মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর
ছাত্র-শিক্ষকদের টিকাগ্রহণ মাদরাসা খুলতে সহায়ক হবে। এমনটা বলছেন দেশের বিজ্ঞ আলেমরা। আওয়ার ইসলামের সঙ্গে আলাপকালে দেশের তিন শীর্ষ আলেম বলেছেন, ‘ভ্যাকসিন বা টিকা হলো রোগের প্রতিষেধক। এগুলোকে সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত টিকা নিন। নিজে সুস্থ থাকুন। অন্যদের সুস্থ রাখুন। পাশাপাশি মাদরাসা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পথকে তরান্বিত করুন।’
জানা গেছে, সরকারিভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ পর্যায়ে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রক্রিয়া শুরু করেছে। টিকা কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও। তাছাড়া দেশের দুই কোটি শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতে বর্তমানে টিকা নেওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ করা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শেষ হলেই প্রতিষ্ঠান খুলবে, সরকারের পক্ষ থেকে এমন সম্ভাবনার কথাও জানানো হয়েছে।সেই সূত্র ধরে দেশের শীর্ষ তিন আলেম বলেছেন, ছাত্র-শিক্ষকরা দ্রুত টিকা গ্রহণ সম্পন্ন করে মাদরাসা খোলার পথকে যেনো সহজ করে।
কথা বলেছিলাম দেশের শীর্ষ আলেম বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মুফতি রুহুল আমিন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নিজের নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্যের জন্যই ভ্যাকসিন গ্রহণ জরুরি। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণ সহজের জন্য গণটিকা প্রদানের নিয়ম চালু করা হয়েছে। যা এখনো চলমান। সুতরাং আমাদের মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের অনুরোধ জানাবো, তারা যেনো নিজেদের উদ্যোগে ভ্যাকসিন নিজেরা গ্রহণ করে। আর অন্যদেরও আহবান করে। কেননা ভ্যাকসিন গ্রহণের সাথেই মাদরাসা খোলার প্রসঙ্গ জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘আমার মাদরাসার (গওহরডাঙ্গা মাদরাসা) সকল শিক্ষকগণ টিকাগ্রহণ সম্পন্ন করেছে। সারাদেশের আরো যারা আছে সবাই যেনো দ্রুত টিকা নেয়, সেজন্য আমি আমার জায়গা থেকে উৎসাহ প্রদান করছি।’
এদিকে উত্তরায় নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত সাড়াজাগানো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী বলেছেন, ‘টিকা যেহেতু বৈশ্বিক পরিস্থিতির আলোকে অপরিহার্য। তাই আমার মনে হয় সকলেরই এটা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে উলামায়ে কেরাম ও তালাবায়ে আজিজ, যাদের বয়স ১৮ বছরের উপরে-তারা অবশ্যই যেনো নিজ নিজ এলাকায় গণটিকার আওতায় চলে আসে। এ বিষয়ে কোনো ধরণের শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই।’
কারো কারো মাঝে টিকা গ্রহণে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ আতঙ্ক থাকা কি ঠিক? এমন প্রশ্ন করলে মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী বলেন, ‘নতুন কিছু যখন দুনিয়াতে আসে, যেমন করোনাভাইরাস নতুন আসছে। এর প্রতিরোধকও নতুন এসেছে। আর নতুনের প্রতি মানুষের আতঙ্ক থাকেই। কেননা একটা ধাপ পার হলে পরেই মানুষের আতঙ্ক কাটবে। করোনা ভাইরাসও তার ধাপ পার করেনি। এর প্রতিষেধক যেটা আছে সেটাও তার ধাপ পার করেনি। সুতরাং টিকা গ্রহণ যখন শেষ হবে, প্রাকটিক্যালভাবে এর কার্যকারিতা মানুষ বুঝবে, তখন আর কারো মাঝে কোনো আতঙ্ক থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোগের প্রতিরোধক হিসেবে ঔষধ গ্রহণ জরুরি। তাই আতঙ্কে না থেকে সবাই যেনো দ্রুত টিকা নেয় আমি সে আহবানই জানাচ্ছি। আর ওলামায়ে কেরাম দ্রুত টিকা নেওয়া শেষ করলেই আমরা সরকারের কাছে আবেদন করতে পারবো যে, আমাদের ছাত্র-শিক্ষকদের টিকা নেওয়া শেষ। সুতরাং আমাদের মাদরাসা খোলার অনুমতি দিন। কেননা আমি আশা করি, টিকা গ্রহণের পর মাদরাসা খোলায় কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।’
সবশেষে কথা বলেছিলাম নারায়ণগঞ্জ ডি.আই.টি মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়াল এর সঙ্গে। গতকালই টিকা নিয়েছেন দেশের এ শীর্ষ আলেম ও হেফাজত নেতা। আওয়ার ইসলামকে তিনি বলেন, ‘দেশের সরকার একরকমের আনুষ্ঠানিকভাবেই ঘোষণা করেছে, ভ্যাকসিন দেওয়া শেষ হলেই খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যই না। দেশের বাইরে কোথাও যেতে চাইলে-সেটা হজ হোক বা ওমরা, ভ্যাকসিন ছাড়া কাউকেই বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হবে না। তাই ভ্যাকসিন নেওয়া খুবই জরুরি বলেই আমি মনে করি।’
এমডব্লিউ/