রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির

অনেক প্রকাশক বইয়ের পাণ্ডুলিপি খুলেও দেখেন না

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শহীদুল ইসলাম।। বাংলাবাজারকেন্দ্রিক ইসলামি প্রকাশনা জগতের পরিচিত নাম দারুল উলূম লাইব্রেরী। তরুণ আলেম মাওলানা শহীদুল ইসলাম প্রায় দুই দশকের অব্যাহত চেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটিকে একটি মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় দাঁড় করিয়েছেন। নিজের পুরোটা সময় দিয়ে এক একটি বই অত্যন্ত মমতার সঙ্গে পাঠকের হাতে তুলে দেন তিনি। ফলে তাঁর প্রকাশনীটি পাঠকের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন শামসুদ্দীন সাদী


আপনি মাদরাসায় পড়াশোনা করেছেন। সেখানকার কোনো কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে প্রকাশনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপট কী?

আমি যখন মাদরাসায় মেশকাত জামাতে পড়ি, তখন থেকে ব্যবসার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মে। চিন্তা করতাম, ব্যবসাও নবীজির সুন্নত। তাছাড়া জামিয়া রাহমানিয়ার বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও লেখক মাওলানা নোমান আহমদ রহ.-এর সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক ছিল। হুজুরের সঙ্গে বাংলাবাজার আসা-যাওয়া করতাম।

বাংলাবাজারে দেখতাম, আমাদের ইসলামি প্রকাশনী বলতে গেলে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলো মকছুদুল মুমিনিন জাতীয় হাবিজাবি বই প্রকাশ করে। তখন থেকে আমার মনে হলো, এই জগতে উলামায়ে কেরামের পদার্পণ করা দরকার। মানুষ যেন ইসলামের বিশুদ্ধ জিনিসটা পায় সেই চেষ্টা আরও বেশি চালানো জরুরি। এই চিন্তা থেকে ২০০২ সালে পড়ালেখা শেষ করে ২০০৩ সালে প্রকাশনা শুরু করি।

নিজের দৃষ্টিতে আপনার প্রকাশনীর বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
আমাদের প্রকাশনীর কী বৈশিষ্ট্য সেটা নির্ণয় করবে পাঠক। তবে আমার দৃষ্টিতে যে বৈশিষ্ট্যটি ধরা পড়ে সেটা হলো, আমাদের প্রকাশনী থেকে আকাবির ও আসলাফের বয়ান বা তাদের লিখিত বইয়ের অনুবাদ বেশি প্রকাশিত হয়েছে। আমি এটা নিয়েই সামনে অগ্রসর হতে চাচ্ছি। সে হিসেবে ‘ইসলাহি খুতুবাত’ সিরিজ আকারে প্রথম প্রকাশ করি।

এতো বড় সিরিজ আগে আমার জানামতে কেউ করেনি। এটা ১৮ খ-ের সিরিজ। এরপর পীর জুলফিকার আহমাদ নকশবন্দির ‘খুতুবাতে জুলফিকার’ প্রকাশিত হয়েছে ৩২ খ-ে। মুফতি রাফি উসমানির আট খ-ের বয়ান সিরিজ ‘খুতুবাতে ফকীহুল ইসলাম’ চার ভলিয়মে অনূদিত হয়েছে আমাদের প্রকাশনী থেকে। আমার একটি চিন্তা হলো, আমার প্রকাশনী থেকে বিভ্রান্তি বা বিতর্ক সৃষ্টি করে এমন কোনো বই যেন প্রকাশ না হয়।

আপনার প্রকাশনী থেকে এখন পর্যন্ত কতগুলো বই বের হয়েছে? আপনার চোখে সেরা পাঁচটি বই কী কী?
এটাও বিবেচনা করবে পাঠক। তবুও আমার দৃষ্টিতে সেরা কয়েকটি সিরিজ হলো: ইসলাহি খুতুবাত, খুতুবাতে জুলফিকার, খুতুবাতে ফকীহুল ইসলাম, ইযাহুল মুসলিম। এছাড়া আমরা বর্তমানে হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলি থানভি রহ.-এর ৩২ খ-ের বয়ানসমগ্র খুতুবাতে হাকিমুল উম্মত অনুবাদের কাজে হাত দিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু খ- অনুবাদের কাজ শেষ হয়েছে। সম্পাদনা শেষে শিগগির সিরিজটির ছাপার কাজ শুরু হবে। আশা করি, এটি হবে এ যাবতকালের সেরা কাজ।

অন্যান্য ইসলামি প্রকাশনীর মতোই আপনার প্রকাশনীতেও অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা বেশি। মৌলিকের দিকে আপনাদের আগ্রহ কম হওয়ার কী কারণ?

আসলে মৌলিক বইয়ের প্রতি আমাদের আগ্রহ কম কথাটি ঠিক নয়। মানসম্পন্ন ও ভালো মৌলিক বই হলে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করি। আমাদের প্রকাশনী থেকে বেশ কিছু মৌলিক বই ইতোমধ্যে বের হয়েছে। আরও কিছু বইয়ের কাজ চলছে। তবে এটা ঠিক, এখনও সামগ্রিকভাবে আমাদের ইসলামি ধারার প্রকাশনা লাইনে মৌলিক বইয়ের সংখ্যা কম। এর একটা বড় কারণ আমাদের আলেম লেখক যারা আছেন তারা মৌলিকের চেয়ে অনুবাদে মেহনত বেশি করেন। যদিও আস্তে আস্তে এই প্রবণতা কেটে যাচ্ছে। এখন বাংলাবাজার থেকে প্রচুর পরিমাণে মৌলিক ইসলামি বইপত্র বের হচ্ছে।

লেখকদের সঙ্গে প্রকাশকদের প্রায়ই সম্পর্কের টানাপোড়েন লক্ষ্য করা যায়। লেখকদের সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক কেমন? তিক্ততার কোনো গল্প আছে কি?

সম্পর্কের টানাপোড়েন ভাইয়ের সঙ্গেও ভাইয়ের হতে পারে। যেহেতু প্রকাশক ও লেখকের মধ্যে লেনদেনের বিষয় আছে এজন্য টানাপোড়েন বিচিত্র কিছু নয়। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার এবং আমার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেখকদের সুসম্পর্ক রয়েছে। লেখকদের সঙ্গে টুকটাক তিক্ততার গল্প যে নেই সেটা বলবো না। তবে তিক্ততার চেয়ে মধুর গল্প এতো বেশি যে, তিক্ততাগুলো বড় করে দেখার কিছু নেই।

একই বই একসঙ্গে একাধিক প্রকাশনী থেকে অনুবাদকে আপনি কীভাবে দেখেন? এটা বন্ধ করার কোনো উপায় আছে বলে মনে করেন কি?

একই বইয়ের অনুবাদ বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে আসার একটি কারণ আমি লক্ষ্য করেছি। সেটা হলো আমাদের বেশির ভাগ বই উর্দু থেকে অনূদিত। ইদানীং আরবি থেকেও অনুবাদ শুরু হয়েছে। আমরা ভারতের দিকে তাকালে দেখি, ভারতেও একটি উর্দু বই একাধিক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরাও মনে করছেন, তারা করছে আমরা করলে সমস্যা কী? আমিও মনে করি, একই বই একাধিক প্রকাশনী থেকে অনুবাদ না হওয়াই ভালো।

কিন্তু বাংলাদেশে যেহেতু বিষয়টি তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই, এজন্য যে যার মতো ইচ্ছা বই অনুবাদ করছে, প্রকাশ করছে। অনেক সময় দেখা যায় একই বই সমানতালে দুই প্রকাশনী অনুবাদ করছে, কিন্তু একজনেরটা অন্যজন জানে না। প্রকাশ হওয়ার পর কিংবা ঘোষণা দেওয়ার পর তা জানা যায়।

ইসলামি ধারার প্রকাশকদের ঐক্যবদ্ধ কোনো প্লাটফর্ম নেই কেন? এর কোনো উদ্যোগ কি আপনারা কখনও নিয়েছেন?

আমাদের প্রকাশনা জগতে যারা আছেন, মালিকপক্ষ সেইভাবে সময় দেন না। এখানে একট শূন্যতা কাজ করে। যার কারণে সবাইকে নিয়ে বসা, আলোচনা করার মতো সুযোগ তেমন একটা হয় না। তাছাড়া এখানে কিছু স্বার্থপরতা কাজ করে। এক প্লাটফর্মে থাকলে পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়াটা সে রকম হতে হয়। এটার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। চেষ্টা যে একদম হয়নি সেটা কিন্তু নয়। ইসলামি টাওয়ার-কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের নিয়ে একাধিকবার ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গড়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সেটা নানা কারণে বেশিদূর এগোয়নি।

সামগ্রিকভাবে ইসলামি ধারার প্রকাশনা শিল্প এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান বাধাগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?

এই শিল্প এগিয়ে যাওয়ার পথে বেশ কিছু বাধা আছে। যেমন বাংলাবাজারে এমন অনেক প্রকাশক আছেন যারা বইয়ের পা-ুলিটি খুলেও দেখেন না। অনেক প্রকাশক বুঝতেই পারেন না, বইটা কোন বিষয়ের। লেখকদেরও কিছু দুর্বলতা আছে। কিছু লেখক তেমন পরিপক্ক না। তাদের লেখাগুলো মানসম্পন্ন হয় না। বড়দের দেখানোর উদ্যোগও তাদের থাকে না। প্রকাশকও পয়সা খরচ করে বইগুলো সম্পাদনার মাধ্যমে প্রকাশ করেন না।

তবে আমি বলবো, এক্ষেত্রে জেনারেল লাইনের বইপুস্তকের অবস্থাও খুব ভালো না। বইমেলা উপলক্ষে যে বইগুলো বের হয় বাংলা একাডেমি বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, হাতেগোনা কিছু প্রকাশনী বাদে অনেক প্রকাশনীর বই পড়ার যোগ্যও না। আরেকটা ব্যাপার হলো, জেনারেল লাইনের বইগুলো সরকার বিপুল পরিমাণে কিনে, কিন্তু আমাদের বইগুলো তারা তেমন নেয় না। এটাও আমাদের ধারার প্রকাশনীগুলোর এগিয়ে যাওয়ার পথে একটা বড় অন্তরায়।

ইসলামি প্রকাশনা কতটা সম্ভাবনাময়। আপনারা যখন শুরু করেছিলেন সেই সময় থেকে বর্তমানে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন?

আগেই বলেছি, আমরা যখন শুরু করি বাংলাবাজারে হাতেগোনা কয়েকটি ইসলামী প্রকাশনা ছিল। সেই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এখনকার অবস্থার আকাশ-পাতাল পরিবর্তন হয়েছে। দুই-চারটি প্রকাশনী থেকে এখন ইসলামি ধারার শতাধিক প্রকাশনী হয়েছে।

একটা অঘোষিত প্রতিযোগিতা কাজ করছে। প্রকাশনীগুলো অনেক বড় বড় কাজ করছে। এক সময় আমরা ধর্মীয় বইপুস্তকের ব্যাপারে ভারত-পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ইসলামি প্রকাশনাগুলো এতোটা অগ্রসর হয়েছে যে, এখন অন্য দেশের প্রতি নির্ভর করে বসে থাকতে হয় না। এমনকি উর্দু-আরবি বইগুলোও এখন দেশেই ছাপা হচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতে আরও বেগবান হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

[লেখা ও লেখকের কথা প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক সাময়িকী ‘লেখকপত্র’ এর সৌজন্যে]

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ