মোস্তফা ওয়াদুদ: মহান আল্লাহ তাআলা সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে কিছু সৃষ্টিকে আমরা কখনো অস্বাভাবিক দেখতে পাই। এতে তাঁর বিশেষ উদ্দেশ্য ও মহান রহস্য বিদ্যমান। কোরআন ও হাদিসের আলোকে এই সৃষ্টির রহস্য হলো প্রথমত, বান্দা যেন তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে, তিনি যেমন স্বাভাবিক সুন্দর সৃষ্টি করতে সক্ষম, তেমনি এর ব্যতিক্রমও করতে সক্ষম। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ যাকে বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ রেখেছেন; সে যেন নিজের ওপর আল্লাহর দয়া ও অনুকম্পাকে স্মরণ করে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কারণ, আল্লাহ চাইলে তার ক্ষেত্রেও সে রকম করতে পারতেন। তৃতীয়ত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা এই সমস্যার বিনিময়ে তাঁর সন্তুষ্টি, দয়া, ক্ষমা ও জান্নাত দিতে চান। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি যার প্রিয় চোখ নিয়ে নিই, অতঃপর সে ধৈর্য ধারণ করে এবং নেকির আশা করে; আমি তার জন্য এর বিনিময়ে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুতে সন্তুষ্ট হই না।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ১৯৫৯)।
এখন কেউ যদি প্রশ্ন করেন, সন্তান কেনো প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মলাভ করে? কার কারণে সন্তানের জন্ম হয় প্রতিবন্ধী হিসেবে? সে প্রসঙ্গ ভিন্ন! তবে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মদানে পিতা-মাতার কোনো অপরাধ নেই। এ বিষয়টি একদম পরিস্কার। আওয়ার ইসলামের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই বলেছেন দেশের দুইজন মুফতি। তারা বলছেন, ‘ইসলামে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মে পিতা-মাতার কোনো দোষ নেই। কেননা পৃথিবীতে প্রেরণ করেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আল্লাহর ইচ্ছাতেই সন্তান ছেলে হয়। অথবা মেয়ে হয়। সন্তানের জন্য পিতা-মাতা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহর বিধান মোতাবেক পিতা-মাতা হরকত করেন। এরপর যখন আল্লাহর হুকুম হয়, তখন দুনিয়াতে সন্তানের জন্ম হয়। এর বাইরে পিতা-মাতার কোনো হাত নেই সন্তানের জন্মে।’
কথা বলেছিলাম তামিরুল মিল্লাত মাদরাসা, মীরহাজারীবাগের অধ্যক্ষ ড. মাওলানা মুহাম্মদ আবু ইউছুফ খান-এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে সন্তান জন্মলাভ করেন। সন্তানের মধ্যে কেউ ছেলে, কেউ মেয়ে, কেউবা তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে জন্মগ্রহণ করে। এর মাঝে আবার কেউ পূর্ণ দেহ অবয়ব নিয়ে জন্ম নেয়। আবার কারো কোনো অঙ্গ কম বা ছোটো-বড়ো হয়ে থাকে। এসব কিছুই আল্লাহর সৃষ্টি। এখানে কোনো ব্যক্তির হাত নেই। পিতা-মাতার কোনো দখল নেই। সন্তানের জন্মে পিতা-মাতা কেবলই মাধ্যম। এছাড়া আর কোনো কিছু্ই পিতা-মাতার হাতে নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে হাদিসে পাকে স্ত্রী সহবাসের সময় কিছু নির্দিষ্ট তরিকা বা পন্থার কথা বলা আছে। কেউ যদি হাদিসের বর্ণনা মোতাবেক সহবাস করে তাহলে সন্তান সুস্থ-সবল ও হৃষ্টপুষ্ট হয়ে জন্মলাভ করবে। কিন্তু যদি ভিন্ন কোনো পন্থা বা ভুল কোনো সিস্টেম অবলম্বন করে, তাহলে সন্তান হয়তো তত সুস্থ হয়ে জন্ম নাও নিতে পারে। এমন একটি কথা হাদিসের মাঝে রয়েছে। সুতরাং পিতা-মাতার কোন হাত নেই সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে। তবে পিতা-মাতার সচেতনতাই সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন অধ্যক্ষ ড. মাওলানা মুহাম্মদ আবু ইউছুফ খান।
কথা বলেছিলাম জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জের হাদিস ও ফতোয়া বিভাগের শিক্ষক নূর মুহাম্মদ রাহমানীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে মানুষের জন্ম হয় রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে মনোনীত হয়ে। আল্লাহর ইচ্ছা হলেই তিনি কোনো মায়ের গর্ভে সন্তানের জন্ম দেন। পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়, কাউকে নিজের মতো করে জন্মলাভ করানো। কেউ চাইলেই সম্ভব নয় যে, কোনো সন্তানের হাত কিংবা পাসহ জন্ম দিবেন। আবার কোনো সন্তানের একহাত থাকবে, অপর হাত থাকবে না। এমন করে সন্তানের জন্ম দিবেন! এটা সম্ভব নয়। কেউ পারবে না। বরং একজন সন্তান পৃথিবীতে জন্ম লাভের ৫০ বছর পূর্বে আল্লাহ তাআলা ঠিক করে রাখেন, তিনি কিভাবে পৃথিবীতে জন্ম নিবেন? জন্ম নেওয়ার পর তার কি হবে? কীভাবে তিনি চলবেন? কি খাবার খাবেন? কোথায় থাকবেন? সবকিছুই রাব্বুল আলামীন ঠিক করে রাখেন বলে হাদীসে রয়েছে। তাই প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্মে কারোই কোনো ক্রিয়া নেই। বরং সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত।’
এমডব্লিউ/