সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার: বিজ্ঞদের ভাবনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর

বতর্মান বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষ বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খবর অতি সহজে জানতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোনো খবর খুব সহজে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বিশ্বে।

বতর্মান বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুক এমন একটি মাধ্যম যেটি ধনী গরিব সব শ্রেণির মানুষ ব্যবহার করে থাকে। ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা বতর্মান বিশ্বের রাজনীতি, অথর্নীতিসহ বিভিন্ন খবর জানতে পারি। দৈনিক জীবনের সঙ্গে যেন মিশে আছে ফেসবুক।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটা জিনিস লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ফেসবুকের যেমন ব্যাপক সুবিধা আছে তেমনি ফেসবুকের অপব্যবহার যেন বেড়ে চলছে। কারো সঙ্গে কারও বিরোধিতা থাকতে পারে। সেই বিরোধিতা করতে গিয়ে ফেসবুকে ভুয়া আইডির মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা বানোয়াট খবর প্রচার করা হয়।

কোনো ব্যক্তি কিংবা তার পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের নামে মিথ্যা প্রচার করা হয়। অনেকে আবার বিভিন্ন ছবি এডিটিং এর মাধ্যমে নোংরা ছবি ফেসবুকে প্রচার করে থাকেন। এর ফলে যার ছবি প্রচার করা হয় তাকে এবং তার পরিবারকে সমাজের কাছে হতে হয় লজ্জিত। যারা এই নোংরা ছবি কিংবা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেন তারা তাদের নোংরা মনমানসিকতার পরিচয় দেন এ ফেসবুকের মাধ্যমে।

বর্তমানে দেশে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার প্রবণতা। পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে পড়ে সম্ভাবনাময় এ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হত্যা, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়ানোর খবর।

এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বলা হচ্ছে, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্তত একটি প্রোফাইল আছে। এই সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কিশোর-কিশোরীরা অন্যদের সামনে নিজেকে আর নিজের ব্যক্তিত্বকে পরিবেশন করতে এবং অন্যের প্রতিক্রিয়া দেখতে খুব পছন্দ করে।

এ বিষয়ে দেশের একজন মনোবিজ্ঞানী মন্তব্য করেছেন, ‘সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার অপরাধ। বিতর্কিত অ্যাপস টিকটকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারকা বানিয়ে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে নিন্ম আয়ের পরিবারের মেয়েদের অনৈতিক কর্মকান্ডের ফাঁদে ফেলছে এসব সোশ্যাল মিডিয়া।

এদিকে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অপরাধ সৃষ্টিকারিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। তবে বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর সমাজে প্রযুক্তি বর্জন করা নয় বরং ইতিবাচকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করে আমাদের জীবনমান উন্নয়ন করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেছে। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও তৈরি হচ্ছে মানসিক চাপ।

তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। বরং সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট শিক্ষা গ্রহণের দরকার। স্যোশাল সাইটের দায়িত্বশীল ব্যবহার করতে পারছিনা বলে এটির অপব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া স্যোশাল মিডিয়ায় প্রতিদিন অজস্র টাইম দেয়ার কারণে অন্য সব কিছুতে প্রভাব ফেলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব স্যোশাল মিডিয়ার অপব্যবহার প্রতিকারে যথাযথ শিক্ষার দরকার। অভিভাবকদেরও সচেতন দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্যারেন্টিং কর্মসূচি আরও জোরদার করা দরকার। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম।’

ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের সহকারী মহাপরিচালক মাওলানা ড. মুশতাক আহমদ মনে করেন, ‘উঠতি বয়সী তরুণরা এর অপব্যবহার বেশি করছে। বিশেষত তারা এটাকে মুক্তমিডিয়া হিসেবে প্রতিনিয়ত এর অপব্যবহার করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে তাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। তাছাড়া স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে কিছু গুজব রটিয়ে তারা একটি অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন বিশেষত, ‘স্যোশাল মিডিয়ার কারণে বিশেষ করে পরিবারের ভেতরেও নানা রকমের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘রাতের পর রাত জেগে বাচ্চারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকছে, পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। তারা বুঝতে পারছেন না কিভাবে সন্তানের সাথে সম্পর্ক ঠিক রেখে সহায়তা করবেন।’

এদিকে গবেষক-আলেম ও কবি মুসা আল হাফিজ মনে করেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে কিশোর-তরুণ মানসিকতায় এবং সমাজ ও পরিবারে নানা রকমের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘রাতের পর রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়ে থাকছে এই প্রজন্ম। শিশুরাও এর দ্বারা আক্রান্ত। যারা আসক্ত হচ্ছেন, তারা হয়তো এখানে কিছু পাচ্ছেন। তবে যা হারাচ্ছেন, তা প্রাপ্তির চেয়ে অনেক বেশি। পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, সম্পর্ক ও মূল্যবোধ ভাঙছে। এক ধরণের কৃত্রিম জীবন ও কৃত্রিম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন।

তিনি বলেন, ‘অভিভাবকরাও প্রায়ই বুঝতে পারছেন না কিভাবে সন্তানের সাথে সম্পর্ক ঠিক রেখে সহায়তা করবেন। সবচে’ গুরুতর হলো, এর আশ্রয়ে পর্ণোআসক্তিও লাভ করছে বিস্তার।’

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ