পূর্ব বিনবিনার চরের সোলায়মান মিয়া জানান, যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে আর একটু পানি বাড়লে বাঁধের ২০০ মিটার ভাঙনে এই গ্রামটা আর থাকবে না। অনেক বাড়ি, জমি, মসজিদ নদীতে চলে গেছে। এখন মাদ্রাসাটাও চলে যাবে।
তিনি বলেন, মসজিদটা আছলো ওই পাকে। মসজিদটা আছিল ভাটির চরোত। ওটথাকি এটি আননোং, এটিও ভাঙ্গি গেইল। অল্পে একনা বৃষ্টি হইল, তাতেই মসজিদটা ভাঙ্গিল। এলাতো মসজিদ বানবার পামো না, অন্য গ্রামের মসজিদোত নামাজ পড়বের নাগবে।’
এভাবেই দুঃখ প্রকাশ করছিলেন ভাঙনের কবলে পড়া মসজিদের সাবেক সভাপতি রহুল আমীন। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে রংপুরের তিস্তা নদীতে বেড়েছে পানি। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙন। ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়রা বাঁশ দিয়ে বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছেন। তাই ভাঙন-আতঙ্কে এখন নদীপাড়ের মানুষজন।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শনিবার দুপুর পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের পূর্ব বিনবিনার চর ও পশ্চিম বিনবিনার চরে গিয়ে দেখা গেছে, বৃহস্পতি ও শুক্রবারে তিস্তার গর্ভে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বসতঘর, জমিসহ একটি মসজিদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন ভাঙনের মুখে আছে একটি মাদ্রাসা।
স্থানীয়রা মাদ্রাসাটি রক্ষায় বাঁশ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। ভাঙন বন্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। ওই এলাকার তৈয়ব আলী বলেন, ‘ভাঙন উদ্ধার করবের গেলে, বাঁশ গাড়ি বাঁধ দিয়ে জিও ব্যাগ দিলে গ্রামটা আটকানো যাইবে। পরশু থেকে ভাঙন শুরু হইচে, চোখের সামনে মসজিদটা ভাঙ্গি গেল।’
তৈয়ব আলী ভাঙনের কবলে পড়া মাদ্রাসাটি দেখিয়ে বলেন, ‘এই মাদরেসাত গ্রামের ছোয়া পোয়ারা (ছেলেমেয়ে) সকাল করি মোক্তব পড়ে। এই মাদরাসাটা রক্ষা করার জন্য আমরা কিছু লোক বস্তা খুঁজি আনি দিছি। বাঁশটাশ দিচি। কিছু জিও বস্তা দিলে গ্রামটা রক্ষা পাইবে।’
কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহারাব আলী রাজু বলেন, ‘অনেক আগে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা এখনো আসেনি। তারা আমাকে বলেছে দু-চার দিনের মধ্যে এলাকা পরিদর্শনে আসবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিনবিনার চর এলাকায় ৬০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। ইতোমধ্যে ২০ থেকে ২৫ একর আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।’ দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া দাবি জানান তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, সাময়িক ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে কোনো উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি।
-এটি