দ রহ. এই আয়াতের তরজমা করেছেন, তোমাকে এ মালের প্রতিনিধি বানানো হয়েছে। তুমি এর মালিক নও। বরং মালিকতো মহান আল্লাহ তায়ালা। যিনি মালিক তিনি তোমাকে দুনিয়া দিয়েছেন আবার চাইলে মুহূর্তে দুনিয়া ছিনিয়ে নিতে পারেন। এই জন্যে বলেন, তোমাদের দুনিয়ার খলীফা বা নায়েব বানানো হয়েছে। একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেহ মালিক নেই।

সুতরাং তোমাদের যিনি নায়েব বানিয়েছেন তার পথে তোমরা মাল খরচ করো। এই জমিনের মালিক যিনি। (হাজী আব্দুস সাত্তার কওমী মাদরাসা-মসজিদ) তিনি চিরদিন থাকবেন না। আমরা কেউ থাকবো না। জমিনের মালিক মারা যাবে। অন্য কেহ মালিক হবে। মালিকের পরিবর্তন হবে। কিন্তু এই জমিন থেকে যাবে।

এই জমিন কখনো শেষ হবে না। কেয়ামাত পর্যন্ত এই জমিন চলবে। অতএব যে এই দুনিয়াকে আখেরাত আবাদ করার জন্য খরচ করে সে ইনসান কামিয়াব। কেয়ামাতের দান আল্লাহ তায়ালা ধনওয়ালাকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাকে আমি ধন সম্পদ দিয়েছিলাম।

তুমি এর দ্বারা কি খেদমত করেছো। তিনবার এ প্রশ্ন করা হবে । সে তখন উত্তর দিবে তুমি যা দিয়েছো। আমি তার চেয়ে অনেক বেশি গুণ রেখে সম্পদ বানিয়ে রেখে আসছি। কোনো ভালো কাজ করিনি। সে তখন আফসোস করতে থাকবে। কিন্তু তখন তার আফসোস কোনো কাজে আসবে না।

মোটকথা দুনিয়া হলো ইমতেহানের জায়গা। দুনিয়ার সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত। যে হজ্ব করে। এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির হজ্ব করে। সে সফলকাম। যে খরচ করে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খরচ করে। সে সফলকাম। যে জান্নাত আবাদ করে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আবাদ করে। সে কামিয়াব।

তাই জান্নাত আবাদের জন্য দুটি কাজ করুন। ১. খরচ করুন। ২. আল্লাহর জন্য খরচ করুন। আর যে কোনো কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি জরুরি। ইখলাস আবশ্যক। ইখলাসের সাথে যে কেউ সামান্য আমল করবে। দুনিয়াতে জান্নাতের আবাদ করবে। সে আল্লাহর কাছে অনেক বড়ো আজর ও সাওয়াব পাবে।

ইখলাস না থাকলে পাহাড় পরিমাণ কাজ করলেও কোনো ফায়দা নেই। নবী করীম সা. ইরশাদ ফরমান, কেয়ামাতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে তাদের কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। এর প্রথমেই থাকবে দানশীল। তারপর ক্বারী ও শহীদ। দানশীলকে বলা হবে তুমি সম্পদ কি করেছো? সে বলবে তোমার সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ বানিয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো।

তুমি মসজিদ বানিয়েছো এজন্য যে মানুষ তোমার প্রশংসা করবে। তুমি দুনিয়াতে যা চেয়েছো তা পেয়েছে। এখন আমার কাছে কোনো প্রতিদান নেই। তখন ফেরেশতারা তাকে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আল্লাহর নবী সা. বলেন, তিন ব্যক্তি এমন আছে যাদের আমল কবরে গেলেও জারী থাকবে।

তন্মধ্যে প্রথম হলো সদকায়ে জারিয়াহ। যেমন- মসজিদ বানিয়ে গেলো। মসজিদে প্রতিদিন পাঁচবার আজান হবে। মসজিদে আসো মসজিদে আসো করে ডাকা হবে। অথবা মাদরাসা করলো। তো এখানে আল্লাহর কিতাব পড়া হবে। কুরআন পাঠ হবে। হেফজ পড়া হবে। ইলমে দ্বীন শিখানো হবে। এর একটি অংশ তার কবরে পৌঁছাতে থাকবে।

হযরত নানুতুবী রহ. দারুল উলুম দেওবন্দ বানিয়েছেন। ১৫০ বছর পূর্বে। কিন্তু তার সিলসিলা আজও চলছে। তিনি সাওয়াব পাচ্ছেন। যখন তিনি কেয়ামাতের দিন উঠবে। তখন বলবেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এক ইলমে দ্বীনের জামাত নিয়ে আসছি। নবীজি সা. সাহাবীদের ব্যাপারে বলেছেন, কেয়ামাতের দিন আমার সাহাবীরা যেখান থেকেই উঠুক না কেনো তাদের পিঠনে এক বিশাল জামাত থাকবে।

যারা তাদের দাওয়াতে ইসলাম কবুল করেছেন। এর সাওয়াব সাহাবীদের কবরেও জারী থাকবে। এখানে হাজী সাহেব মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করেছেন এটা আল্লাহর অনেক বড়ো নেয়ামাত।অনেক বড়ো শুকরিয়ার বিষয়। মূলত এটা বান্দার উপরে আল্লাহর অনেক বড়ো ইহসান।

হাজী সাহেব যিনি এই মসজিদ বানিয়েছেন, তিনি মূলত তার আওলাদের উপর অনেক বড়ো ইহসান করেছেন। কারণ তার সন্তানরা এখানে থেকে ইলমে দ্বীন শিখবে। অন্তত তারা এর দেখাশুনা করে হলেও নেকী লাভ করতে পারবে। হাদীসে আছে, তোমার সন্তানদের উপর যতটুকু ইহসান তুমি করবে। তোমার উপরও ততটুকু ইহসান করা হবে।

হাজী সাহেব মাদরাসা করে ইহসান করেছেন। এখানে বাচ্চারা ইলম শিখবে। তারা অন্যদের শিখাবে। আবার তারা শিখাবে অন্যদের। এভাবে সাওয়াব হতে থাকবে। আর এই সাওয়াবের একটি অংশ পৌঁছাতে থাকবে তার কবরে।

যিনি এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। নামাজ পড়নে ওয়ালার, রোজা রাখলে ওয়ালার সবার সাওয়াব পেতে থাকবে। তার সন্তানরা যখন নামাজ পড়তে আসবে তখন সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। হে আল্লাহ আমাকে নামাজের তাকিদ দিয়েছেন আমার বাবা। আমার বাবাকে তুমি জান্নাত দিয়ে দাও।

নবীজি বলেন, তার মৃত্যুর পর এই সন্তান তার জন্য রহমত হবে। একবার হযরত ইয়াকুব আ. তার মৃত্যুর পূর্বে সব সন্তানকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার মৃত্যুর তোমরা কি করবে। কি মূর্তি পূজা করবে? কি আল্লাহকে ভুলে যাবে?

তখন ইসহাক জবাব দিলেন, আমরা আপনার মৃত্যুর পর আল্লাহর ইবাদাত করবো। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবো না। তখন তিনি ইতমিনান হয়ে যান। এবং মৃত্যুবরণ করেন।

মোটকথা হলো, এতো বড়ো মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করে হাজী সাহেব যেনো আল্লাহর জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে। হে আল্লাহ তুমি সম্পদ দিয়েছো। তোমার পথেই খরচ করেছি। সুতরাং তোমার কৃতজ্ঞতা আদায় করি।

আল্লাহ তায়ালা হাজীসাহেবকে ও তার সন্তানদেরকে মুস্তাকীম বানিয়ে দিন। আর উলামায়ে কেরামের জন্য কৃতজ্ঞতা হলো, এটা যে তারা হাজী সাহেবকে এতো সুন্দর একটি পরামর্শ দিয়েছেন। মসজিদ বানাতে হাজী সাহেবকে সহযোগিতা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ