সারিব সুইজা: ওরাল সেক্স বা মুখ দিয়ে যৌন কর্ম। পশ্চিমা অপঃসংস্কৃতির প্রসারের শিকার আমাদের মুসলিম সংস্কৃতিগুলোও। এমন কিছু বিষয় যা আগে মুসলিম সমাজে প্রচলিত ছিল না এবং সেগুলো নিয়ে কেউ প্রশ্নও উঠাত না তা এখন মহামারী আকারে আমাদের সমাজগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। পর্নোগ্রাফি এ ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করছে।
আমাদের মুসলিম শুয়ূখগণ পশ্চিমে অবস্থানকারী মুসলিমদের কাছ থেকে প্রথম এ বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এ কথা কিছু কিছু শুয়ুখ ক্লিয়ারলী বলেছেনও যে তাঁরা পশ্চিমে আসার আগে এ ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হন নি। বিগত শতাব্দীর ৮০-৯০ এর দশক থেকে তারা এই প্রশ্নের মুক্বাবিলা করছেন। আমি নিজে আমার ১০ ও ১১ শ্রেণির ছাত্রদের কাছ থেকে প্রায়ই এ প্রশ্নের মুখোমুখি হই। তাদেরকে এড়িয়ে যাওয়ারও কোন উপায় দেখি না।
তাঁরা যে প্রশ্নের মুক্বাবিলা করছিলেন তা হল, ওরাল সেক্স হালাল কিনা? এ ক্ষেত্রে কিছু শুয়ুখদের মতামত হল এটা মাকরূহ। আরেক দলের মত হল যদি হারাম এড়ানো যায় তাহলে এটা হালাল, কারণ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে এর হারাম হবার পক্ষে কোন প্রমান নেই।
আমি বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি এবং নিম্নলিখিত ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করেছিঃ
১. যৌন উত্তেজনার সময় যৌনাঙ্গ থেকে দু’ধরণের পদার্থ নিসৃত হয়। একটা হল প্রিসেমিনাল ফ্লুইড বা মজ়ী; এটা সর্বসম্মতভাবে নাপাক। আরেকটা হল সিমেন বা মনি; এটা একদল উলামাদের মতে পাক এবং আরেকদলের মতে নাপাক। আরেকটা বিষয় হল মজ়ি ব্যতিরেকে কখনো খালি মনি নির্গত হয় না। এখন কেউ যদি স্ত্রীর মুখে যৌনাঙ্গ প্রবেশ করায় তাহলে সেখানে সে নাপাকি প্রবেশ করাবেই। আর এটা শরীয়ত অনুমোদিত নয়।
২. স্ত্রীর মুখ যৌনাঙ্গ নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তোমাদের নারীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রের ন্যায়; সুতরাং তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করো এবং নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণ কর; আর আল্লাহর অসন্তোষ থেকে বেঁচে থাকো। [২: ২২৩] শস্যক্ষেত্রে বীজ বপন করা হয় যাতে ফসল উৎপাদিত হয় ভবিষ্যতে। আর বীজ বপনের দ্বার হচ্ছে যোনি। সুতরাং বীজ সেখানে বপন করতে হবে; মুখে নয়।
৩. স্ত্রীর যৌনাঙ্গে স্বামীর মুখ দিয়ে উত্তেজনা দান করার বিষয়ে কথা হচ্ছে, এটা একটা জঘন্য রুচির বিষয়। আমি একজন ডাক্তারের সেমিনারে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন স্ত্রীর যোনি দ্বার ও পায়ুপথ খুব কাছাকাছি হওয়ায় এখানে নানান ধরণের ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার সমাগম ঘটে। STD এর বিভিন্ন ধরণের জীবাণুর জমা হওয়ার স্থান এটা। আর এটা এখন প্রমাণিত হয়েছে যে পুরুষের মুখের ও গলার ক্যান্সার হওয়ার বড় একটা কারণ হল পুরুষ কর্তৃক নারীর যোনিতে মুখ দিয়ে যৌনকর্ম। HPV ভাইরাসের কারণে এই ক্যান্সার হয় এবং এটা ওরাল সেক্সের কারণে হয় যা এখন প্রমাণিত। এছাড়াও সব ধরণের সেক্সুয়ালী ট্রান্সমিটেড ডিজ়িস (STD) এ কর্মের মাধ্যমে হতে পারে, এইডস সহ। মন্তব্যে এ বিষয়ে গবেষণার লিঙ্ক দেব, ইনশা’আল্লাহ্। রোগ জীবানু ছাড়াও স্ত্রীর মজ়ি পুরুষের মুখে ও পেটে যেতে পারে; আর মজ়ি নাপাক তা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি।
৪. কুরআনে সঙ্গম কোথায় করতে হবে তার নির্দেশনা আমরা ২:২২৩ আয়াত থেকে পাই। হাদীসে ওরাল সেক্স সম্পর্কে কিছু বলা হয় নি এ কারণে যে রসূলুল্লাহর সময়ে এই প্রশ্নই উঠেনি। মুসলিমরা এধরণের কোন চিন্তাই তখন করেন নি। আমরা আগেই দেখেছি যে এই প্রশ্ন মুসলিম সমাজগুলো থেকেও উত্থিত হয় নি; বরং পশ্চিমে বসবাসরত মুসলিমদের কাছ থেকেই প্রথম উত্থিত হয়েছে। তাই বুঝা যায় এটা ছিল আউট অফ কোয়েশ্চেন।
এই সবগুলো বিষয় চিন্তা করলে আমি যা দেখতে পাই তা হল, এই ধরণের কর্ম শরীয়ত অনুমোদিত হবার মত নয়। আমাদের জন্য শরীয়তের মূলনীতি হলঃ “ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।“ আমি বিষয়টাকে এখানেই রেখে দিতে চাই।
-কেএল