স্বাভাবিকভাবে কওমি মাদরাসার শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় রমজানের পর থেকে। কিন্তু চলতি বছর কুরবানির ঈদ পার হয়ে মুহাররম মাস চলে এলেও মাদরাসা খোলার কোনো আশ্বাস নেই। এদিকে মাদরাসা খোলার আশায় প্রহর গুণছে কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্ট ৪০ লাখ ছাত্র-শিক্ষক। তাই ক্রমেই তীব্র হচ্ছে দেশের কওমি মাদরাসা খোলার দাবি!
গত ১১ আগস্ট স্বাস্থ্যিবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস আদালত এমন কি শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এমন পরিস্থিতিতে দেশের উলামায়ে কেরাম বলছেন, ‘আর সময় না বাড়িয়ে এখনই খুলে দিন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কেননা করোনায় সবচেয়ে বেশি হয়েছে শিক্ষাখাতে। তাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট না করে দ্রুত প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিন। দেশের শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব রাজধানীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী বলেছেন, ‘দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে শুধুমাত্র শিক্ষা কার্যক্রম চলে না। এখানে দিন-রাত কোরআন তেলাওয়াত হয়। হাদিসের দরস হয়। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে এবং পরে সুন্নত ও নফল আমল হয়। ভোর রাত থেকে কোমলমতি শিশুরা সুমধুর কন্ঠে তেলাওয়াত করতে থাকে আল্লাহর কালাম। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত ছাড়া আমাদের উত্তরণ সম্ভব নয়। আর আল্লাহর রহমত পেতে হলে তার ইবাদতের বিকল্প নেই। সুতরাং অনতিবিলম্বে দেশের মাদরাসাগুলো খুলে দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত ও ইবাদাত-বন্দেগীর পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান তিনি।’
এর আগে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য। বিশেষভাবে কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ‘মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সবকিছুতেই বিপর্যয় নেমে এসেছে। লাগাতার ১৮ মাস ধরে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। মাঝখানে কিছুদিন কওমি মাদরাসা চালু থাকলেও গত এপ্রিল থেকে আবারো তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আলিয়া মাদরাসাও খোলেনি গত ১৮ মাসে। স্কুল, কলেজ ও আলিয়া মাদরাসার সব ধরণের পরীক্ষা বন্ধ। গত বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অটো পাস দেয়া হয়েছে। এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এখনো হয়নি। পরীক্ষা হবে কি না, তাও স্পষ্ট নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার চাচ্ছে সবাইকে ভ্যাকসিন দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে। কিন্তু ভ্যাকসিন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সহসাই সবাই ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে, এমন আশা করা যায় না। ভ্যাকসিন নিয়ে তেলেসমাতি চলছে। আর সময় না বাড়িয়ে অতিদ্রুত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন। এজন্য যা যা করণীয় তাই করুন।’
আর শিক্ষাবিদ আলেম মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী মনে করেন, ‘সরকারের উচিত বিশেষ প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে মাদরাসায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার অনুমতি দেয়া। যেভাবে দেশের শিল্প-কারখানা উন্মুক্ত করে দিয়েছে, একই শর্তে সরকার চাইলে মাদরাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মাদরাসা শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত জীবনে সুশৃঙ্খল। তারা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি খুব মনোযোগী। বিশেষভাবে করোনা পরিস্থতিতির কারণে যেসব স্বাস্থবিধি মানা প্রয়োজন তা মানতে তারা প্রস্তুত। কেননা তাদের আছে সুস্থ বিবেক ও কুরআনী শিক্ষা। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, শিক্ষাধারাকে ভয়াবহ ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাদরাসা খুলে দিন!
তিনি আরও বলেন, কোরআন পড়ে, হাদিস পড়ে, তাহাজ্জুদ পড়ে দোয়া করা হলে দেশে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হবে। কোরআন-হাদিসের বরকতে দেশ থেকে করোনাসহ সকল প্রকার মহামারী বিদায় নিবে ইনশাআল্লাহ। মুসলমানরা যেকোনো বিপদ থেকে মুক্তির জন্য কোরআন খতম ও দোয়া করে থাকেন। অতএব কোরআন হাদিসের শিক্ষা বন্ধ রেখে বিপদ থেকে মুক্তির আশা করা যায় না।’
সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মাদরাসাগুলো বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়া-লেখা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভাড়া ভবনে পরিচালিত মাদরাসাগুলো ভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। বাড়ী ভাড়া দিতে না পারায় অনেক মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক দিক বিচেনায় গার্মেন্টসসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেখানে খুলে দেয়া হয়েছে সেখানে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জীবন-জীবিকার তাগিদে মাদরাসাসহ সকল বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন।’
এমডব্লিউ/