নাসির আবদুল্লাহ: শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। ইসলামে এ দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। পবিত্র কোরআনের নির্দেশ, জুমার আযান হলেই বেচাকেনা বন্ধ করে দাও, আল্লাহর স্মরণে চলো। নবী সা. এ দিনের বিপুল ফজিলত বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন আমলেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিন এবং এদিনের আমল সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার ওপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম : ১৪১০)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সব জাতিকে (ইহুদি ও খ্রিস্টান) গ্রন্থ দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর জেনে রাখো এ দিনটি আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পেছনে আছে। ইহুদিরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর খ্রিস্টানেরা তার পরের দিন (রোববার) উদযাপন করে।’ (সহিহ মুসলিম : ৮৫৬)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানি করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানি করল, তৃতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানি করল। অতপর চতুর্থ যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি সদকা করল। আর পঞ্চম যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।’ (সহিহ বুখারি : ৮৮১)
আরেক বর্ণনায় রয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জুমার দিন যে ব্যক্তি গোসল করায়, নিজেও ফরজ গোসল করে এবং প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোনো কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৬৯৫৪)
হাদিসে বর্ণিত জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো- ১. গোসল করা। ২. ফজরের ফরজ নামাজে সূরা সাজদা ও সূরা দাহর/ইনসান তিলাওয়াত করা। ৩. উত্তম পোশাক পরা। ৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৫. আগেভাগে মসজিদে যাওয়া। ৬. সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা। ৭. মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে চার রাকাত সুন্নত আদায় করা।
৮. ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা। ৯. মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনা। খুৎবা চলাকালে কোনো কথা না বলা। ১০. দুই খুৎবার মাঝের সময়ে বেশি বেশি দোয়া করা। ১১. অন্য সময়ে দোয়া করা। কারণ এদিন দোয়া কবুল হয়। ১৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সারাদিন যথাসম্ভব বেশি দরূদ পাঠ করা। ১৪. জুমার রাত (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) ও জুমার দিনে নবী করিম (সা.) এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠের কথা বলা হয়েছে।
এমনিতেই যে কোনো সময়ে একবার দরুদ শরিফ পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা পাঠকারীকে দশটা রহমত দান করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য দশবার রহমতের দোয়া করেন। আল্লাহ তায়া’লা যেনো আমাদের কে জুমার দিনের সঠিক আমল করার দান করেন, আমিন।
-কেএল