আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সবার সমালোচনায় বিদ্ধ হলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কেউ কেউ তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ‘নির্লজ্জ’ মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের ‘দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সর্দার’ হিসেবে উল্লেখ করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন।
চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম, অদক্ষতা ও দুর্নীতি, সংসদে দেয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের অভাব, ভ্যাকসিন সংগ্রহে ব্যর্থতা, মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে নির্যাতন ইত্যাদি বিষয়ে সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন।
প্রশ্ন তোলা হয় দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও দক্ষতা নিয়েও। বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, জেপি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য ছাড়াও সরকারদলীয় কয়েকজনও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সমালোচনার তির ছুড়েছেন।
শনিবার বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিনে বক্তব্যে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এই করোনা পরিস্থিতিতে আজ পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দেখলাম না কোনো হাসপাতালে গিয়ে তাদের সেবা কার্যক্রম বা নাগরিকের অভিযোগের খোঁজ নিতে। তিনি ঘরে বন্দি হয়ে ভিডিও কনফারেন্স করেন। অথচ হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে।
‘উনি যে কী মানুষ, আমি বুঝলাম না। ওনার কোনো লজ্জা-শরম নাই। উনি মানুষ হলে রিজাইন করতেন।’ বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে পুরো হাউসকে অপমান করেছেন।… মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ওনাকে পাওয়া যায় না…। আবার উনি বলে বেড়ান সংসদ সদস্যরা তাকে কিছু জানান না।’
এর আগে ৩০ জুন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ‘ছাঁটাই প্রস্তাব’ নিয়ে আলোচনার সময় জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘কতবার ডিও (ডেমি অফিশিয়াল) লেটার দেব? আমার এলাকার হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স নেই, ডাক্তার কবে পাব? এক্স-রে মেশিন কবে পাব? রেডিওলজিস্ট কবে পাব? স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে যতবার বলি, উনি ডিও লেটার দিতে বলেন। কতবার দেব?’
জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টাকা খরচ করতে পারেনি। ফেরত দিয়েছিল। এটা আমরা চাই না। খরচ করতে না পারলে এখানে ৩৫০ জন এমপিকে ভাগ করে দেন। আমরা খরচ করি। স্বাস্থ্যসেবা আমরা দেখব। আপনাদের দরকার নেই। ডাক্তার-নার্স নিয়োগ করতে পারছেন না। ৩৫০ এমপিকে দায়িত্ব দেন। আমরা নিয়োগের ব্যবস্থা করি।’
এদিন স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এই যে বরাদ্দ দিচ্ছি, সেটা কোথায় যাচ্ছে? বরাদ্দ খরচ করার সক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের আছে কি না, সেই প্রশ্ন চলে আসছে।’
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি দূর করতে হলে ডালপালা কেটে লাভ নেই। গাছের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। দুর্নীতি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।’
গত ৭ জুনও অধিবেশনে মহামারির এই সময়ে স্বাস্থ্য খাতে ‘অব্যবস্থাপনার’ অভিযোগে সংসদে মন্ত্রী বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েন। যদিও সেদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ ‘খুবই সফলতা’ দেখিয়েছে।
সেদিনও স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘কেনাকাটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো। কীভাবে এই মন্ত্রণালয়ের সংস্কার করবেন, তা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে।
‘স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কথা বলতে বলতে বেহাল হয়ে গেছি। স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। বেহাল দশা থেকে রক্ষা করতে কমিটি গঠন করতে হবে।’ বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ দেয়া উচিত ছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় সব দেশে বরাদ্দ বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি।
‘করোনাকালে ভারত স্বাস্থ্য খাতে আগের বছরের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি বরাদ্দ দিয়েছে। বাংলাদেশে বেড়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। করোনাকালেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। যেটুকু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাও ব্যবহার হয়নি।’ ১০ মাসে স্বাস্থ্য খাতে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা এডিপির মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে দাবি করে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘এখন আবার নতুন বরাদ্দ চাইছে। কেন, ৭৫ শতাংশ অব্যবহৃত রয়ে গেছে তার জবাব স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দিতে হবে।’
রুমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার জেলায় জেলায় আইসিইউ স্থাপন করতে বলেছেন। কিন্তু দেড় বছরে মাত্র ৫টি জেলায় নতুন আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে।
-এটি